জ্বর নিয়ে ফিরে মৃত্যু, ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে
রায়গঞ্জের পরে এবার ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ধরা পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুরেও। বালুরঘাটের তপন থেকে গুজরাতে কাজ করতে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামে ফিরেছেন ১৩ জন। গুজরাতেই ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম তোফাজ্জবল মণ্ডল (৩৪)। মৃত ও অসুস্থরা সকলেই তপনের আজমতপুর এলাকার বাসিন্দা। অসুস্থদের সকলকে গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সুদীপ দাস বলেন, “অসুস্থদের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ। তাঁকে মালদহ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই রোগীর রক্তে প্লাসমোডিয়াম ফেলসিফেরাম জীবাণু মিলেছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত মণ্ডল বলেন, “২ সদস্যের এক চিকিৎসক দল এলাকায় গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এখনও পর্যন্ত ২ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জাবীণু মিলেছে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এদিকে, রায়গঞ্জের শীতগ্রাম এলাকার আরও তিন যুবকের রক্তে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামের জীবাণু মিলেছে। তিন জনের মৃত্যু এবং গ্রামের ১১ জন যুবক ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল এলাকার ১৮৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করেন। সেখান থেকেই তিন জনের রক্তে নতুন করে জীবাণুর প্রমাণ মিলেছে।
উত্তর দিনাজপুরের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) অজয় চক্রবর্তী বলেন, “তিন জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে। তবে ভয়, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে জীবাণুর সক্রিয়তা অত্যন্ত কম। তাঁই ওই তিনজনকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করানো হবে।” স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আফতাব আলম বলেন, “ওই তিন জন যুবকও মুম্বইতে দিনমজুরির কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তার পরে তাঁরা জ্বরে ভুগছিলেন।” এ দিন দিনভর স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের একটি দল ওই গ্রামে শিবির করে বাসিন্দাদের রক্ত পরীক্ষা করে। বাসিন্দাদের মধ্যে তাঁরা প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও বিলি করে। পাশাপাশি, প্রশাসনের তরফে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে মশা নিরোধক তেল এবং জীবাণু নাশক পাউডার ছড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। মাইকিং করে বাসিন্দাদের মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মুম্বইয়ে দিনমজুরি করতে গিয়ে শীতগ্রাম এলাকার ২০ জন যুবক জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি ফিরে আসার পর ২ জনের এবং মালদহে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়। বাকি ১৭ জনও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষার পর জানতে পারেন, ১৭ জনের মধ্যে ১১ জনের রক্তে প্লাসমোডিয়াম েফেলসিফেরাম (ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া) জীবাণু রয়েছে। গত বুধবার ওই ১১ জনকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পরেই শীতগ্রাম এলাকায় রক্ত পরীক্ষা, ওষুধ বিলির কাজে নামে স্বাস্থ দফতর। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক তন্ময় পাল বলেন, “প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আশা করছি, সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।” রায়গঞ্জের বিডিও সুব্রত পাল বলেন, “চিকিৎসকেরা এলাকায় রক্ত পরীক্ষা করেছেন। ওষুধপত্র দিয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফে মশা নিরোধক তেল, জীবাণু নাশক পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। সবাইকে মশারি ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে।”এরই মধ্যে নতুন করে যাতে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে না পড়ে তা দেখার জন্য বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাশাং নরবু ভুটিয়া’র সঙ্গে দেখা করেন প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। বিধায়ক বলেন, “কয়েকদিন যাতে চিকিৎসকেরা ওই এলাকার বাসিন্দাদের রক্ত পরীক্ষা করে ওষুধ বিলির কাজ করেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসককে অনুরোধ করেছি। এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে মশারি বিলি করা হবে।” বালুরঘাটের তপনের জনপ্রতিনিধিরাও উদ্বিগ্ন। তপন পঞ্চায়েত সমিতি সহ সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, “অসুস্থদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে।” মৃতের সঙ্গী নজরুল ইসলাম বললেন, “রাতে তাঁবুতে ঘুমোতাম। কয়েকজনের ঘনঘন জ্বর হচ্ছিল। গত সোমবার তোফাজ্জল মারা যায়। আমরা ফিরে আসি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.