|
|
|
|
‘কিং’ পিটারের রাজ্যলাভ |
ধোনির এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনা |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
দুধে চোনা পড়ে গেল। চুনকামের ইমারতে ‘আইসিং অন দ্য কেক’-ও হল না।
আগের দিন সিএবি-র বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছিল আইসিসি। আর এ দিন টি-টোয়েন্টির উৎসব মাটি করল উইকেট। খলনায়ক হিসেবে ধোনিদের আঙুল ইডেনের ঢ্যাবঢ্যাবে উইকেটের দিকে। আরও খোলসা করে বললে কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের দিকে। ম্যাচ শেষে ধোনি নিজের ক্ষোভ গোপনও করেননি। ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে বলে দিয়েছেন, “ওয়ান ডে-তে যা উইকেট পেয়েছিলাম এটা তার চেয়েও খারাপ। ভীষণ স্লো।” শুধু ধোনি নন, ঘরের ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, “উইকেট আরও অনেক ভাল হতে পারত। এটা টি-টোয়েন্টির উপযুক্ত উইকেট নয়।”
উইকেট নিয়ে ক্ষোভ শনিবারের সিএবি-তে এমন ধূমায়িতযে, রাতে স্বয়ং জগমোহন ডালমিয়াকে ম্যাচ শেষে বলতে হয়েছে, “আমরা উইকেট নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই আলোচনায় বসব।”
ভারতীয় শিবিরের ক্ষোভ যে চূড়ান্ত আকার নিল না, তার পিছনে কেভিন পিটারসেনের অনবদ্য ইনিংস। প্রবীরের মুখরক্ষা যদি কেউ করে থাকেন, তিনি কিং পিটার। যিনি এই স্লো উইকেটেও একার হাতে ম্যাচ নিয়ে ধোনিদের হোয়াইটওয়াশের স্বপ্নে এক টুকরো হতাশা গুঁজে দিলেন। প্রবীর অবশ্য সাফাই দিচ্ছেন। “সবার কী সব কিছু ভাল লাগে? কারও ঝাল পছন্দ, কারও নোনতা। আমি কী করব?”
ইডেনের কিউরেটর যা-ই বলুন তাতে বরফ গলছে না। বরং সিএবি-তে প্রশ্ন উঠছে, অতীতে যিনি টেস্টে ভাল ভাল উইকেট উপহার দিয়েছেন, তিনি কেন একটা কুড়ি-কুড়ি-র উইকেট দিতে পারছেন না? কেন সন্ধে সাড়ে সাতটাতেই থেকে বল বাঁই-বাঁই করে ঘুরছে? প্রায় গড়িয়ে ইউসুফ পাঠানের স্টাম্প নিয়ে যাচ্ছে বলএই ছবি দর্শকরা তিন ঘণ্টার ক্রিকেটে মোটা খরচ করে দেখবেন কেন?
|
|
কেভিন পিটারসেনের যে ক্যাচ পড়ায় ম্যাচের মোড় ঘুরল। শনিবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার |
শনিবার ইডেনে হাজির হাজার পঁয়তাল্লিশ দর্শক ম্যাচ থেকে কী পেলেন তা হলে? জঘন্য বাইশ গজে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের খাবি খাওয়ার ছবি। পিটারসেনের আঙুলের চোটের তোয়াক্কা না করে সুইচ হিটে বিশাল ছক্কা। ইংরেজদের লম্ফঝম্ফ। চাপের মুখে হায়না-সমান ক্ষিপ্র রায়নার মতো ফিল্ডারেরও ক্যাচ মিস। এবং ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারির লাগাতার ব্যর্থতা।এক কথায়, আফসোস, হতাশা আর যন্ত্রণার স্ক্রিপ্ট।
টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় ১২০ তুলে ম্যাচ জেতা শুধু কঠিন নয়, ‘নামুম্কিন’। গোটা ওয়ান ডে সিরিজ দাপিয়ে বেড়ানো ধোনির টিমকেও তাই আটকে যেতে হল কুড়ি-কুড়ির স্বাভাবিক নিয়মে। শুরুতেই স্পিনের সাঁড়াশি আক্রমণ এনে ইংরেজ-দুর্গ ভাঙার একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন ধোনি। অশ্বিনকে দিয়ে প্রথম ওভার, পেসারদের সরিয়ে ইউসুফকে বেশি কাজে লাগানো। কিন্তু তাতে আর চিঁড়ে ভিজল কই?
এবং এই বিপর্যয়ের পিছনে পিচ যদি এক নম্বর খলনায়ক হয়, তা হলে দু’নম্বরে অবশ্যই থাকবে ভারতীয় ব্যাটিং। গৌতম গম্ভীর আজ ছিলেন না। আর তাঁর না থাকায় বোঝা গেল, এই টিমে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ টানার লোক বলতে হাতে গোনা তিন। অধিনায়ক ধোনি নিজে, আর তাঁর দুই দোসর রায়না এবং কোহলি। রায়না একটা ছোট ‘ক্যামিও’-র বেশি কিছু দিতে পারেননি, কোহলিও নন। একা কী করবেন ধোনি? ক্রিজে যখন এলেন তখন একের পর এক উইকেট পড়ছে। সব দেখেশুনে ধোনিও ‘সিক্সথ গিয়ার’ ছেড়ে চলে গেলেন ‘ফার্স্ট গিয়ারে।’ তবু শেষ বাজারে তাঁর ব্যাট থেকে একটা-দু’টো ‘হেলিকপ্টার’ শট বেরোল বলে। নইলে একশো কুড়িও পেরোয় না।
রাত ন’টা থেকে আস্তে আস্তে ফাঁকা হচ্ছিল ইডেন। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ইংল্যান্ড ১০৫-২। দুঃখ তবু কিছুটা কমত ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারি কিছু করলে। শনিবারের ইডেনই তাঁর কাছে সেরা মঞ্চ হতে পারত। হিরো হয়ে ওঠার। ঝটপট তিনটে উইকেট চলে গিয়েছে, ইডেন আতঙ্কিত, মনোজ নামছেন ...ক্লাবহাউসে বসা এক স্থানীয় ক্রিকেটার বলে উঠলেন, “আজ গুরু ফাটিয়ে দেবে।” আর ফাটানো। উল্টে মনোজ নিজেই ফেটে গেলেন! একে বাঁ-হাতি স্পিনার সমিত পটেলের নিরামিষ ডেলিভারিতে বোল্ড। সঙ্গে দেখতে হল ভারতীয় বংশোদ্ভুত পটেলের নাচ।
|
মনোজের শিকে ছিঁড়ছে না |
ওয়ান ডে
| টি-টোয়েন্টি |
ম্যাচ-৫
রান-৬১, সর্বোচ্চ-২৪,
গড়-১২.২০,
স্ট্রাইক রেট-৬৬.৩০
|
ম্যাচ-১
রান-১৫, সর্বোচ্চ-১৫,
গড়-১৫,
স্ট্রাইক রেট-৮৮.২৩।
|
|
এই সিরিজে টেস্ট হাতে পাননি ধোনি। পেয়েছিলেন ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চের দিকে যখন এগোচ্ছেন, মুখে একটা কষ্টের হাসি ঝুলে। যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না, ওয়ান ডে সিরিজে বিপক্ষকে ওড়ানোর পর এমন হারও অপেক্ষা করে থাকতে পারে।
মানা সম্ভবও নয়। কথায় বলে, সব ভাল যার শেষ ভাল। ধোনির শেষটা আর ভাল হল কই?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১২০-৯ (রায়না ৩৯, ধোনি ২১, ফিন ৩-২২, ব্রেসনান ২-১৯, বোপারা ২-১৬),
ইংল্যান্ড ১২১-৪ (পিটারসেন ৫৩, ইউসুফ ১-৩৪)। |
|
|
|
|
|