মাপা হচ্ছে দূষণ
রাতেও বোমা-পটকায় কেঁপে গেল বেনাচিতি
নিয়ন্ত্রণ ছিল অনেকটাই। বর্ধমান শহর থেকে আসানসোল-রানিগঞ্জ, বোমা-পটকার দৌরাত্ম তেমন ছিল না। কিন্তু পুলিশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঝরাত পর্যম্ত দেদার শব্দবাজি ফাটল দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে। পাশাপাশি, হরেক রকমের বাজি পোড়ানোর জেরে দূষণেও ভারী হল ইস্পাতনগরীর বাতাস।
শব্দদানবের দাপাদাপি রুখতে এ বার অনেক আগে থেকেই যৌথ ভাবে মাঠে নেমেছিল পরিবেশ দফতর ও পুলিশ। দুর্গাপুরের বিধাননগর থেকে সাত কেজি চকোলেট বোমা ও দু’শো প্যাকেট কালীপটকা, মামরা বাজার থেকে ৩৬ প্যাকেট কালীপটকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর পরেই অন্য বাজারগুলি থেকে শব্দবাজি উধাও হয়ে যায়। বেনাচিতি ও চণ্ডীদাস বাজারে কোনও শব্দবাজি খুঁজে পায়নি বলেও সে সময়ে দাবি করে অভিযানকারী দল।
কিন্তু বুধবার রাত দেড়টা পর্যন্ত লাগাতার শব্দবাজি ফাটল সেই বেনাচিতির নতুনপল্লি, নবপল্লির মতো বেশ কিছু এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামসুন্দর বণিকের আক্ষেপ, “রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত টানা বাজি ফেটেছে। তার পরে সব মোটামুটি চুপচাপ দেখে বিছানায় যাই। হঠাৎ রাত সওয়া ১টা নাগাদ ফের বিকট শব্দে চমকে জেগে উঠি। বোমার আওয়াজে জানলার কাচও কাঁপছিল।”
সন্ধ্যার পর থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে বোমা-পটকা ফেটেছে বিধাননগর ও সিটি সেন্টার এলাকাতেও। তবে তা বেনাচিতির ধার-কাছ দিয়েও যায় না। আসানসোল-দুর্গাপুরের অ্যাডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শুভঙ্কর সিংহ সরকার অবশ্য দাবি করেন, “শহরের সর্বত্রই পরিস্থিতি ভাল ছিল। বেনাচিতিতেও অন্য বারের তুলনায় যথেষ্ট কম শব্দবাজি ফেটেছে। পুলিশ সন্ধ্যা থেকে বহু বার ওখানে গিয়েছে। কিছু শব্দবাজি বাজেয়াপ্তও করা হয়। তার পরেও চোরাগোপ্তা কিছু ফেটেছে বলে খবর পেয়েছি। ওই এলাকায় বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে।”
পরিবেশ দফতরের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট প্রবীরকুমার বাড়ৈয়েরও দাবি, কোনও অভিযোগ এলেই তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। শব্দের মাত্রা মাপার যন্ত্র নিয়ে দু’টি দল সারারাত শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “সীমিত পরিকাঠামোয় সর্বদা শহরের সর্বত্র নজরদারি করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহানন্দা কলোনি থেকে জোরে মাইক বাজানোরও অভিযোগ এসেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
তবে শুধু শব্দবাজি নয়, সার্বিক ভাবে আতসবাজির ধাক্কা পরিবেশের উপরে কতটা, তা-ও মাপার চেষ্টা করেছেন প্রদীপবাবুরা। ২০০৯ সালের দীপাবলি থেকেই এ ধরনের পর্যবেক্ষণ শুরু করেছিল দুর্গাপুর পরিবেশ দফতর। এ বারও বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, সালফার-ডাই-অক্সাইড ও অন্য উপাদান মাপা হয়। শিল্পাঞ্চলের অঙ্গদপুর এবং বি সি রায় রোডে, বাণিজ্য এলাকায় বেনাচিতি ও বসতি এলাকা বিধাননগরের পরিমাপ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে। কাজ চলেছে ২৪ ঘণ্টা ধরে। সিটি সেন্টারে সিধো-কানহু স্টেডিয়ামে বসানো স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ যন্ত্র থেকেও নিয়মিত তথ্য এসেছে।
এখন তথ্য বিশ্লেষণ চলছে। তবে প্রাথমিক হিসেব বলছে, বেনাচিতির বাতাসে সোমবার যেখানে সালফার-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৮.৭ মাইক্রোগ্রাম , বুধবার রাতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.৩-এ। বি সি রায় রোডে পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১২.২ ও ২৪.৪, বিধাননগরে ৬.২ ও ২০.২ এবং অঙ্গদপুরে ৯.৮ ও ১৪.৮ মাইক্রোগ্রাম। বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইড বাড়ার কারণ মূলত বাজি। এবং পরিসংখ্যানই বলছে, সবচেয়ে বেশি বাজি পুড়েছে বেনাচিতিতে। প্রবীরবাবুর মতে, “শব্দবাজি এত কম ফাটার পরেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। পরিবেশের স্বার্থে যে কোনও রকম বাজি পোড়ানো থেকেই বিরত থাকা উচিত।” সোমবার ও বুধবারের এই তুলনামূলক হিসাবে আরও দেখা গিয়েছে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণও বেনাচিতি, লেনিন সরণি ও বিধাননগরে বেশ বেড়েছে। পরিবেশ দফতরের এক আধিকারিকের আশঙ্কা, উৎসবের মরসুমে কিছু দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানা দূষণ নিরোধক যন্ত্র ব্যবহারে ফাঁকি দেওয়ায় এই পরিণতি হয়ে থাকতে পারে। তবে সে দিকে নজর দেওয়া হয়নি কেন, কোনও সংস্থা নিয়ম ভেঙে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.