বাড়ছে নগরায়ণ, কমছে খাস কলকাতার জনবৃদ্ধি
রাজ্যে দ্রুত বাড়ছে নগরায়ণ। গত এক দশকে রাজ্যে শহরের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ। শহর যখন জন-বিস্ফোরণে ফেটে পড়ছে, গ্রামে তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিতান্তই কম। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্ট থেকে। তবে, ব্যতিক্রম কলকাতা। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। রিপোর্ট বলছে, কলকাতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৮৮%। সেই সমীক্ষা অবশ্য হয়েছে কলকাতা পুরসভা এলাকায়।
রিপোর্ট বলছে, ২০০১ সালে রাজ্যে শহরের সংখ্যা ছিল ৩৭৮। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯০৯। দশকওয়ারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের জনসংখ্যা বেড়েছে ৭.৭৩%। আর শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে ২৯.৯০%। রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। হাওড়া জেলার গ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কেবল থমকেই যায়নি, কমেছে ১৬.২২%। ওই জেলার বর্তমান জনসংখ্যা ৪৮ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৩৮। তার মধ্যে শহরাঞ্চলেই আছেন ৩০ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬৬৮ জন।
কী ভাবে বাড়ছে শহর?
জনগণনা দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহর ও গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি এবং হারের এই তারতম্যের মূল কারণ তিনটি।
এক) গত দশ বছরে বেশ কয়েকটি নতুন পুরসভার জন্ম।
দুই) বহু গ্রামের বিভিন্ন পুরসভায় যুক্ত হওয়া।
তিন) গ্রামাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক হারে শহরে চলে আসা।
গত দশ বছরে নতুন পুরসভা তৈরি হয়েছে হুগলির ডানকুনি, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা, বীরভূমের নলহাটি, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এবং জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে। উত্তর ২৪ পরগনার সল্টলেক সংলগ্ন পাঁচ নম্বর সেক্টরে তৈরি হয়েছে একটি মাত্র ‘নোটিফায়েড’ এলাকা ‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ’। এই সব নতুন পুরসভা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ওই এলাকা সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন গ্রামাঞ্চলের মানুষ উন্নত নাগরিক জীবনের টানে শহরে গিয়ে বাসা বেঁধেছেন। তার ফলেও গ্রামের জনসংখ্যায় টান ধরিয়ে বেড়েছে শহরের মানুষ।
আদমসুমারি রিপোর্টে শহরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘স্ট্যাটুটরি টাউন’ আর ‘সেনসাস টাউন’। যে এলাকা ‘নোটিফায়েড অথরিটি’, ‘ক্যান্টনমেন্ট’ বা পুরসভার অধীন, সেগুলিকে বলা হচ্ছে স্ট্যাটুটরি টাউন। আর যে সব পঞ্চায়েতভুক্ত গ্রামে ন্যূনতম পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব চারশো জন এবং যেখানে ৭৫ শতাংশ পুরুষ অ-কৃষি পেশায় যুক্ত এমন এলাকাকে বলা হচ্ছে সেনসাস টাউন।
জনগণনার রিপোর্টে রাজ্যের শহরাঞ্চলে জন-বিস্ফোরণের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা মূলত সেনসাস টাউনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলেই।
রাজ্যের জনগণনা দফতরের অধিকর্তা দীপক ঘোষ বলেন, “২০০১ সালে ২৫৫টি সেনসাস টাউন ছিল। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৮০টি। সেনসাস টাউনের বৈশিষ্ট্য হল, সেটি পঞ্চায়েত এলাকভুক্ত হলেও সেখানকার মানুষ মূলত শহরের সুযোগ-সুবিধার অনেকটাই ভোগ করে থাকেন। ওই এলাকার জনসংখ্যাকে এ বার শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা হিসেবে ধরা হয়েছে।”
প্রায় প্রত্যেক জেলাতেই বহু গ্রাম ক্রমেই চরিত্র হারিয়ে শহরে পরিণত হচ্ছে। রিপোর্ট থেকে তার কিছু নজির তুলে দেওয়া হল। হাওড়া জেলায় দশ বছর আগে সেনসাস টাউন ছিল ৫০টি, হয়েছে ১৩৫টি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৪ থেকে হয়েছে ১১১টি। উত্তর ২৪ পরগনায় ২০ থেকে ৭৮টি, মালদায় তিন থেকে ২৭টি। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, জেলায় জেলায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শহুরে জনসংখ্যা। জলপাইগুড়ি জেলায় গত এক দশকে গ্রামের জনসংখ্যা বেড়েছে ১.১০%, নদিয়া জেলায় ২.৯১% থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬.৭৬%, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪.২০% থেকে হয়েছে ৯২.২৩%। ওই সব জেলায় তাই শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে বিপুল হারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.