|
|
|
|
মনমোহন-আডবাণী কথা |
দীপাবলির শুভেচ্ছা বিনিময়ে কাটল তিক্ততা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তরজার তিক্ততা কাটিয়ে দিল দীপাবলির শুভেচ্ছা বিনিময়।
তরজাটা শুরু হয়েছিল গত লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় থেকে। এ বার রথযাত্রাতেও সেই ‘ধারা’ অব্যাহত রেখে মনমোহন সিংহকে ‘দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। এই ‘রূঢ়’ আক্রমণের জবাবে বিজেপি নেতাকে ‘সংযত’ থাকার পরামর্শ দেন মনমোহন।
তিক্ততার সেই রেশ কিন্তু রথযাত্রার বিরতিতে দিল্লি এসে কাটিয়ে গেলেন আডবাণী। আজ রথযাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে মাদুরাই উড়ে যাওয়ার আগে তিনি দেখা করেন মনমোহন সিংহের সঙ্গে। তাঁকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানান। মনমোহনও শুভেচ্ছা জানান আডবাণীকে। তখনই দুই নেতার মধ্যে কথাবার্তা হয়। বিজেপি সূত্রের মতে, সম্প্রতি দু’জনের মধ্যে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, তার কোনও ছাপ এই সাক্ষাৎকারে ছিল না। বরং তিক্ততার অবসান হলই বলা যায়। বিজেপি সূত্র অবশ্য বলছে, এই সাক্ষাৎকারে ফলে আডবাণী রথযাত্রার পরবর্তী পর্বে মনমোহন সিংহকে আর আক্রমণ করবেন না এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।
রথযাত্রায় আডবাণী লাগাতার মনমোহন সিংহকে ‘দুর্বলতম’ প্রধানমন্ত্রী বলে কটাক্ষ করে আসছেন। এমনকী, মনমোহন যে স্রেফ ‘নামেই প্রধানমন্ত্রী’, যাবতীয় সিদ্ধান্ত যে আসলে সনিয়া গাঁধীই নেন, সে কথাও বলছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মনমোহন সিংহ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আডবাণী বারবার বলছেন, ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর নাকের ডগা দিয়েই যাবতীয় দুর্নীতি হচ্ছে।’ আডবাণীর এই কটাক্ষের জবাব দিয়ে সম্প্রতি বিদেশ সফর থেকে ফেরার সময়েই প্রধানমন্ত্রী ‘পরামর্শ’ দেন, বিজেপির প্রবীণ নেতা যেন রূঢ় শব্দ পরিহার করেন। আডবাণী অবশ্য কঠোর ভাষাতেই এর পাল্টা জবাব দেন। বলেন, “সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা অন্যায় হলে আমি অপরাধী। কিন্তু নেহরু জমানা থেকে দেখে আসা প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে মনমোহন সিংহই সব থেকে দুর্বল। সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ঠিক সময়ে সক্রিয় হলে টু-জি স্পেকট্রামে এত বড় দুর্নীতি রোখা যেত।”
দীপাবলির আগে তরজা তাই তুঙ্গে উঠেছিল। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, সেটাই আজ অনেকটা লঘু হল আডবাণীর সৌজন্য সাক্ষাতে। যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, ব্যক্তিগত ভাবে দুই নেতা কিন্তু একে উপরের প্রতি ‘সম্মান’ই পোষণ করেন। রথযাত্রার সময় আডবাণী প্রধানমন্ত্রীকে যতই রাজনৈতিক আক্রমণ করুন, ব্যক্তিগত ভাবে মনমোহন সিংহ যে এক জন ‘সজ্জন’ ব্যক্তি, সেটিও উল্লেখ করতে ভোলেন না। আবার আডবাণীকে যতই ‘সংযত’ থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকুন মনমোহন সিংহ, এ দিন কিন্তু তাঁর রথযাত্রাকে সফল করার কথা বলে ‘সৌজন্য’ও দেখিয়েছেন।
বিজেপি শিবির কিন্তু বলছে, এই সৌজন্য সাক্ষাতের পরে যদি মনে করা হয় আডবাণী আর প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করবেন না, সেটা ঠিক নয়। মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়াই যাত্রার লক্ষ্য। আর সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর উদাসীনতা ও দুর্নীতি রুখতে তাঁর ব্যর্থতার কথা তুলে ধরতেই হবে। সাময়িক বিরতির পর যাত্রা শুরুর আগে আডবাণী নিজের ব্লগেও পরোক্ষে সে কথা উল্লেখ করেছেন।
আডবাণী লিখেছেন, “গত কয়েক দশকে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভারত যে সুনাম অর্জন করেছে, তাতে একুশ শতকে আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ হওয়ার অধিকারী তারা। কিন্তু গত বছর থেকে দুর্নীতির একের পর এক ঘটনা ঘটছে। অনেক মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে অনেকে জেলে যাচ্ছেন। ভোট-ঘুষ কাণ্ডে যাঁরা দুর্নীতির মুখোশ খুললেন, তাঁদেরই জেলে পাঠানো হচ্ছে।” এত দিন ধরে মানুষ যে আস্থা অর্জন করেছে, ইউপিএ-র এই পরের পর ব্যর্থতায় তাতে আঘাত লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এবং বলেন, “মানুষের মনোবল যাতে ভেঙে না পড়ে, সেটা দেখাই আমার যাত্রার লক্ষ্য। যাতে ইউপিএ সরকার ব্যর্থ হলেও একুশ শতক যেন ভারতের শতকেই পরিণত হয়।” |
|
|
|
|
|