বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নেই কাটল উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার দেওয়ালি। শব্দবাজি ফাটানো, মদ্যপ অবস্থায় মারপিট, বেপরোয়া বাইক চালানো সহ নানা অভিযোগে অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় রাতে শব্দবাজির তাণ্ডব চলেছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, রায়গঞ্জ, মালদহ, বালুরঘাটে রাতভর টহল দিয়েছে পুলিশ। ফি বছর শিলিগুড়িতে পুজোর সময়ে সোনার হার খোয়ানোর ঘটনা ঘটে থাকে। এ বার তেমন কোনও অভিযোগ না-থাকায় স্বস্তিতে পুলিশ। উত্তরবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত আইজি ড্যানিয়েল শেরিং লেপচা বলেন, “পুলিশি রাতভর টহল দিয়েছে। গঙ্গারামপুরে দুষ্কৃতীরা পুলিশের উপর হামলা করেছে, সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু শব্দবাজি আটক করা হয়েছে।” বুধবার রাত ১২টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার কেশবপুরে জুয়ার ঠেকে হানা দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। উত্তেজিত জনতা ধৃত ৬ জনকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া ইটের আঘাতে ৭ জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। গঙ্গারামপুর থানার আইসির গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। জখম পুলিশ কর্মীদের গঙ্গারামপুর প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। আসর থেকে ৫০ হাজার টাকা আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মদ্যপ অবস্থায় গণ্ডগোল, দুষ্কর্ম করার চেষ্টার অভিযোগে ৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হিলিতে একটি জুয়ার বোর্ডে হানা দিয়ে এক আইনজীবী সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৬ হাজার টাকা আটক করা হয়। অভিযুক্ত আইনজীবীর দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দার বিরুদ্ধে অভিযুক্ত ছিনতাই, পুলিশের উপর হামলা ও ভাঙচুরের মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ তল্লাশি চলছে।” শিলিগুড়ি সহ দার্জিলিং জেলার সর্বত্র পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। জেলা থেকে ৫০ জনের উপরে দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কলেজপাড়া থেকে ১৫ জনের বাহিনী গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৪টি মোটরবাইক আটক করা হয়। তারা মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালিয়ে গণ্ডগোল করার চেষ্টা করছিলেন। শব্দবাজি ফাঁটানোর অভিযোগেও ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দবাজির তাণ্ডব হয়েছে বলে অভিযোগ। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “পুজো নির্বিঘ্নে কেটেছে। যারা গণ্ডগোলের চেষ্টা করেছিল তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” পুজোর রাতে উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ৬১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ২১ জনকে ধরা হয়েছে। রায়গঞ্জের রূপাহার এলাকায় জুয়ার আসর থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩৫০০ টাকা আটক করা হয়। ইসলামপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুয়ার আসরে হানা দিয়ে ৫ হাজার টাকা আটক করা হয়। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবারে নিষিদ্ধ শব্দবাজির দাপত অনেকটাই কম।” শব্দবাজির দাপটের অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারেও। বুধবার সন্ধে থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত শব্দবাজির দাপট চলেছে বলে অভিযোগ। মঙ্গল ও বুধবার মিলিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩০ জন জুয়াড়ি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “পুজোয় গোলমালের খবর নেই। পুলিশ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে।” মালদহ জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে জেলা থেকে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” জলপাইগুড়ি থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছি। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন এই দিন বলেন, “পুজোর রাতে কোনও গণ্ডগোল হয়নি।” |