ব্যতিক্রম ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল।
এ ছাড়া, কালীপুজোর রাতে দুই ২৪ পরগনায় শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল হল পুলিশ-প্রশাসন। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর মহকুমায় যে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে চেষ্টার খামতি ছিল, এমনটা নয়। কিন্তু পুলিশের নজর এড়িয়ে যেমন দেদার বিক্রি হয়েছে শব্দবাজি, তেমনই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অনর্গল ফেটেছে বিভিন্ন এলাকায়। বাতাসে বারুদের গন্ধ এতটাই তীব্র ছিল যে গভীর রাতেও মুখে কাপড় চাপা দিয়ে পথ চলতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকে। শব্দবাজির আওয়াজের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ব্যারাকপুরের এসডিপিও অমিতকুমার সিংহ জানিয়েছেন, শব্দবাজি ফেটেছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন অভিযোগ করেছেন। শিল্পাঞ্চলের সব থানার অফিসারদের সতর্ক করা হয়েছে শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
বুধবার রাতে টিটাগড় থানা এলাকার ঘুষিপাড়ায় দেদার শব্দবাজি ফাটছে এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ যায়। হাতেনাতে চার জনকে ধরা হয়। কিন্তু তার পরেই বেশ কিছু লোকজন পুলিশকর্মীদের ঘিরে ধরেন। অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করে। আটক করা হয় বেশ কিছু শব্দবাজি। ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শব্দবাজি ফাটাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ইছাপুরের এক বাসিন্দা। শব্দে দাপটে অসুস্থ কয়েক জনের চিকিৎসাও করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে টিটাগড় বাজার থেকে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। শব্দবাজি ফাটানোর সময়ে শুধু ওই থানা এলাকা থেকেই ১১ জনকে ধরা হয়। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাকি থানাগুলির চিত্রও অনেকটা একই রকম। হালিশহরের বাসিন্দা শিবানী চক্রবর্তী বলেন, “কালীপুজোর রাতে পরিবারের সকলকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। বীজপুরের রাস্তায় কিছু যুবক শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল। বিশেষত কোনও গাড়ই বা মোটরবাইক গেলে তার নীচে ছুড়ে দিচ্ছিল বাজি। কালীপুজোয় শব্দবাজির আতঙ্কটা এ বারেও কাটল না।” এই ঘটনা নৈহাটি, জগদ্দল, নোয়াপাড়াসর্বত্রই ঘটেছে। নৈহাটি থানা সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, এলাকার ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলিতে নজরদারি ছিল। তার বাইরে কোথাও কোথাও শব্দবাজি ফেটেছে। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না জানানোয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
কালীপুজোর বেশ কিছু দিন আগে এ বার বসিরহাট মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। শব্দবাজি বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তার ফল, এ বার বুঝতে পেরেছেন বসিরহাট মহকুমার বাসিন্দারা। অন্যান্য বারের চেয়ে কালীপুজোর রাতে এ বার মহকুমায় কম শব্দবাজি ফেটেছে। এসডিপিও (বসিরহাট) আনন্দ সরকার জানিয়েছেন, শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। সর্বত্র পুলিশি টহল ছিল।
বনগাঁ মহকুমাতেও অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার কম শব্দবাজি ফেটেছে। প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপটে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠত হাবরা-অশোকনগর এলাকার বাসিন্দাদের। বহু বাসিন্দাই বাড়ির বাইরে বেরোতেন না। তবে, এ বার পুলিশি টহলদারি ছিল সারারাতই। মানুষজনকে রাস্তায় বেরোতেও দেখা গিয়েছে। শব্দবাজির কানফাটানো আওয়াজও সে ভাবে পাওয়া যায়নি।
শব্দবাজির দাপট কম ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে প্রায় ১৫০ কেজি শব্দবাজি উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানিয়েছেন, জেলার চারটি মহকুমায় রাতভর নজরদারি চালানো হয়। তবে, পুলিশি নজরদারির ফাঁকেই ক্যানিংয়ের গোলকুঠিপাড়া, দিঘিরপাড়, ধলিরবাটি, তালদি-সহ কয়েকটি এলাকায় দেদার শব্দবাজি ফেটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমায় বুধবার সন্ধ্যার দিকে কিছু বোমা-পটকার আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের বাজি ব্যবসায়ী বিমল মান্না বলেন, “পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এ বার শব্দবাজি বিক্রি করিনি। শব্দবাজির ক্রেতাও অনেক কমে গিয়েছে। বেশি বিক্রি হয়েছে আতসবাজিই।” |