|
|
|
|
আফস্পা প্রত্যাহার করা নিয়ে ওমর-কংগ্রেস মতান্তর প্রকাশ্যে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কাশ্মীরের কিছু এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহার নিয়ে ওমর আবদুল্লা ও কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে মতান্তর প্রকাশ্যে চলে এল।
কিছু দিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা রাজ্য থেকে আংশিক আফস্পা তোলা হতে পারে বলে ঘোষণা করেছিলেন। এ দিন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সইফুদ্দিন সোজ জানান, আফস্পা প্রত্যাহার নিয়ে কোনও ঘোষণা করার আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও শরিক কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। ওমরের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। ওমরের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে আজ ২৪ আকবর রোড থেকে বলা হয়েছে, আরও বেশি সমন্বয় করে চলতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
ওমর আফস্পা তোলার ইঙ্গিত দেওয়ার পরই শ্রীনগর-সহ উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গ্রেনেড হামলা হয়। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা ফারুক আবদুল্লার ভাই মুস্তাফা কামাল অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীই চক্রান্ত করে এই সব হামলা করাচ্ছে। তবে আজ সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ বলেন, ‘আফস্পা তোলার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতর বিবেচনা করে দেখছে। সেনা এই বিষয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” তবে কামালের মন্তব্য নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি সেনাপ্রধান।
এর পর আজ সকালে ওমরের পাল্টা সমালোচনায় অবতীর্ণ হন সইফুদ্দিন সোজ। বলেন, আফস্পা প্রত্যাহারে মতো কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এ ব্যাপারে কোনও চূড়ান্ত অবস্থান ঘোষণার আগে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল না সেটাই বিষ্ময়ের। তা ছাড়া উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আফস্পা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে সরকারের পত্তনের পর বস্তুত এই প্রথম তাঁকে চাপে রাখতে বার্তা দিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। ওমর ও রাহুল গাঁধী সমবয়স্ক। দু’জনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিবিড়। সেই প্রেক্ষিতে সরকার গঠনের পর থেকে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজনৈতিক ভাবে ওমর সরকারের পাশেই থেকেছে। শুধু রাহুলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে মর্যাদা দেওয়া নয়, এর নেপথ্যে বৃহত্তর রাজনীতিও ছিল কংগ্রেসের। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছিলেন যে, ওমর ও ফারুক আবদুল্লা জাতীয়তাবাদী শক্তি। তাঁরা জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতায় থাকলে কেন্দ্রের পক্ষে ভাল। তা ছাড়া সে ক্ষেত্রে উপত্যকার সমস্যা ও অসন্তোষ নিয়ে সরাসরি আঁচ কেন্দ্র বা কংগ্রেসের ওপর পড়বে না।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখন। কেন না ঘরে বাইরে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ওমর তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়াতে স্থানীয় আবেগকে পুঁজি করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। আফস্পা প্রত্যাহারের ইঙ্গিতের মাধ্যমে উপত্যকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইছে। কিন্তু তা ওমরকে রাজ্য রাজনীতিতে সুবিধা দিলেও কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কারণ কিছু এলাকা থেকে আফস্পা একবার প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আবার সেখানে তা জারি করা সমস্যার। আবার এর ফলে যদি সন্ত্রাসের ঘটনা বৃদ্ধি পায় তা হলে চাপের মুখে পড়বে কেন্দ্র। এই অবস্থায় আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। তবে ওমর দাবি করেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই আফস্পা নিয়ে ঘোষণা করেছেন।
তবে ওমরের ওপর চাপ রাখতে চাইলেও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি নেতিবাচক কথা কৌশলগত ভাবে বলতে নারাজ। কারণ, ওমর সরকার খুব বেশি সংকটে পড়লেও সমস্যা। এআইসিসি-তে জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত নেতা মোহন প্রকাশ জানান, ওমরকে কিছুটা সমঝে চলার জন্যই বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া হাইকম্যান্ড এই বার্তা দেওয়ায় রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ওই কেন্দ্রীয় নেতা এও জানিয়ে দেন, এটা ঠিকই যে কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের অনেকেই চাইছেন, তিন বছর ওমর শাসন করার পর এ বার কংগ্রেসকে সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব তা নয়। বরং হাইকম্যান্ডের মতে, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমন্বয় বজায় রেখে ওমরই মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকুন। |
|
|
|
|
|