অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আর মতভেদের পরে অবশেষে মরিয়া হয়ে এক জোট থাকার বার্তা দিতে চাইলেন অণ্ণা হজারের অনুগামীরা। গাজিয়াবাদে অণ্ণা শিবিরের কোর কমিটির বৈঠকের নির্যাস এটাই। কোর কমিটি ভেঙে দেওয়ার যে কোনও সম্ভাবনাই নেই তাও জানিয়ে দিয়েছেন অন্যতম অণ্ণা অনুগামী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সম্প্রতি একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী অণ্ণা হজারের অনুগামীরা। কোর কমিটির সদস্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও কিরণ বেদীর সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে হামলা হয়েছিল আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের উপরে। প্রশান্তের সেই মন্তব্য সমর্থন করেননি খোদ অণ্ণা। অণ্ণা শিবিরের বিভেদের গন্ধ পেয়ে আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারও।
বিতর্কের মধ্যেই কোর কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী রাজিন্দর পুরি ও পি রাজাগোপাল। ক্রমশ প্রবল হচ্ছিল কোর কমিটি ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা। অণ্ণাকে চিঠি লিখে আপাতত কোর কমিটির কাজকর্ম বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অন্যতম সদস্য কুমার বিশ্বাস। |
সাংবাদিক বৈঠকে অণ্ণা শিবির। ছবি: পিটিআই |
কিন্তু, শনিবারের বৈঠকে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে বোঝাতে চেয়েছে অণ্ণা শিবির। এই প্রথম কোর কমিটির বৈঠকে হাজির ছিলেন না অণ্ণা হজারে। মৌনব্রত অবলম্বন করায় বৈঠকে যাননি তিনি। কমিটিতে ‘পরিবর্তন’ চেয়েছিলেন মেধা পাটকর ও কর্নাটকের প্রাক্তন লোকায়ুক্ত বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে। তাঁরাও শনিবারের বৈঠকে ছিলেন না। বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি কুমার বিশ্বাসও। কিন্তু, বিতর্ক যাঁদের নিয়ে, সেই প্রশান্ত ভূষণ, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীরা হাজির ছিলেন। ছিলেন অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শান্তি ভূষণ ও মণীশ শিশোদিয়াও।
বৈঠকের পরে কিরণ বেদী জানিয়েছেন, অণ্ণা শিবিরে কোনও মতভেদ নেই। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জনলোকপাল বিল পাশ করানোর দাবিতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ। তাঁদের উপরে অনেক আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু, তাতে তাঁরা পিছপা হবেন না। অণ্ণা শিবিরের রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। হিসারের উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার করেছিলেন অণ্ণা শিবিরের সদস্যরা। তাই তাঁদের বিজেপি-র সহযোগী, সঙ্ঘের দোসর বলতে আরও সুবিধে হয়েছে কংগ্রেসের। কিন্তু কেজরিওয়ালের দাবি, তাঁরা কংগ্রেস-বিরোধী নন। জনলোকপাল বিলকে সমর্থন করে অণ্ণাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কেজরিওয়ালের দাবি, ওই চিঠি আগে পাওয়া গেলে তাঁরা হিসারে প্রচার করতেন না।
তবে ইউপিএ সরকার যে অণ্ণা হজারের অনুগামীদের আক্রমণ করছে, সেই দাবি থেকে সরে আসেনি অণ্ণা শিবির। এই বক্তব্যের জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, “অণ্ণা শিবিরের সদস্যদের নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন সন্তোষ হেগড়ে, স্বামী অগ্নিবেশ, রাজেন্দ্র সিংহের মতো ব্যক্তিরা। অণ্ণা অনুগামীদের উচিত কংগ্রেসকে দোষারোপ না করে ওই অভিযোগগুলি নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা। অণ্ণা শিবিরের কোর কমিটি পুনর্গঠিত হবে কি না সেটা তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।” বিমানভাড়া নেওয়া নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কিরণ বেদী। এই বিষয়ে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন অণ্ণা শিবিরের অন্য সদস্যেরা। তবে কোর কমিটিতে পরিবর্তনের প্রয়োজন অস্বীকার করতে পারেননি অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। অণ্ণার বক্তব্য নিজের ব্লগে ধারাবাহিক ভাবে জানাচ্ছেন সাংবাদিক রাজু পেরুলেকার। শুক্রবারই রাজু জানিয়েছেন, কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। অণ্ণা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে চান। |