সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ফের জোর কদমে বালি তোলা চলছে অ্যানিকেতের কাছ থেকে। কাঁসাই নদীর অ্যানিকেত ভেঙে যাওয়ায় সেচের জল থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন ৫টি ব্লকের মানুষ। খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শহর পানীয় জলের সঙ্কটেও পড়ছে। শুধু তাই নয়, বার বার অ্যানিকেত সংস্কারে কয়েক কোটি টাকা খরচও হচ্ছে সরকারের। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই অবৈধ ভাবে বালি তোলা যাবে না বলে নির্দেশ জারি হয়। এমনকী বৈধ ভাবে, সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বালি তুলতে হলেও অ্যানিকেতের দু’দিকে ২০০ মিটার পর্যন্ত কেউ বালি তুলতে পারবে না বলে নির্দেশিকা জারি হয়। প্রশাসনের সেই নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই প্রতিদিন বালি তোলার কাজ চলছে। অভিযোগ, বালি তোলার কথা প্রশাসনের সব মহলেরই জানা। কিন্তু কয়েক জন কর্মী-অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে বালি কারবারিদের। ফলে বালি তোলা বন্ধ হয়নি। |
তল্লাশির আগেই খবর পেয়ে অবৈধ ব্যবসায়ারী সরে পড়েন। সরকারি রাজস্ব দেওয়া গুটিকয় ব্যবসায়ী সরকারি আধিকারিকদের দেখিয়ে দেন, তাঁরা রাজস্ব দিয়েই বালি তুলছেন। প্রশাসনও হাত গুটিয়ে নেয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস যেমন বলেন, “দু’একবার তল্লাশি করা হয়েছে। কিন্তু ওখানে অনেকেই সরকারি রাজস্ব দিয়েই বালি তোলে বলে দেখা গিয়েছে।” কিন্তু বালি তোলা হচ্ছে তো অ্যানিকেত থেকে ২০০ মিটারের মধ্যেইসেটা তো হওয়ার কথা নয়? অতিরিক্ত জেলাশাসকের রুটিন জবাব, “ফের তল্লাশি চালানো হবে।”
প্রশাসন প্রথম থেকেই অবৈধ বালি তোলা যাবে না বলে জানালেও কাজে তার কোনও প্রমাণ মিলছে না। ফলে বালি তোলার ক্ষেত্রে বড় বড় যন্ত্র পর্যন্ত ব্যবহার হচ্ছে। যন্ত্রে বালি তোলায় নদীখাতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে। নদীতে জল থাকার সময়ে স্নান করতে নেমে সেই গর্তে তলিয়ে গিয়েছেন অনেকেই। মৃত্যুর ঘটনার পরের ক’দিনে যতটুকু যা হইচই। তার পর ফের সব যে-কে-সেই। অথচ অ্যানিকেতের গুরুত্ব অপরিসীম। অ্যানিকেত থাকায় ভরা গরমেও নদীতে সামান্য জল থাকে। যে জলে খড়্গপুর গ্রামীণ, পিংলা, ডেবরা, কেশপুর ও মেদিনীপুর সদর ব্লকের কিছু অংশে সেচের কাজ চলে। ফসল বাঁচে। আবার মেদিনীপুর-খড়্গপুরের পানীয় জলের চাহিদাও মেটে। নদীর জল শুকিয়ে গেলে জলস্তর নেমে যাবে। তখন দুই শহরই তীব্র জল-সঙ্কটে পড়বে। অবৈধ বালি তোলার জেরে বার বার অ্যানিকেত ভাঙলে সরকারেরও কোটি কোটি টাকা খরচ। সব জেনেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর প্রশাসনও জেগে ঘুমোচ্ছে। |