শিলিগুড়িতে অফিস খুলে দশ মাসে টাকা দ্বিগুণ করার টোপ দিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে মুম্বই থেকে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ মুম্বই গিয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাঁকে শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম রামশাজীবন সাহেবরাম চৌধুরি। তাঁর বাড়ি নবি মুম্বই এলাকায়। তিনি এক সিনেমা নির্মাতা সংস্থার কর্ণধার। অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক বিভূতি খেসাং তাঁকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ধৃত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করানো হলে প্রতারিত বহু ব্যক্তি আদালতে হাজির হন। সব দেখেশুনে পুলিশের আশঙ্কা, অন্তত ১০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছে সংস্থাটি। এজেন্টদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এ দিন আদালতে ধৃত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমাদের সংস্থা ভোজপুরী এবং বাংলা সিনেমা তৈরি করে। আমি ছাড়াও আরও দু’জন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁরা কী করেছেন, আমি জানি না।”
বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই মাস নাগাদ ওই সংস্থাটি চোখ ধাঁধানো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে। শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ায় একটি অফিসও খোলা হয়। দশ মাসে টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাবে জেনে অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করেন। টাকা জমা দিলেই দশ মাস পরে প্রাপ্য টাকার পোস্ট ডেটেড চেকও দেওয়া হয় গ্রাহকদের। চালু করা হয় মাসিক প্রকল্প। তাতে প্রতি মাসে ১২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এজেন্ট নিয়োগ করে মোটা কমিশনেরও ব্যবস্থা করা হয়।
শিলিগুড়ির অবসরপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যাপক, রেল কর্মী, জীবনবিমা কর্মী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীরাও অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ আচমকা সংস্থাটি পাততাড়ি গোটায়। সংস্থার শিলিগুড়ি অফিসের কর্মীরাও গা ঢাকা দেন। এই ব্যাপারে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে শিলিগুড়ি থানায়। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরে বিনিয়োগকারীরা শিলিগুড়ি আদালতে মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি শিলিগুড়ি থানার আইসি-র দায়িত্ব নেন পিনাকী মজুমদার। তিনি চার সদস্যের একটি দলকে মুম্বইয়ে পাঠান। তারাই ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
ওই সংস্থায় টাকা বিনিয়োগ করাই নয়, পরিচিতদের বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়েছিলেন শিলিগুড়ির এক মোটর ভেহিক্যালস এজেন্ট বিনয় দত্ত। তিনি বলেন, “আমার পরিচিত অন্তত শ’খানেক লোক এই সংস্থায় অর্থ বিনিয়োগ করে। এখন সবাই আমাকেই ধরেছে। নানা জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করে শোধ দিতে হচ্ছে।” শিলিগুড়ি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিচিতেরাও ওই সংস্থায় টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। নন্দদুলালবাবু বলেন, “আমি এবং আমার পরিচিতেরা মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিলাম। সবই বিফলে গেল।” |