দেড়শো পদের ভোগ অন্নকূটে
জুঁই ফুলের মতো সাদা গোবিন্দভোগের সুসিদ্ধ অন্ন দিয়ে গড়া হয়েছে তিন ফুটের দেববিগ্রহ। শাক দিয়ে চোখ, ভাজা বাদাম দিয়ে ঠোঁট। লাল চেরি ফল দিয়ে টিপ। আর নানা সুখাদ্য দিয়ে বানানো হয়েছে ‘গিরিরাজ গোবর্ধনে’র সেই মূর্তি। সামনে থরে থরে সাজানো খাদ্য সম্ভার। পাত্রের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়ে যাবে। সেই সব খাদ্যের নানা রকম নাম। তাদের ইতিহাসও রয়েছে। তাদের পাক প্রণালীও বিভিন্ন প্রকার। সে সবই দেবভোগ্য।
নবদ্বীপের গানতলার বলদেব মন্দিরে একশো বছরের বেশি সময় ধরে এই ভাবেই অন্নকূট উৎসব পালিত হয়। স্মরণ করা হয় বৃন্দাবনের সেই পাহাড় গোবর্ধনকে। বৈষ্ণব শাস্ত্রে সুবিখ্যাত হয়ে রয়েছে সেই কাহিনি, স্বয়ং কৃষ্ণ এই পর্বতকে ধারণ করেছিলেন গোপজনদের রক্ষা করবেন বলে। বৈষ্ণবশাস্ত্রচর্চার বিভিন্ন অঙ্গে সে কথা রয়ে গিয়েছে নানা ভাবে। কাহিনির সেই মালায় এক সময়ে গোবর্ধনও চরিত্র হয়ে ওঠেন। বৈষ্ণবদের কাছে তিনিও পূজ্য। অন্নকূট আসলে সুখাদ্যের উৎসব। প্রশস্ত নাটমন্দিরে বালদেব জিউয়ের বিগ্রহের সামনে অন্ন দিয়ে এই মহোৎসব বৈষ্ণবদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই মন্দিরের কিশোর গোস্বামী বলেন, “১৫ রকমের শাক, ৭ রকমের ডাল, যার মধ্যে মুগডাল, ছোলার ডাল যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে তিতোর ডাল, ঝাল ডাল বা টকের ডাল। অন্ন নানা রকমের। সাধারণ অন্ন, পুষ্পান্ন, পরমান্ন, ঘৃতান্ন। তরকারি যত রকমের সম্ভব। কম করে ৪০টি পদ। আর রয়েছে নানা ধরনের চাটনি, আচার। এরপরে মিষ্টি এবং ঘরে তৈরি লুচি, পুরি, কচুরি, নিমকি, মালপোয়া, খাজা, গজা। অন্নকূটের নিয়ম হল, যত রকম সম্ভব খাবার নিবেদন করা। এই আয়োজন ছিল নবদ্বীপের অন্য মন্দিরেও। গোবিন্দবাড়ি, রানির ঘাটে রাধারানির মন্দির, রাধারমণ বাগ সমাজবাড়ি, জন্মস্থান আশ্রমসর্বত্রই অন্নকূটের সাড়ম্বর আয়োজন হয়। রাধারানি মন্দিরে ৫৬ রকম ভোগ ৫৬টি বড় থালা বা ‘পরাত’-এ দিয়ে নিবেদন করা হয় রাধাগোবিন্দকে। ওই মন্দিরের মল্লিকা দাসী বলেন, “এ বার ৫৬ ভোগের আড়াইশোটি পরাত হয়েছে। আর নিতাই গৌরের জন্য একশো রকম পদ দিয়ে রাজভোগ করা হয়েছে। এলাকার তিন হাজার মানুষ অন্নকূটের দুপুরে এখানে প্রসাদ পান।” সমাজবাড়িতেও অন্নকূটের প্রসাদ পাওয়ার জন্য সকাল থেকে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এই সমাজবাড়ির পূর্ণদাসবাবাজি বলেন, “শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বৃন্দাবনের মানুষদের বলেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো বন্ধ করে গিরিরাজ গোবর্ধনকে পুজো দিতে। তাতেই রেগে গিয়ে ইন্দ্র যখন ঝড়-বৃষ্টিতে বৃন্দাবন ধ্বংস করে দিতে চাইলেন, তখন ওই গিরিরাজকেই আঙুলে তুলে তার নীচে আশ্রয় নিতে বলেছিলেন ব্রজধামবাসীদের। ব্রজধামবাসীরা। সেই পৌরাণিক ভাবনাকেই তুলে ধরা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.