শিল্পমন্ত্রী বলছেন, মালিকানা সমস্যা নয়। পূণের্র্ন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “এ ব্যাপারে যা বলার মন্ত্রীই বলবেন।” তবে শনিবার হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে মালিকানা বিতর্কের থেকে সংস্থার স্বাস্থ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠক শেষে যদিও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সংস্থাটির এই হাল কী ভাবে হল এবং কী ভাবেই বা তার থেকে বেরনো যায়, তাই তিনি জানতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তিনি অবশ্য বলেন, পেট্রোকেম নিয়ে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন সময়ে যা চুক্তি হয়েছে, তা তিনি খতিয়ে দেখবেন।
জন্মলগ্ন থেকে বিতর্ক তাড়া করে ফেরা এই সংস্থার কয়েক মাস আগেও ১ টাকা আয় করলে ১.৬৬ টাকা যেত ঋণের দায় মেটাতে। আজ যা পরিস্থিতি তাতে প্রায় কোনও আর্থিক সংস্থাই এইচপিএলকে ঋণ দিতে রাজি নয়।
পেট্রোকেমে অর্থ সঙ্কটের সূত্রপাত প্রকল্প শেষ করার জন্য ৯৭৯ কোটি টাকা ঋণ করা নিয়ে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল ৫,১৭০ কোটির প্রকল্পে ১,৯৭৯ কোটি টাকা আসবে শেয়ার বেচে। বাকি ৩,১৯১ কোটি টাকা ঋণ খাতে। স্থির হয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ৪৩৩ কোটি, রাজ্য ৪৩৩ কোটি ও টাটারা ১৪৪ কোটি টাকা সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করার পরে বাকি ৯৭৯ কোটি তোলা হবে শেয়ার বেচে। কিন্তু সে সময়ে টানা মন্দার কারণে শেয়ার বিক্রির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই টাকা তুলতে হয় প্রায় ১৭% সুদে ঋণ করে। প্রথমে ১.৬:১ অনুপাতে ঋণ ও ইক্যুইটির সংস্থান করার কথা ছিল। কিন্তু বাড়তি ঋণের জেরে তা দাঁড়ায় ৪.২:১। ফলে সুদ খাতে ব্যয় দাঁড়ায় পরিকল্পিত অঙ্কের দ্বিগুণ।
গত এক দশকে এই রাজ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার উপর লগ্নি হয়েছিল দুটি সংস্থায়। একটি মিৎসুবিশির পেট্রোরসায়ন প্রকল্প। অপরটি হলদিয়া পেট্রোকেম। বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসাবে এই প্রকল্পে অংশ নেয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
কিন্তু এর পর থেকেই শুরু হয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে অংশীদারি নিয়ে বিরোধ। এ অবস্থায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা হলদিয়া থেকে হাত গুটিয়ে নেবে। চুক্তি অনুযায়ী রাজ্য তাদের শেয়ার বিক্রি করলে তার উপর প্রথম দাবি থাকবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর।
এই নিয়ে কিছু দিন আগে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন জানান, প্রায় ২৯ টাকা দামে রাজ্য সরকারের শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী আদালতে যায়। তাদের দাবি, আর্থিক সঙ্কটে পড়া সংস্থার শেয়ার দর ২৯ টাকা হতে পারে না। গোষ্ঠীর অভিযোগ, সুপরিকল্পিত ভাবে সংস্থায় তাঁদের মলিকানা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল রাজ্য। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি, রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ওই শেয়ার নিরপেক্ষ সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত মূল্যেই তাদের হাতে দিতে হবে। এই প্রসঙ্গেই সম্ভবত শিল্পমন্ত্রী ওই সব চুক্তির আইনি দিক খতিয়ে দেখতে চান। তিনি বলেন, “চুক্তি নিয়ে কিছু আইনি প্রশ্ন তুলেছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তাদের পুরো বক্তব্য লিখিত ভাবে দিতে বলেছি। আমরাও এর আইনি দিক খতিয়ে দেখব।” এই মুহূর্তে অবশ্য সংস্থার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আদালত থেকে দূরে থাকতে চায় দু’পক্ষ। বিরোধ এড়িয়ে আলোচনার পথেই রফা চায় তারা।
মালিকানা প্রশ্নের মীমাংসা কী ভাবে হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু শিল্পমহলের আশঙ্কা বিতর্ক আর বেশি দিন চলতে থাকলে রাজ্যের সমকালীন অন্যতম শিল্প ‘শো পিস’ হলদিয়া পেট্রোকেম পুরোদস্তুর রুগ্ণ সংস্থায় পর্যবসিত হতে পারে। |