আমজনতার দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে ১১.৪৩ শতাংশে পৌঁছে গেল খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
উৎসবের মরসুমে বাড়তি খরচের চাপ সামলানোর পর দৈনন্দিন বাজার খরচের বোঝা আরও কতটা বেশি বহন করতে হবে তা নিয়েই এখন উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার কেন্দ্র প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শাক-সব্জির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ফল প্রায় ১২ শতাংশ, দুধ প্রায় ১১ শতাংশ। ডিম, মাছ, মাংস প্রায় ১৩ শতাংশ করে।
আগের সপ্তাহেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল যথেষ্ট চড়া, ১০.৬০ শতাংশ। তবে গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল আরও একটু বেশি উপরে, ১৪.২০ শতাংশ। এর আগে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি শেষ বারের মতো সাড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিলে। তখন এই হার ছুঁয়ে ফেলেছিল ১১.৫৩ শতাংশ।
সব্জির পাশাপাশি, আলোচ্য সপ্তাহে বেড়েছে ডাল এবং খাদ্যশস্যের দামও। ডালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি, শস্যের ৪.৬২ শতাংশ। তবে প্রায় ১৯ শতাংশ কমে গিয়েছে পেঁয়াজের দাম। আর এরই সঙ্গে গমের দামও কমেছে প্রায় ১ শতাংশ এবং আলুর ০.৪৫ শতাংশ। তবে শুধুমাত্র কৃষিপণ্যকে ধরলে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি, ১১.৭৫ শতাংশ। |
অবশ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মুল্যবৃদ্ধি ডিসেম্বর মাস থেকেই কমার মুখ নেবে। শীতকালীন সব্জি বাজারে আসতে শুরু করলেই সব্জির দাম স্বস্তিজনক অবস্থায় পৌঁছে যাবে বলে বাজার সূত্রেরও ইঙ্গিত। তার সূচনা আগামী সপ্তাহ থেকেই হতে পারে বলে মনে করছে দিল্লির পাইকারি সব্জি বাজারের একটি সূত্র। এমনকী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-ও সেই আশার উপর ভর করেই ১৩ বার সুদ বাড়ানোর পর এ বার তাদের নীতি বদলের ইঙ্গিত দিয়েছে। শীর্ষ ব্যাঙ্ক মঙ্গলবার তার ঋণনীতির ষাণ্মাসিক পর্যালোচনায় মূল্যবৃদ্ধিকে বশে আনতে স্বল্প মেয়াদি হার রেপো (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নেয়) এবং রিভার্স রেপো রেট (যে হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেয়) ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়ালেও, এটাই সম্ভবত শেষ দফার সুদ বৃদ্ধি বলে মন্তব্য করেছে। অন্ধকারের মধ্যেও আশার এই রুপোলি রেখা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও অবশেষে সুদ বাড়ানোর নীতি থেকে সরে আসার মতো সাহস জুগিয়েছে বলে মনে
করছেন বিশেষজ্ঞরাও।
মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশী একই সুরে বলেন, “বাজারে নতুন সব্জি উঠলে দাম শীঘ্রই নেমে আসবে। এ ক্ষেত্রে বাজারে জোগান বাড়াই দাম কমার একমাত্র রাস্তা। প্রয়োজনে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকেও।” অন্য দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্রমাগত সুদ বৃদ্ধির দাওয়াই মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পরানোর ক্ষেত্রে তেমন ফলপ্রসূ হয়নি বলেই মন্তব্য করেন তিনি। প্রসঙ্গত, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানিয়েছে, চাহিদা-জোগানের অসামঞ্জস্যই খাদ্যপণের চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী। তবে অপর একটি মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের আশঙ্কা, অক্টোবর মাসের বাদবাকি সপ্তাহের জন্য যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে, তাতে দাম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।
অন্য দিকে, সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার গত সেপ্টেম্বর মাসে ছুঁয়েছে ৯.৭২ শতাংশ। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী ২০১২ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই মূল্যবৃদ্ধির ওই হার নেমে আসবে ৭ শতাংশে। |