বাম জমানায় যে নির্দেশিকা একাধিক বার জারি করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হয়েও সেই একই নির্দেশিকা জারি করল সিপিএম! আসন্ন দলীয় সম্মেলনের জন্য জারি করা সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে প্রোমোটার, ঠিকাদার বা আর্থিক কারবারের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তিকে দলের কোনও কমিটিতে রাখা যাবে না।
অর্থাৎ, সিপিএম নেতৃত্ব মেনে নিলেন, তাঁদের দলে প্রোমোটার-ঠিকাদাররা এত দিন বিভিন্ন কমিটিতে ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন একাধিক বার প্রোমোটার-ঠিকাদারদের নিয়ে ‘সতর্কতা’ জারি করেও ফল হয়নি। এখন ক্ষমতা হারিয়ে প্রোমোটার-ঠিকাদারদের কমিটি থেকে সিপিএম বাদ দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
সম্মেলন-প্রক্রিয়ার নীতি ও দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে আজ, রবিবার ও আগামিকাল, সোমবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। শুদ্ধকরণ অভিযানকে মাথায় রেখে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ বারের সম্মেলনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কমিটি গঠনের ব্যাপারে কী নীতি নেওয়া হবে, তা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করবেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সেই সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে যে সব নাম পাঠানো হয়েছে, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য কমিটি।
সিপিএমের বিভিন্ন কমিটিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব কম বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। পলিটব্যুরোতেও একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি বৃন্দা কারাট। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে একমাত্র মহিলা সদস্য শ্যামলী গুপ্ত। দলে মহিলাদের নেতৃত্বে তুলে আনার জন্য এ বার বিভিন্ন কমিটিতে মহিলা প্রতিনিধি বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে, প্রত্যেক কমিটিতে যেন মহিলা প্রতিনিধি থাকেন। কোনও কমিটির জন্য যোগ্য মহিলা প্রতিনিধি পাওয়া না-গেলে ওই স্থান শূন্য রাখা হবে। পরবর্তী কালে কোনও মহিলা প্রতিনিধি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে জোর দেওয়া হবে ছাত্র-যুবদের তুলে আনার ব্যাপারেও। বয়স্ক, শারীরিক দিক থেকে অক্ষম ব্যক্তিরা যাতে কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান, সে কথাও বলা হচ্ছে।
তবে কমিটি থেকে সরে গেলেও যাতে প্রবীণ নেতারা যোগ্য সম্মান পান এবং তাঁদের কথা শোনা হয়, তা-ও
সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সিপিএম সূত্রে খবর, সৎ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা-কর্মীরাই যাতে লোকাল, জোনাল ও জেলা কমিটিতে থাকেন, তার জন্য জেলার নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ভোটাভুটি এড়িয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের ব্যাপারেও ‘ফরমান’ জারি করা হতে পারে বলে রাজ্য কমিটি সূত্রে খবর।
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর সিপিএম আর ‘ঘুরে
দাঁড়াতে’ পারেনি। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক ভাবে কিছুটা হলেও তারা সেই চেষ্টা করছে। বিধানসভা
ভোটে বিপর্যয় থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের স্থান কমিটিতে সুনিশ্চিত করতে হবে। যে এলাকায় যে ধর্মীয় ও সামাজিক জনগোষ্ঠী সংখ্যায় বেশি, সেই এলাকায় তারা যাতে আনুপাতিক হারে কমিটিতে স্থান পায়, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আরও বেশি করে মুসলিম, তফসিলি, আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যাতে সিপিএমের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পান, তা সুনিশ্চিত করাই আলিমুদ্দিনের লক্ষ্য। |