তাজের রাস্তায় ‘অন্য পৃথিবী’ দেখলেন বিশ্বসেরা
তাঁর উপলব্ধি, “বান্ধবীকে কখনও কাজের জায়গায় নিয়ে যেতে নেই!” তাই বান্ধবী হানাকে কখনও দেখা যায় না ফর্মুলা ওয়ানের কনিষ্ঠতম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কোনও রেসে।
নিজে আজ পর্যন্ত যে গাড়িগুলো চালিয়েছেন, প্রত্যেকটার একটা করে নাম দিয়েছেন। যেমন ২০০৮-এ চালাতেন ‘জুলি’। ২০০৯-এর দুই গাড়ির নাম ছিল ‘কেট’ আর ‘কেটস ডার্টি সিস্টার’। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন ‘লাশাস লিজ’ আর র্যান্ডি ম্যান্ডি’ চালিয়ে। এ বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ‘কিঙ্কি কাইলি’তে সওয়ার হয়ে।
মানুষটাকে একটু অন্য রকম লাগছে? একটু অন্য রকমই তিনি। না হলে কেউ তাজমহল দেখে ফিরে এসে বলেন, “তাজের থেকে তিন-তিন ছ’ঘণ্টার ড্রাইভটাই আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছে।”
তিনি, ইতিমধ্যেই ফর্মুলা ওয়ানের এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পকেটস্থ করে ফেলা চব্বিশ বছরের মেগা তারকা সেবাস্তিয়ান ভেটেল।
টায়ার পরীক্ষায় ব্যস্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভেটেল।
এনার্জি ড্রিঙ্কে চুমুক দিতে দিতে বৃহস্পতিবার বিকালে বুদ্ধ সার্কিটে বসে শোনাচ্ছিলেন তাঁর তাজ ভ্রমণের বৃত্তান্ত। সাংবাদিকদের নিয়ে বসেছিলেন রেড বুল দলের কাফেতে। মেজাজটা একেবারে বৈঠকী আড্ডার। ছোট্টখাট্ট জার্মান ছেলের মুখটা এত্তটুকু। তাতে সর্বক্ষণ লেগে রয়েছে হাল্কা একটা হাসি। সদ্যপ্রয়াত মোটো জি পি চালক মার্কো সিমোনসেলি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সেটা মিলিয়ে গেল ঠিকই। কিন্তু প্রসঙ্গ পাল্টাতেই সেটা আবার হাজির যথাস্থানে।
ভারতীয় গ্রাঁ প্রি-র আয়োজক জে পি গোষ্ঠী ফর্মুলা ওয়ান তারকাদের হেলিকপ্টারে আগরা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তাজমহল দেখিয়ে ফিরিয়ে আনার ব্যস্থা রেখেছে। তাজ অনেকেই দেখতে চান। কিন্তু সময়ের অভাবে যাওয়া হচ্ছে না বা রেসের পরে যাওয়ার কথা ভেবে রেখেছেন। ভেটেল কিন্তু বুধবার ঠিক সময় বের করে নিয়েছিলেন। আর আকাশ পথে নয়, গাড়ি চড়েই গিয়েছিলেন। আজ বললেন, “ভারতের মানুষকে কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিলাম। এই গাড়ি চড়াটা আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।” তার পর একটু থেমে বললেন, “আমরা ইউরোপের লোকেরা জীবনের অনেক কিছুকে খুব সহজলভ্য ভেবে নিই। এখানে এসে বুঝলাম পৃথিবীর একটা অন্য চেহারাও আছে। সেটা ভাল বা মন্দ নয়, খালি অন্য রকম। দারিদ্রের মধ্যেও হাসা যায়, জীবনকে উপভোগ করা যায়, সেটা শিখলাম।”
ফর্মুলা ওয়ানের প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফের্নান্দো আলোন্সো ব্যস্ত পোলিও খাওয়াতে। নয়াদিল্লিতে।
কেমন লাগল তাজ? “তাজ দেখাটা তো পর্যটক হিসাবে সবাই করে, ভেরি টুরিস্টি থিং টু ডু। স্বপ্নের মতো। তবু আমাকে অনেক বেশি টেনেছে তাজ পর্যন্ত যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা।” রাস্তায় মানুষের ভিড়, অটোয়-অটোয় ধাক্কা, নিয়মের ধার না ধরা যাকে “সংগঠিত অব্যবস্থা” বলে মুচকি হেসে ভেটেল যোগ করলেন, “কিন্তু সেটাই দেখলাম দারুণ একটা সিস্টেমের মতো কাজ করে এখানে!” রাস্তায় অটোয় অটোয় ধাক্কা দেখে শিউরে ওঠার বদলে মজা লেগেছে। অটোকে ভেটেল বলেন ‘টুক টুক’। “ধাক্কার পরেও দু’টো টুক টুক যে ভাবে সরে গেল, দারুণ ইম্প্রেসিভ!” ভারতে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স বের করার গোপন রহস্যও জানা হয়ে গিয়েছেন এক দিনেই। হাসি লুকোনর কোনও রকম চেষ্টা না করে বলছিলেন, “আমার গাড়ির ড্রাইভার বলে দিয়েছে, একটু টাকা খরচ করলেই লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া যাবে। ভাবছি একটা করিয়ে নিয়ে যাব।”
ছুতোর মিস্ত্রির ছেলে। ভেটেলের নিজের কথাতেই তিনি বড় হয়েছেন তিন মাইকেলকে আদর্শ করে, “মাইকেল শুমাখার, মাইকেল জ্যাকসন আর মাইকেল জর্ডন।” শুমাখারের সঙ্গে তাঁর ফর্মুলা ওয়ান উত্থানের অদ্ভূত মিল। ফর্মুলা ওয়ানে আত্মপ্রকাশের বছরেই সাড়া ফেলেছিলেন ভেটেল। ২০০৬-এ মাত্র ১৯ বছরে তুর্কি গ্রাঁ প্রিতে নেমে। পরের বছর সব থেকে কম বয়সি চালক হিসাবে পয়েন্ট তোলেন। ২০০৮-এ হন সব থেকে কম বয়সি রেস জয়ী। আর গত বছর ফর্মুলা ওয়ানের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে এ বছরে ইতিমধ্যেই খেতাব ধরে রাখা নিশ্চিত করে ফেলেছেন। দল রেড বুলও চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে।
অটোরিকশায় বাটন।
ভারতীয় রেস নিয়ে তা হলে তাঁর আগ্রহ আর কতটুকু? ভেটেল বলছেন “একশো ভাগ”। এ দিন সকাল সাড়ে আটটায় বুদ্ধ সার্কিট পৌঁছে নিজে পায়ে হেঁটে দেখেছেন ৫.১৪ কিলোমিটার ট্র্যাকের সবটুকু। এবং বলছেন, “সার্কিটটাই আমাদের চালকদের কাছে সব থেকে আগ্রহের জায়গা। যা দেখলাম, এখনই গাড়িতে লাফিয়ে উঠে বসে রেসে নামার জন্য আমি তৈরি।” শুনেছেন সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেটা তাতাচ্ছে। “ভরা গ্যালারির সামনে রেস করার আনন্দটাই আলাদা। ভারতে ফর্মুলা ওয়ান নিয়ে এত উৎসাহ। অসাধারণ লাগছে।”
নিজে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেওয়ার পরে এখন টিমমেট মার্ক ওয়েবারকে রানার্স আপ হতে দেখতে চান। “তা হলে আমাদের শেষটা দুর্দান্ত হবে।”
অস্ট্রেলীয় ওয়েবার আবার ভারতে আসার আগে ভারত সম্পর্কে টিপস নিয়ে এসেছেন স্টিভ ওয়ের কাছ থেকে। ভারতে আসা নিয়ে তাঁর বাড়তি উৎসাহের জায়গা ক্রিকেট। সচিন তেন্ডুলকর আসছেন শুনে বেশ উৎসাহী।
ফোর্স ইন্ডিয়ার গাড়িতে রা ওয়ান।
তবে দুই রেড বুল চালকেরই মন একটু খারাপ। গত তেইশ তারিখ রেসিং দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদের বন্ধু, মটো জি পি চালক মার্কো সিমোনসেলি।
বুদ্ধ সার্কিটের উৎসব বাসরে, সেটাই একমাত্র করুণ সুর।

ছবি: রয়টার্স, এএফপি ও পিটিআই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.