ধস নেমেছিল রেললাইনে। অথচ যথাযথ নজরদারি ছিল না। রেলের নজরদারিতে সেই গাফিলতির জেরেই গত ৩১ জুলাই রাতে গৌড় মালদহ ও জামিলঘাটার মাঝখানে কালিয়াচকের বাখরপুরে দুর্ঘটনায় পড়েছিল গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস। রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছেন রেলের মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার আর পি যাদব।
প্রাথমিক রিপোর্টে যাদব বলেছেন, ওখানে রেললাইনের ধসটা মোটেই ছোটখাটো ছিল না। দৈর্ঘ্যে সেটা ছিল প্রায় ১৪ মিটার। এত দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ধস নামায় কলকাতামুখী গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন-সহ ছ’টি কামরা লাইন থেকে বেরিয়ে পাশের লাইনে গিয়ে কাত হয়ে পড়ে। আর ঠিক সেই সময়েই উল্টো দিক থেকে আজিমগঞ্জ-মালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেন এসে সজোরে ধাক্কা মারে পড়ে থাকা ইঞ্জিনটিকে। যাদবের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই রেললাইনে যথাযথ নজরদারির ব্যবস্থা থাকলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
এমন দুর্ঘটনা কী ভাবে এড়ানো যেতে পারে, সেই ব্যাপারে কিছু পথও বাতলে দিয়েছেন মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার। তাঁর পরামর্শ, এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা দেশে ধসপ্রবণ সব রেলপথকে বিপন্মুক্ত করার জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি)-র সাহায্য নিক রেল মন্ত্রক। তার পাশাপাশি আইআইটি এবং রেলওয়ে ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন প্রযুক্তির সন্ধান করা উচিত রেলের। সেই সঙ্গেই রেলপথে নজরদারি আরও জোরদার করতে বলেছেন মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার।
নজরদারিতে গাফিলতি কতটা?
রেল মন্ত্রকের কাছে পেশ করা যাদবের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মালদহ এলাকা এমনিতেই ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত। তাই বর্ষাকালে ওই অঞ্চলের রেলপথে রাতে বিশেষ টহলদারির ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনার রাতে তা ছিল না। ফলে রেললাইনের তলা থেকে যে বিরাট অংশের মাটি সরে গিয়েছিল, সেটা কেউ জানতেই পারেনি। আবার নজরদারি না-থাকার কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ইঞ্জিন যে অন্য লাইনে পড়ে রয়েছে, তা জানানো যায়নি আজিমগঞ্জ-মালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে।
মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনারের আরও মন্তব্য, সে-রাতের দুর্ঘটনায় মাত্র এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই যে ঘটনার গুরুত্ব কম, সেটা ভেবে নিলে ভুল হবে। মালদহ ডিভিশনের ওই দুর্ঘটনার ব্যাপকতা ছিল বিরাট। দুর্ঘটনার জেরে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে রেলের ওই ডিভিশনে একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গড়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আর পি যাদব তাঁর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে যে-সব প্রসঙ্গ তুলেছেন, তার মধ্যে আছে:
• মালদহ এলাকা এমনিতেই ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত। তা সত্ত্বেও রাতের টহলদারির ব্যবস্থা ঠিকমতো ছিল না। টহলদারি ঠিকঠাক থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।
• রেলের ওই ডিভিশনের কর্তারা ধস ঠেকানোর ব্যাপারে আগে তেমন কোনও ভাবনাচিন্তা করেননি। ধস ঠেকানোর জন্য বর্ষার আগেই যা যা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তা-ও যথাযথ ভাবে নেওয়া হয়নি।
তবে রেলের কোনও অফিসার বা কর্মীর গাফিলতিতে নজরদারির বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি যাদব। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, চূড়ান্ত রিপোর্টে এই বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার। |