আইএনটিইউসি থেকে সিটু, বিধায়ক থেকে আধিকারিক, হিমুলে বিশেষজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে মন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন সকলেই। বুধবার হিমুল পরিদর্শনে যান রাজ্যের প্রাণি সম্পদ কল্যাণ মন্ত্রী নূরে আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি হিমুলের কর্মী, এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার এবং হিমুলের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা হিমুলে একজন দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ বিশেষজ্ঞকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগের দাবি জানান। প্রাণি সম্পদ কল্যাণ মন্ত্রী অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার হিমুলকে বাঁচাতে আগ্রহী। কী ভাবে সেটা সম্ভব তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মোট ১৭৪ জন কর্মী নিয়ে চলা হিমুল প্রচণ্ড লোকসানে চলছে। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন বাবদ খরচ ৩৪ লক্ষ টাকা। বিদ্যুতের খরচ ৩-৪ লক্ষ টাকা। প্রতি মাসে লোকসান ২২ লক্ষ টাকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজ্যের নয়া সরকার হিমুলকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব হিমুল পরিদর্শন করেছেন। হিমুলের বকেয়া মেটাতে রাজ্য সরকার ৪ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা দিয়েছে। কয়েকদিন আগেই শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও হিমুলে যান। রাজ্য সরকারের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, হিমুল পরিচালনার দায়িত্ব এসজেডিএ-র হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তার পরে এদিন প্রাণি সম্পদ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী নিজেই এদিন হিমুল পরিদর্শনে যাওয়ায় কর্মীরাও আশার আলো দেখছেন। পুরো প্ল্যান্ট ঘুরিয়ে দেখানোর পরে কর্মীরা নিজেদের মতামত মন্ত্রী সামনে পেশ করেন। হিমুলকে এসজেডিএ-র হাতে তুলে দেওয়া হবে কি না সেই ব্যাপারে প্রাণি সম্পদ কল্যাণ মন্ত্রী অবশ্য এই ব্যাপারে স্পষ্ট মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “আমরা হিমুলকে বাঁচাতে চাই। তবে কী ভাবে সেটা সম্ভব তা নিয়ে আগাম মন্তব্য করতে চাই না। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে যা বলার বলব।” মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক ওই বৈঠকে বলেন, “বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে হিমুলে ৩৪ জন প্রশাসন নিয়োগ করা হয়েছে। পরিকল্পনাহীনতার জন্যই প্রকল্পটির এই হাল। বিধানসভায় বলেছি, মুখ্যমন্ত্রীকেও বলেছি। এ বার হিমুলে একজন পূর্ণ সময়ের বিশেষজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগ করা হোক।” আইএনটিইউসি অনুমোদিত হিমুল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিচালন ব্যবস্থায় গলদ থাকায় হিমুলের এই হাল। দুগ্ধ সমবায় ফেডারেশন না কি প্রাণি সম্পদ, কোন দফতরের অধীনে হিমুল সেটাও স্পষ্ট নয়। একজন বিশেষজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগ করে এই সমস্ত সমস্যা দূর করা হোক।” সংস্থার দার্জিলিং চিলিং প্ল্যান্টের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উদয় প্রধান বলেন, “দুগ্ধ সমবায়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন মাত্র ১২টি সমবায় রয়েছে। বকেয়া মেটানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।” সিটু নেতা সুধাংশু তারুয়া বলেন, “রাজ্যের অন্য দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির তুলনায় হিমুল লোকসানের পরিমাণ কম। কিন্তু পরিচালনায় দক্ষ লোক আনা না-গেলে কোনও কাজই হবে না।” মন্ত্রী এদিন হিমুলের জমিতে গড়ে ওঠা পলি ক্লিনিক ভবনটি পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, দ্রুত এটি উদ্বোধন করে চালু করা হবে। দফতরের জটিয়াকালী এবং চার্চ রোডের দফতরে গিয়েও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, “গ্রামে দুগ্ধ সমবায়গুলি চাঙা করতে বলা হয়েছে। গোপালনেও উৎসাহ দিতে চিন্তাভাবনা চলছে।” |