ভাড়াটে আছে এমন পুরনো বা বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করতে এত দিন কেবল আবাসিকদের সম্মতিপত্র পুরসভায় জমা দিলেই চলত। এ বার থেকে বাড়ির মালিক বা প্রোমোটারকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে, পুরনো বাড়িতে যে জায়গা নিয়ে ভাড়াটে বাস করছিলেন নতুন বাড়িতে সেই একই পরিমাণ জায়গা তাঁকে দেওয়া হবে। ওই ‘অঙ্গীকারপত্র’ পাওয়ার পরেই পুরসভা নতুন বাড়ির নকশা অনুমোদন করবে বলে শনিবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পুরসভা ওই নথি নিজের কাছে রেখে দেবে।
এত দিন পুরসভা ভাড়াটেদের সম্মতিপত্র সংরক্ষণ করত না। এর ফলে ভবিষ্যতে বাড়ির মালিক কিংবা প্রোমোটার ভাড়াটেকে বঞ্চিত করলে পুরসভা হস্তক্ষেপ করতে পারত না। মেয়র বলেন, “নতুন বাড়িতে ঘর পাওয়া নিশ্চিত হলে ভাড়াটেরা বাড়ি ভাঙতে বাধা দেবেন না বলেই আশা করছি। অন্য দিকে বাড়ির মালিক বা প্রোমোটাররাও যাতে ভাড়াটেদের কোনও ভাবে বঞ্চিত করতে না পারেন, সে দিকেও নজর রাখবে পুরসভা। ভাড়াটের সম্মতিপত্র আদায়ের পরে বঞ্চনার ঘটনা ঘটলে পুরসভা প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে।’’
ভাড়াটের স্বার্থ রক্ষা করে এ ভাবেই শহরের পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়ির ভোল পাল্টাতে উদ্যোগী হচ্ছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র বলেন, “শহরে প্রায় দু’হাজার বিপজ্জনক বাড়ি আছে। সেগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু পুর-আইনে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। শুধুমাত্র নোটিস লটকে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলেছে।” মেয়র মনে করেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় মালিকেরা বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজে হাত দিতে পারেন না। ভাড়াটেরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। ভাড়াটেরা ভয় পান, নতুন বাড়িতে তাঁদের কোনও ঠাঁই হবে না। সেই কারণেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও বহু পরিবার বিপজ্জনক বাড়িতে বাস করছেন।
কলকাতায় বহু পুরনো বাড়িতে বহু পরিবার এখনও ৩০, ৩৫ বা ৫০ টাকায় ভাড়া থাকেন। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন বাড়িতেও কি তাঁরা একই ভাড়ায় থাকতে পারবেন? মেয়র বলেন, “ভাড়া নির্ধারণে পুরসভার কোনও ভূমিকা থাকবে না। আলোচনার ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেকেই ঠিক করতে হবে।” কম ভাড়ায় থাকার জন্যই যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক বাড়িতে থাকছেন তাঁরা কতখানি বর্ধিত ভাড়া দিতে রাজি হবেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তাই এই নয়া পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুরসভার কর্মী-অফিসারদের মধ্যেই। |