নিজস্ব সংবাদদাতা • রাজনগর |
কালীপুজোর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক স্কুলছাত্রের। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে রাজনগর থানার তাঁতিপাড়া গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম পিন্টু দাস (২১)। বাড়ি ওই গ্রামেই। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, পিন্টুকে ‘খুন’ করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজনগর থানায় তাঁরা খুনের কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। পুলিশ অবশ্য ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে এটি খুনের ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। মৃত ছাত্রের চার বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় ছেলে উত্তম ও ছোট ছেলে পিন্টুকে নিয়ে তাঁতিপাড়া গ্রামের দাসপাড়ায় থাকেন স্বামী-বিচ্ছিন্না অনুমতি দাস। উত্তম পেশায় রাজমিস্ত্রি। পিন্টু ছিলেন তাঁতিপাড়া নবকিশোর বিদ্যানিকেতনের দ্বাদশ শ্রেণির (কলা বিভাগ) ছাত্র।
বুধবার গভীর রাতে পিন্টুকে বড়কালীতলার কাছাকাছি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁর চার বন্ধু। তারাই পিন্টুকে তাঁতিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন পিন্টুর মামা আকাশ দাস। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক দেবাশিস কর্মকার বলেন, “পিন্টুকে যখন নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঠোঁটের একপাশেও ছিল রক্তের দাগ। অবস্থা ভাল নয় বুঝে রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ১০-১৫ মিনিটের মাথায় পিন্টুর মৃত্যু হয়। রাত তখন ৩টে হবে।” বৃহস্পতিবার সকালে পিন্টুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অনুমতিদেবীকে ঘিরে কিছু নিকটাত্মীয় ও পড়শিরা। ঘটনার আকস্মিকতায় থম মেরে গিয়েছেন ওই মহিলা। শুধু বারবার ডুকরে কেঁদে বলে উঠছিলেন, “আমার ছোট ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেলল। কী দোষ করেছিল!” যদিও কে বা কারা এই কাজ করতে থাকতে পারে, তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি অনুমতিদেবী। তাঁর কথায়, “বুধবার রাত ১২টা নাগাদ কালীঠাকুর দেখে একবার বাড়িতে এসেছিল ছোট ছেলে। ওকে খেতে ডাকি। সবে খেতে বসেছে, সেই সময় কেউ ফোন করে ওকে ডাকে। তার সঙ্গে সঙ্গেই পিন্টু বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে নিজের মোবাইল ছাড়াও দাদার মোবাইল ফোনটাও নিয়েছিল। এর পরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টে নাগাদ দুঃসংবাদ এল, পিন্টু আর নেই!”
পুলিশ পিন্টুর সঙ্গে থাকা মোবাইল দু’টির ‘কল লিস্ট’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে চার জন পিন্টুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন। |