সব ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার দুপুরে চিরাগ ইউনাইটেড কেরলের টিডি হিসাবে রিজার্ভ বেঞ্চে বসতেন সুব্রত ভট্টাচার্য। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে সব। আই লিগে সুব্রতর দলের রং সবুজ-মেরুন।
চিরাগ কেরলের স্পনসর কৌস্তুভ রায়ের ইচ্ছা ছিল সুব্রতকেই টিডি করবেন কেরলের ক্লাবে। শেষ পর্যন্ত যা হয়নি। ফেড কাপের ব্যর্থতার বলি হয়েছেন চিরাগের কোচ কুন্নিকৃষ্ণন। তাঁর বদলি এসেছেন শ্রীলঙ্কান পাকির আলি। তুলনামূলক ভাবে অনভিজ্ঞ চিরাগের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের টগবগানি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর মোহনবাগানও। যা ধরা পড়ল কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই ম্যাচটা আমরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলব”। বৃহস্পতিবার অনুশীলন শেষে এ দিনও প্রশান্তকেই পাঠিয়েছিলেন সুব্রত। তবে বেঙ্গালুরুতে হ্যালকে ১-০ হারিয়ে আসা চিরাগকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ মোহনবাগান শিবির।
এ দিকে এই ম্যাচ ঘিরেই এক অভিনব ব্যাপার হয়ে গেল। ম্যাচটির আয়োজক মোহনবাগান, আইএফএ নয়। তাই ম্যাচের আগের দিনের ম্যানেজারদের মিটিংও হল মোহনবাগান তাঁবুতে। যা সাধারণত হয় আইএফএ অফিসে।
বৃহস্পতিবার প্রথম দল নিয়ে অনুশীলনের ছকও পাল্টে ফেললেন সুব্রত। কিছু সিচুয়েশন মুভ আর সেটপিস নিয়েই সাজিয়েছিলেন তাঁর অনুশীলন। প্রথমে তিন জনের বিরুদ্ধে দু’জন ডিফেন্ডার। তার পর একে একে দু’পক্ষেই একজন করে বাড়াতে লাগলেন। রক্ষণ ও ফরোয়ার্ড লাইন একই থাকছে সুব্রতর। বদল যা হওয়ার হতে পারে মাঝমাঠের দুটি পজিশনেই। হাদসন এবং জুয়েল রাজা থাকছেনই। বাকি দুটি জায়গায় মণীশ মৈথানি ও গৌরাঙ্গ দত্তের জায়গায় আসতে পারেন ব্যারেটো ও প্রদীপ। |
প্রশান্ত বলছিলেন, “তিন পয়েন্টই লক্ষ্য এই ম্যাচে। তাই শুরুর দিকেই গোল চাই।” পৈলানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের খতিয়ান দেখলে পরিষ্কার, অনভিজ্ঞ তরুণ দলের অব্যর্থ ওষুধ ব্যারেটো। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন শেষে যিনি ময়দানের ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের সঙ্গে সময় কাটাতে গেলেন। আর ব্যারেটোকে নিতে তাঁবুতে হাজির হলেন ব্যারেটো পত্নী আর ছোট্ট ছেলে ছাড়াও ডু এবং এডমিলসন। শুধু অধিনায়কের ছেলেই নয়, বৃহস্পতিবার বেলায় তাঁবুতে এসে পড়লেন টিডি-পুত্র সাহেবও। বাবা সুব্রতর সঙ্গে সাহেবের ফটোসেশন ছিল মোহনবাগান মাঠে।
টিডির মতো কোনও ফুটবলারই এ দিন আসেননি সাংবাদিকদের সামনে। তবে সব মিলিয়ে ম্যাচের আগের দিন মেজাজটা বেশ হালকা। অনুশীলনেও সুনীল-ওডাফার মধ্যে কোনও চাপ দেখা গেল না। তবে ফুরসত ছিল না ডিফেন্ডারদের। নবি, আনোয়ার, কিংশুক, ধনরাজন, সৌরভ চক্রবর্তীদের ঠিক কোন পজিশনে থাকা উচিত, কী ভাবে দাঁড়ানো উচিত সব কিছু খুঁটিয়ে বোঝাচ্ছিলেন সুব্রত। ফ্রি-কিক মারা এবং রক্ষণ করাও শেখালেন অনেকটা সময় নিয়েই।
শ্রীলঙ্কার বাংলা জানা কোচ পাকির আলি সচেতন মোহনবাগানের শক্তি সম্পর্কে। ওডাফা-ব্যারেটোকে চেনেন অভিজ্ঞ, ভাল ফুটবলার হিসাবেই। তার সঙ্গে জানেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্সের দুর্বলতাও। পাকির পরিষ্কার বাংলাতেই সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে যাব”। যার জন্য তাঁর ভরসা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার মাইকেল মাত্রিসিয়ানি। ডিফেন্সেও রয়েছে দুই বিদেশি। ঘানার বোকায়ে এবং জিসা। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকছে অভিজ্ঞ অজয়নের পায়ে।
আশির দশকের প্রায় গোটাটাই ও পার বাংলার আবাহনী চক্রে খেলেছেন পাকির। খেলেন ভাস্কোতেও। পরে কোচিংও করিয়েছেন ঢাকায়। আট নম্বরে থাকা শেখ জামালকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন গত বছরেই। কিন্তু এ পার বাংলায় চিরাগ কোচকে প্রথম মাঠে নামতে হচ্ছে বড় পরীক্ষা দিতে। |