প্রায় আধ ডজন প্রথম সারির নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁদের কেউ জেলে, কারও বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে পুরোদমে। এই অস্বস্তিকে সঙ্গী করেই আগামিকাল কর্নাটকে প্রবেশ করছে লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘দুর্নীতি-বিরোধী’ রথ।
অবশ্য স্বস্তি একটা আছে। পরোক্ষে। দুর্নীতির অভিযোগে জেলে বন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। দলের অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, ইয়েদুরাপ্পা জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরোলেই বেঙ্গালুরুতে আডবাণীর জনসভায় পৌঁছে যেতে পারতেন। আডবাণীর পক্ষে সেটি আরও বিড়ম্বনার হত। ইয়েদুরাপ্পা জেলে থাকায় অন্তত সেই অস্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়া গিয়েছে!
তবে বিষয়টিকে ছেড়ে দিতে নারাজ বিরোধী দলগুলি। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা জি পরমেশ্বর বলেন, “দুর্নীতি-বিরোধী রথ নিয়ে আডবাণীর কর্নাটক সফর সম্পূর্ণ অর্থহীন। এই রথ নিয়ে কর্নাটকে যাওয়ার কোনও নৈতিক অধিকারই নেই তাঁর।” জেডি (এস) নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার কথায়, “আডবাণীর রথযাত্রা পুরোপুরি রসিকতার পর্যায়ে পৌঁছেছে!” দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আডবাণীর রথযাত্রা কর্নাটক থেকেই শুরু করা উচিত, যেখানে তাঁর দলের মধ্যে দুর্নীতি ছেয়ে গিয়েছে।” |
জন চেতনা যাত্রায় কেরলের কোট্টারাকারায় আডবাণী। ছবি: পিটিআই |
এই অস্বস্তি ঢাকতেই আডবাণীর বেঙ্গালুরুর সফর কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। প্রথমে ঠিক ছিল, দুপুর বারোটার মধ্যেই কেরল থেকে আকাশপথে বেঙ্গালুরু পৌঁছে যাবেন তিনি। তার পর বিকেলে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হবে। সন্ধ্যায় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে সভা হবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেঙ্গালুরুর সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। আডবাণী বেঙ্গালুরু পৌঁছচ্ছেন সন্ধ্যায়। পৌঁছে সোজা জনসভায় যাবেন তিনি। সেখানে বক্তৃতা দিয়ে নৈশভোজ করবেন মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার বাসভবনে। রাতটুকু বেঙ্গালুরু কাটিয়ে পর দিন সকালে উড়ে যাবেন ম্যাঙ্গালোরে। সেখানে একটি সাংবাদিক বৈঠক করবেন। গত কাল মাদুরাইয়ে যাত্রাপথে বোমা উদ্ধারের ঘটনার পর কর্নাটকেও কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবেন আডবাণী। বিজেপি নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, এ বারের রথযাত্রার কর্নাটক অংশটুকুই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। তার প্রধান কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে কর্নাটকের দুর্নীতি নিয়েই সবথেকে বেগ পেতে হয়েছে দলকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাকে দুর্নীতির অভিযোগেই সরাতে হয়েছে। ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে সহ-অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী এস এন কৃষ্ণাইয়া শেট্টি বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। আর এক জন প্রাক্তন মন্ত্রী কাট্টা সুব্রহ্মণ্যম নায়ডুও জমি কেলেঙ্কারিতে জেল বন্দি। সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে প্রাক্তন মন্ত্রী জি জনার্দন রেড্ডি এখন হায়দরাবাদের জেলে। তার মধ্যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর অশোকের বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সদ্য গত কালই জেলে গিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক ওয়াই সাম্পাঙ্গি। জমি কেলেঙ্কারির ঘটনায় এক সাক্ষীকে হুমকি দেওয়ায় তাঁর জামিন নাকচ করে দিয়েছে স্থানীয় আদালত। আর আডবাণীর রথযাত্রার প্রস্তুতির মধ্যেই শিল্পমন্ত্রী মুরুগেশ নিরানির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে লোকায়ুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধেও জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে।
দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা গুচ্ছ গুচ্ছ কেলেঙ্কারির অভিযোগের মধ্যেই কাল বেঙ্গালুরুর সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেবেন আডবাণী। বিজেপি নেতাদের আশা, রাজ্য রাজনীতিতে নেতাদের মধ্যে সমীকরণ যা-ই থাকুক না কেন, কালকের সভা এক ‘মেগা-শো’-এ পরিণত হতে চলেছে। অবশ্য ক’দিন আগে এই সভা হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। রথযাত্রা শুরুর মুখে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে আডবাণীর মন্তব্য ঘিরে জট পাকায় কর্নাটকের রাজ্য রাজনীতিতে। আডবাণীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। যার জেরে শেষ মুহূর্তে আডবাণীর বেঙ্গালুরু সফর নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, বেঙ্গালুরুতে সভা না হলে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। রথযাত্রার উদ্দেশ্যও প্রশ্নের মুখে পড়বে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সফরসূচি চূড়ান্ত হয়। এখন ইয়েদুরাপ্পা গোষ্ঠী যেমন নিজের শক্তি দেখাতে চাইছে, তেমনই তাঁর বিরোধী, অনন্ত কুমারের গোষ্ঠীও এই সভা সফল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। |