অবশেষে পদত্যাগ করলেন অরুণাচলের ‘বিতর্কিত’ মুখ্যমন্ত্রী জারবম গামলিন। নিজেরই মন্ত্রিসভার সদস্য, চউনা মেইকে অপহরণ করার অভিযোগেই তাঁকে সরে যেতে হল। নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী নাবাম টুকি।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী দোরজি খান্ডুর মৃত্যুর পরে, গত ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী হন পেশায় আইনজীবী গামলিন। কার্যত গেগং আপাংকে সরিয়ে খান্ডুকে মুখ্যমন্ত্রী করার নেপথ্য কুশলী ছিলেন গামলিনই। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে খান্ডু রাজ্যের সবচেয়ে ‘লাভজনক’ পদ, বিদ্যুৎ মন্ত্রী বানিয়ে দেন গামলিনকে। দোর্জি খান্ডুর মৃত্যুর পর থেকেই অরুণাচলে রাজনৈতিক অস্থিরতার শুরু। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার ছিলেন প্রদেশ সভাপতি নাবাম টুকি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টাকো দাবি, জারবম গামলিন, লোকসভা সাংসদ টাকাম সঞ্জয় ও রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুট মিথি। তবে সব দাবিদারদের টপকে, এআইসিসির সিদ্ধান্তে জারবমই মুখ্যমন্ত্রী হন। |
২৬ সেপ্টেম্বর, মন্ত্রী-অপহরণ বিতর্ক গামলিন-বিরোধীদের হাতে ব্রহ্মাস্ত্র তুলে দেয়। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে সে দিন রাতেই সাংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে জানানো হয়: জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী মেইকে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ নীতি বিহারের বিধায়ক আবাস চত্বর থেকে অপহরণ করে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি সোজা মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ঢোকে। সেখানে রাজনৈতিক কিছু বিষয় নিয়ে ‘জোর করে’ মেইয়ের সম্মতি আদায়ের পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরদিন পুরো ঘটনা অস্বীকার করেন গামলিন। কিন্তু তাতে বিতর্ক মেটেনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি টুকি, মেইকে নিয়ে দিল্লি চলে যান। সোজা এআইসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে অপহরণের অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ দায়ের করা হয় ইটানগরের থানাতেও। রাজ্য জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ, অবরোধ।
সম্প্রতি এআইসিসি-র একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যে এসে সব
বিধায়ক, মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রিসভা সূত্রে খবর, অধিকাংশ মন্ত্রী-বিধায়কই গামলিনের বিরুদ্ধে যান। লাগাতার দিল্লিতে দরবার চালিয়েও
গদি বাঁচাতে পারেননি গামলিন। গত কাল এআইসিসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে গামলিনকে জরুরি তলব করা হয়। সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বিজয়কৃষ্ণ সন্দিকৈ, অরুণাচলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ধনীরাম শাণ্ডিল ও অস্কার ফার্নান্ডেজ
বৈঠকে হাজির ছিলেন। অরুণাচল থেকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও হাজির থাকেন নাবাম টুকি, দুই সাংসদ মুকুট মিথি ও টাকাম সঞ্জয় এবং ‘অপহরণ হওয়া’ মন্ত্রী চউনা মেই। রাত অবধি আলোচনা চলে। শেষ পর্যন্ত গামলিন পদত্যাগ পত্র জমা দেন আহমেদ পটেলের কাছে। একই সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে টুকিও পদত্যাগ করেন।
আজ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী রাজ্য ও এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানান, আলোচনা চলছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
|