হুগলির বিখ্যাত বারোয়ারি কালীপুজোগুলির অন্যতম শ্রীরামপুরের বল্লভপুর সর্বজনীন শ্মশানকালী পুজো। বুধবার, কালীপুজোর সকাল থেকেই ভক্তদের ঢল নেমেছিল এখানে। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়। মনস্কামনা পুরণের জন্য বহু মানুষ সকালে দন্ডী খাটেন। মহা সমারোহে দেবীর পুজো হয়।
উদ্যোক্তাদের দাবি, বুধবার অন্তত ২৫ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। বৃহস্পতিবারও অস্যংখ্য মানুষ পুজো দিতে এবং প্রতিমা দর্শন করতে আসেন। পুজো এ বার ১৬২ বছরে পড়েছে। মায়ের অঙ্গ জুড়ে সোনার গয়না। গলায় অগুণতি মালা। বুধবার উদ্যোক্তাদের তরফে বেলুড় মঠের স্বামী হিতাকামানন্দের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় বন্যা পীড়িতদের দেওয়ার জন্য। প্রতি বছর হাজার খানেক শাড়ি প্রণামী হিসেবে মা’কে দেন ভক্তরা। সেই শাড়ি বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, সারা বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করেন সংগঠকরা। দুঃস্থদের সাহায্য করা হয়।
বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে জড়িত আছে বাঁশবেড়িয়া রাজবংশের ইতিহাস। মন্দিরটি পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দেখভাল করে। মন্দিরের অসাধারণ নির্মাণশৈলী এবং দেবী হংসেশ্বরীকে দর্শন করতে বছরভরই ভক্তদের ভিড় থাকে। বলা বাহুল্য কালীপুজোর সময় তা বহুগুণ বেড়ে যায়।
|
শ্রীরামপুরের বল্লভপুর
শ্মশানকালী। নিজস্ব চিত্র |
শেওড়াফুলির নিস্তারিণী কালীবাড়ি, পাণ্ডুয়ার সিমলাগড় কালীমন্দির, মহানাদের ব্রহ্মময়ী কালীমন্দিরেও ধুমধাম করে পুজো হয়। এই সমস্ত জায়গাতেও হাজারো মানুষ ভিড় করেন পুজো দেখতে। নিস্তারিণী কালীবাড়িতে এখনও বলির প্রথা চালু রয়েছে। পাণ্ডুয়া, মগরায় প্রচুর সর্বজনীন কালীপুজো হয়। জিটি রোডের ধারে, গ্রামের ভিতরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সেই সব পুজো। সুদৃশ্য মণ্ডপ, নজরকাড়া প্রতিমা দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে উপছে পড়ছে ভিড়। আলোর বৈচিত্র আর আতসবাজির রোশনাই যেন আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেই পরিবেশে।
আরামবাগের বাদলকোনা গ্রামের ‘রক্ষাকালী’ ছিলেন সেখানকার উপক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের। কিন্তু তাঁদের আদিদেবতা ‘মা সিংহবাহিনী’ স্বপ্নাদেশ দিয়ে অন্য মূর্তি পুজো নিষিদ্ধ করেন। তার পরেই রক্ষাকালীকে কিছু জমিজমা-সহ গ্রামের বর্গক্ষত্রিয়দের হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের সাল-তারিখ কোনও পক্ষেরই জানা নেই। তবে পুজো তিন শতাধিক বছরের পুরনো বলে তাঁরা জানেন। বর্গক্ষত্রিয় সেবাইতরা পুজোর শুরু থেকে আরম্ভ করে এক সপ্তাহ নখ-চুল-দাঁড়ি কাটেন না। প্রতিমা বিসর্জনও হয় এক সপ্তাহ পরে। বংশানুক্রমে এই রীতি চলে আসছে বলে জানালেন সেবাইত রণজিৎ সাঁরা, প্রভাস দলুইরা।
শোনা যায়, জাগ্রত বলে প্রসিদ্ধি আছে দেবীর। পুজোর প্রধান আকর্ষণ পুজারির ঘট তোলা। অমাবস্যা পড়লে ঘট তোলার দৃশ্য চাক্ষুষ করতে হাজারো মানুষের জমায়েত হয়। মেলা বসে। বেদী থেকে ৫০০ গজ দূরের পুকুর থেকে পিতলের ঘটে জল তোলেন পুরোহিত। মাথার উপরে ঘট বসিয়ে তাতে হাত না লাগিয়ে নৃত্যরত অবস্থায় মন্দিরে পৌঁছতে হয়। হাত না লাগিয়েই বেদিতে রাখা হয় ঘট। মানুষের বিশ্বাস, দেবীর অদৃশ্য ‘চণ্ড-চামুণ্ডা’রাই ঘট সামলান। শতাধিক পাঁঠা বলি হয়। বাজি, আলো, সাত-আট করমের বাদ্যযন্ত্র-সহ পুজোর সমস্ত খরচ বহন করেন মানতকারীরা। মন্দির চত্বরে দু’দিন ধরে পালা করেন গ্রামের যাত্রাদল। বুধবার থেকে গ্রামবাসীরা ভিড় জমিয়েছিলেন এই পুজো দেখতে। ‘পাগলদের সুস্থ করে দেওয়া’র জন্য বিখ্যাত আরামবাগের তিরোলের ক্ষ্যাপাকালী। সেবাইত জমিদার চক্রবর্তী পরিবারের দাবি, ৭০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই পুজো। আরামবাগ শহর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে তিরোল গ্রামের এই দেবীর মাহাত্ম্য রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে লখনউ, বিহার এমনকী বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার এবং শনিবার ‘পাগল’দের হাতে বালা পরানো হয়। পুজো দেখতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে মানুষের ঢল নেমেছে। গোঘাটের মথুরা গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালী প্রতিমা দেখতেও বহু মানুষ ভিড় করেন। |