শেষ পর্যন্ত আলফার হাতেই মারা পড়লেন ‘বিতর্কিত’ সালফা নেতা তিলেশ্বর লোহান। পুলিশ সূত্রে খবর, কাল সন্ধ্যায় কুশলনগরের বাসভবন থেকে বের হয়ে মরান-নাহরকটিয়া সড়ক ধরে হাঁটছিলেন তিলেশ্বর। আচমকা দুটি বাইকে চার জঙ্গি এসে কাছ থেকে পরপর গুলি করে তাঁকে। ৮টি গুলি লাগে তিলেশ্বরের শরীরে। ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
বহু হত্যাকাণ্ড ও তোলাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও ‘সরকারি বদান্যতায়’ তিলেশ্বরকে কখনও গ্রেফতার হতে হয়নি। এর আগে, শোওয়ার ঘরে গ্রেনেড হানায় সপুত্র জখম হয়েও বেঁচে যান তিলেশ্বর। প্রাণের ভয়ে ভিটে ছেড়ে থানার পিছনে বাড়ি বানিয়েছিলেন। সরকারি দেহরক্ষীর পাশাপাশি, নিজস্ব দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরতেন। সঙ্গে রাখতেন বৈধ-অবৈধ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু কাল লড়াইয়ের কোনও সুযোগই পাননি তিনি। বাড়ির সামনেই, তিলেশ্বরকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় পরেশপন্থী আলফার চার সদস্য। রাতে, হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি পাঠান পরেশপন্থী লেফটেন্যান্ট অরুণোদয় দহোটিয়া। শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ায় চারদিনের মাথায় অসমের তিনসুকিয়া জেলায় থানার পিছনেই এই সালফা নেতাকে হত্যা করে পরেশ বরুয়া বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা এখনও কতটা সক্রিয়।
১৯৯৮ সালে আত্মসমর্পণ করার পর থেকে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন তিলেশ্বর। উজানি অসমে, আলফা-দমন অভিযানে তিলেশ্বরকে সরাসরি ব্যবহার করা শুরু করে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সিআরপিএফ। আলফার ২৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের সার্জেন্ট মেজর চরণ মাঝি এবং বুধিন হাজরিকা, মঙ্গল সিংহ, জুনু বরুয়া-সহ বহু আলফা নেতা-সদস্যকে হত্যার ঘটনায় তিলেশ্বরের নাম জড়িয়ে যায়। অভিযোগ, তিলেশ্বর পুলিশের উপস্থিতিতেই নিজে গুলি করে প্রাক্তন সতীর্থদের খতম করে দিতেন।
২০০৮ সালে গরুবিহুর দিনে শিবসাগরের ভীমপড়া গ্রামে সিআরপিএফের আলফা দমন অভিযানে দুলেন বরুয়া নামে এক নিরীহ বৃদ্ধের প্রাণ যায়। এ নিয়ে প্রবল আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। দুলেন হত্যাকাণ্ডে লোহান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তবুও, তিলেশ্বরকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং সরকারি ব্যয়ে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তবু শেষরক্ষা হল না। |