দাম বাড়বে, প্রত্যাশিতই ছিল। বেড়েওছে লাফ দিয়ে। কিন্তু তাতে কি আর ভাইফোঁটার মিষ্টি কেনা আটকায়! বরং, হরেক রকমের মিষ্টি নিয়ে খদ্দেরের মন জোগাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন কাটোয়া-কালনার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।
অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে ক্ষীরের পান্তুয়া নিয়ে যাওয়া প্রায় রেওয়াজে পরিণত হয়েছে কাটোয়া শহর বা আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। উপকরণের দাম বাড়ায় সেই ক্ষীরের পান্তুয়ার দামও বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কাটোয়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী তপন কুণ্ডু জানান, এ বার ক্ষীরের পান্তুয়ার দাম তাঁরা দু’টাকা বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “গুণমান বজায় রাখতে গেলে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।” তবে এ জন্য ব্যবসা কমার কোনও সম্ভবনা নেই বলে তপনবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, “বাজারের চাহিদার তুলনায় আমরা পঁচিশ শতাংশ জোগান দিতে পারব বলে মনে হচ্ছে।”
শুধু ক্ষীরের পান্তুয়া নয়, চন্দ্রপুলি থেকে ক্ষীরের পুলি, রসগোল্লা থেকে কাঁচাগোল্লা, দাম বেড়েছে সব রকম মিষ্টিরই। তাতে মিষ্টি কেনার বাজেট কমছে কি? কাটোয়ার কাছারি রোডের বাসিন্দা স্বর্ণালী মুখোপাধ্যায় কিংবা সার্কাস ময়দানের সায়ন্তিকা দত্তেরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, “দাম বেড়েছে বলে তো আর ভাইদের থালা ফাঁকা রাখা যায় না।” শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ী বৈদ্যনাথ সাহা, স্বপন নাগেরাও বলেন, “দাম বাড়লেও মিষ্টির জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি।” কাটোয়া বড় বাজারের ব্যবসায়ী প্রবীর মোদক বলেন, “দাম বাড়ায় মিষ্টি কম তৈরি করেছিলাম। এখন দেখছি, বোকা বনে গিয়েছি।” |
কালনা শহর ও আশপাশের এলাকায় চোট-বড় মিষ্টির দোকানগুলি সব থেকে বেশি ব্যবসা করে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায়। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শহরে দু’টি ছানার বাজার রয়েছে। সেখান থেকে ছানা কিনে মিষ্টি তৈরি শুরু হয়ে যায় আগে থেকেই। এ বার ভাইফোঁটা উপলক্ষে সন্দেশ ও ক্ষীরের মিষ্টিই বেশি তৈরি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার কালনার বৈদ্যপুর মোড়ে একটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সত্তর রকমের মিষ্টি তৈরি হয়েছে ভাইফোঁটায় বিক্রির জন্য। তার মধ্যে রয়েছে জলভরা, কস্তুরী, ক্ষীরের আপেল, কোক সন্দেশ, সরপুরিয়া, সরভাজা ইত্যাদি। রসগোল্লায় আনা হয়েছে নানা রকম বৈচিত্র্য। তৈরি হয়েছে কমলাভোগ, পান্তুয়া, ম্যাঙ্গো রসগোল্লা ইত্যাদি। দোকানের মালিক মনোজিৎ মোদক বলেন, “মানুষজন ইদানীং কম চিনির মিষ্টি বেশি পছন্দ করছেন। সে জন্য বেশ কিছু হাল্কা স্বাদের সন্দেশ তৈরি করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, কালনা শহরে এ বার প্রায় পঞ্চাশ কুইন্ট্যাল ছানার মিষ্টি তৈরি হয়েছে। বৈদ্যপুর মোড়ের আরও একটি মিষ্টির দোকানে লাউ চমচম, ক্ষীরের পিঠে ছাড়াও বিভিন্ন ফলের আকৃতির সন্দেশ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে দশ ধরনের রসগোল্লা। দোকানের মালিক বিকাশ ঘোষ বলেন, “তিন থেকে কুড়ি টাকা, সব দামের মিষ্টি রয়েছে।” ব্যবসায়ীদের শুধু একটাই আক্ষেপ, শীত না পড়ায় এ বার ভাল মানের নলেন গুড়ের মিষ্টি দেওয়া যাবে না ভাইদের পাতে। |