‘জল আনতেও টাকা ঢালুক সংস্থা’
ফের সব নথি জমা দিতে জিন্দলদের নির্দেশ রাজ্যের
শালবনি প্রকল্পের যাবতীয় রিপোর্ট ও ছাড়পত্রের প্রতিলিপি জিন্দলদের নতুন করে জমা দিতে বলল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে তারা দাবি জানাল, রূপনারায়ণ থেকে প্রকল্পের জন্য জল আনার ব্যবস্থায় টাকা ঢালুক সংস্থাটিও। শনিবার বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনার পরে রাজ্য শিল্প দফতরের দাবি, সব কাগজপত্র নতুন করে খতিয়ে দেখে অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার রাস্তায় হাঁটবে রাজ্য সরকার। জিন্দলরাও জানিয়েছে, সরকারের দাবি মতো সব কাগজপত্র আবার নতুন করে শিল্প দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
দ্রুত জমি জট-সহ সব সমস্যা মিটিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার বার্তা গত মাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দলের বৈঠকেই উঠে এসেছিল। রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে মুখ্যমন্ত্রী জমি জট-সহ সব সমস্যাই প্রশাসনকে ১৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। তখন জমি জট-সহ সব সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন জিন্দল কর্তাও। জিন্দলদের সরাসরি কেনা ২৯৪ একর জমি নিয়ে সেই সময় সমস্যা ছিল। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনে আটকে ছিল বিষয়টি। এর জন্য যে ‘১৪ ওয়াই’ ধারায় আবেদন করে ভূমি দফতরের অনুমোদন নিতে হয়, তাই নিয়ে কিছুটা জট ছিল। তবে জিন্দলরা এর পর সেই ধারায় আবেদন করে। কিন্তু ১৫ দিনের মধ্যে সব কিছু মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এই নিয়ে কাজ বিশেষ এগোয়নি।
এ দিনের বৈঠকে দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের লক্ষ্যে জিন্দলদের কাছে প্রকল্পের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদন ক্ষমতা, আকরিক লোহার জোগান, জলের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইল রাজ্য। সেই সঙ্গে প্রকল্পের জন্য এ পর্যন্ত যে সব দফতরের ছাড়পত্র পেয়েছে সংস্থা, তার সমস্ত কাগজপত্র একসঙ্গে জমা দিতে বলা হল শিল্প দফতরের কাছে। জিন্দল গোষ্ঠীর তরফে দাবি, সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে জমি-সহ সব বিষয়ে সরকারি অনুমোদন পেয়ে গেলেই পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে কাজ।
শনিবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্প নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রোমিত মুৎসুদ্দি ও জেএসডব্লিউ বেঙ্গলের তরফে বিশ্বদীপ গুপ্ত-সহ অন্য পদস্থ কর্তারা। বৈঠক শেষে বিশ্বদীপবাবু জানান, যে মুহূর্তে সব ক’টি বিষয়ে রাজ্যের সবুজ সঙ্কেত মিলবে, তার তিন বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে শালবনির কারখানায়।
জিন্দলগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজন মোট ৪,৩৩৪ একর জমি। যার ৩,০৩৫ একর খাস জমি। ৭৯৯.৯৭ একর জমি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের কাছ থেকে নিয়ে সংস্থাকে দিয়েছে রাজ্য। ১৮৯.৬২ একর জমি পাট্টা-মালিকদের থেকে কিনে নেয় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। আর ২৯৪ একর জমি সরাসরি কেনে সংস্থাটি।
জমি জটের সূত্রপাত এই ২৯৪ একর জমি ঘিরেই। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন অনুযায়ী, শিল্পের জন্য ২৫ একরের বেশি জমি রাখতে রাখতে গেলে ‘১৪ ওয়াই’ ধারায় আবেদন করে ভূমি দফতরের আগাম অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ভূমি দফতর জানিয়েছিল, ২৯৪ একর জমি কেনার আগে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়নি সংস্থা। ফলে আটকে রয়েছে জমির লিজ চুক্তি। পূর্বতন বাম সরকার যে জিন্দলদের ঠিক ভাবে জমি দেয়নি, তা স্পষ্ট বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও।
দু’পক্ষের প্রাথমিক আলোচনার পরে ওই জট কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ঠিক হয়, আইনি পথে হেঁটে বিতর্কিত জমি প্রথমে খাস করে নেবে রাজ্য। তার পরে সেই জমি হাতে পাওয়ার জন্য তাদের কাছে আবেদন করবে সংস্থা। এই প্রকল্পে প্রথম দফায় তৈরি হবে ৩০ লক্ষ টন ইস্পাত। সম্ভাব্য লগ্নির অঙ্ক ২০ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, লিজ চুক্তির খসড়া তৈরি। তাতে সায় দিয়েছে ভূমি দফতরও। ওই ২৯৪ একর জমি নিয়ে জটিলতা কাটলেই সই হয়ে যাবে ওই লিজ চুক্তি।
অন্য দিকে, উপদেষ্টা সংস্থা মেকন-কে দিয়ে শালবনির এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা রিপোর্ট তৈরি করিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। মেকন জানিয়েছে, ওড়িশার একাধিক সংস্থার থেকে আকরিক লোহা কিনতে পারে জিন্দলরা। ওড়িশার বারবিল থেকে এই লোহা আনা হবে বলে সংস্থার দাবি। পাশাপাশি সংস্থার কয়লার জোগান নিয়েও প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। সংস্থা চাইছে, তারা পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করলে যে পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন, অর্থাৎ কয়লার ব্লকটি প্রথম থেকেই তাদের দিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন দফতর এ ব্যাপারে সংস্থার সঙ্গে একমত নয়। কয়লার জোগান নিয়ে সঙ্কটের যুক্তিতে তাদের বক্তব্য, প্রকল্পে উৎপাদন শুরুর পর তা যে হারে বাড়বে, কয়লার জোগানও সেই হারে বাড়ানো হবে। এই নিয়ে জট এখনও রয়েই গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.