|
|
|
|
পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্বিধা ছিল মনমোহনের: কন্ডোলিজা |
সংবাদসংস্থা • ওয়াশিংটন |
ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে প্রথম দিকে বেশ ‘অনিচ্ছুকই’ ছিলেন মনমোহন সিংহ। তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব কন্ডোলিজা রাইসের অন্তত সেই রকমই দাবি।
তাঁর বক্তব্য, ২০০৫ সালের জুলাই মাসের যে দিন চুক্তির প্রাথমিক খসড়া নিয়ে আমেরিকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে দিন সকাল পর্যন্তও ভারতের প্রধানমন্ত্রী দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। একটা সময় এমনও হয়েছে যে, কন্ডোলিজার সঙ্গে দেখাই করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ।
কারণ? তাঁকে ‘না’ বলতে চাননি মনমোহন। বুশ প্রশাসনেরও হাল ছেড়ে দেওয়া দশা। কিন্তু না-ছোড় মার্কিন বিদেশসচিব। তাঁর বোঝানোর কৌশলেই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত। রাজি হয়ে যান মনমোহন।
পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত এমন আরও অনেক না-জানা তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে কন্ডোলিজা রাইসের লেখা সাম্প্রতিক বইয়ের সুবাদে। ৭৮৪ পাতার সেই বইটির নাম ‘নো হায়ার অনর’। প্রকাশিত হচ্ছে ১ নভেম্বর।
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আর ভারতের প্রধামন্ত্রী মনমোহন সিংহের আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের ঠিক আগেকার মুহূর্তগুলো বইয়ে তুলে ধরেছেন কন্ডোলিজা। তাঁর কথায়, “সকাল সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। বিছানায় সোজা হয়ে বসে নিজেকে বললাম, এই সুযোগ কিছুতেই ছাড়ব না।’’ অথচ ওই সময়ে বুশ প্রশাসনের বাকি অফিসাররা ধরেই নিয়েছিলেন, পরমাণু চুক্তি আর দিনের আলো দেখবে না।
কন্ডোলিজা জানাচ্ছেন, ভারতের তদানীন্তন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহই একমাত্র লোক, যিনি চুক্তির পক্ষে সরব ছিলেন। কিন্তু মনমোহন তাতে ভরসা পাননি। দেশে সবার সমর্থন পাবেন কি না, সেটাই ভাবাচ্ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। মার্কিন বিদেশসচিব লিখছেন: আন্ডার সেক্রেটারি নিকোলাস বার্নস জানালো, ‘নটবর অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মনমোহন সই করতে রাজি হচ্ছেন না।’ তার পরে কন্ডোলিজা নিজেই ফোন করেন বুশকে। কিন্তু খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টও তখন হতাশ হয়ে বলছেন, “কিছু হবে না। সিংহ পারবেন না।”
তবু হাল ছাড়েননি মার্কিন বিদেশসচিব। ওই দিনই সকালবেলায় নিজের কাছে শপথ। তার পর দ্রুত মনমোহনের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সময়ই জানলেন, মনমোহন দেখা করতে চান না। নটবর জানালেন কারণটা। ভারতের প্রধামন্ত্রী তাঁকে ‘না’ বলতে পারবেন না। কন্ডোলিজা তখন মনে মনে বলছেন, ‘পারতেইহবে।’ নটবরকে দিয়ে আবার ফোন মনমোহনকে। এ বার দেখা করতে রাজি হলেন প্রধানমন্ত্রী। উইলার্ড হোটেলে কন্ডোলিজা-মনমোহন বৈঠক ঠিক হল সকাল আটটায়। যাওয়ার আগে কন্ডোলিজা বুশকে জানিয়ে গেলেন, ‘এক বার শেষ চেষ্টা করে দেখি।’
এর পরেই সেই মোক্ষম মুহূর্ত। মনমোহনের সঙ্গে ছিলেন কেবল নটবর। কন্ডোলিজা বললেন, “এটা আজীবনের চুক্তি। আপনি আর প্রেসিডেন্ট বুশ ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের নতুন দিশা দেখাতে চলেছেন। জানি, এটা আপনার পক্ষে কঠিন কাজ। প্রেসিডেন্টের পক্ষেও। আমি মীমাংসার ভাষা ঠিক করতে আসিনি। আপনার প্রশাসনের অফিসারদের জানান, এটা করতে হবে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই এটা ঠিক হয়ে যাক।” কন্ডোলিজা লিখছেন, “মৃদুভাষী ধীরস্থির প্রধানমন্ত্রী হেলান দিয়ে বসলেন। তার পর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সায় দিলেন।” এর পরেই মহানন্দে কন্ডোলিজা সুখবর দিতে ছুটলেন হোয়াইট হাউস। সেখানে রুজভেল্ট রুমে তখন দু’দেশের মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তি সম্পন্ন করতে গুরুগম্ভীর কথাবার্তা বলছেন। কন্ডোলিজার কথায়, “আমরা তখন বেশ নার্ভাস। অন্য বিষয়ে নজর দেওয়ার ভান করছিলাম। তার পর সরাসরি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা। তত ক্ষণে আমরা জানি, আমরা পেরেছি।” |
|
|
|
|
|