চাঁদা থেকে ভোগ, সবেতেই মহিলা
ণ্ডপে পুড়ছে ধূপের শেষ অংশটুকু। প্রদীপের আলো নিভেছে অনেক ক্ষণ। রাতজাগা ক্লান্ত শরীরগুলো চাইছে একটু বিশ্রাম। কিন্তু তা হওয়ার জো নেই। রাতে খিচুড়ি ভোগ রান্না হয়েছিল। ভোরের আলো ফুটতেই সেই জায়গা ধোওয়া মোছার তদারকি করছেন কেউ। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত হিসেবনিকেশে। কাউকে দেখা গেল, মণ্ডপ চত্বর পরিষ্কার কাজে বেজায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে এক জন হাঁক পাড়লেন, “উনুনে ভাত চাপানো আছে। কেউ একটু দেখো তো!”
নলহাটি পুর-শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের অমরাবতী এলাকায় মহিলা পরিচালিত কালীপুজোর পরের দিন গিয়ে এই সব খণ্ডচিত্রই চোখে পড়ল। এলাকায় বেশির ভাগই চাকরিজীবী পরিবারের বাস। ১৯৯০ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগেই দুর্গাপুজো শুরু হয় এখানে। দুর্গাপুজোর জন্য পাকা মণ্ডপও আছে। তবে কালীপুজোর পরিচালনায় রয়েছেন স্থানীয় মহিলারা। ১৯৯২ সাল থেকে তাঁরাই কালীপুজোর সমস্ত খুঁটিনাটি সামলে আসছেন। গাছের গুঁড়িকে অর্ধবৃত্তাকারে ঘিরে থাকা বেদি করা হয়েছে। সেখানেই হয়েছে কালীর আরাধনা। পুজোর জন্মলগ্ন থেকে যুক্ত থাকা এলাকার বধূ ছায়া দাস বললেন, “দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন এলাকার পুরুষেরা। দু’বছর পরে দুর্গাপুজোর মণ্ডপে আমরা পাঁচ-ছ’জন মহিলা ঠিক করি, কালীপুজো করব আমরাই। সেই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু। লক্ষ্মীপুজো পেরোতেই আমরা কালীপুজো নিয়ে নেমে পড়ি। নিজেদের তরফে প্রথমে ১০১ টাকা চাঁদা তোলা হয়। পরে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে যে যেমন পারেন সাহায্য করেন। কালীপুজোর সেই শুরু।”
চলছে সিঁদুর খেলা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
পরবর্তীতে এলাকায় বসতি বাড়ে। পাড়ার মহিলাদের সহযোগিতায় কালীপুজোর বহরও বেড়েছে। ’৯২ সালে যাঁরা কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের শিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাস গত হয়েছেন। আর এক জন, সাগরদিঘি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা রায় বর্তমানে অসুস্থ হয়ে কলকাতায় মেয়ের কাছে রয়েছেন। পাড়ার বধূ সুতপা ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিমাদিদি অসুস্থ অবস্থাতেও নিজের মেয়ে-জামাইকে দিয়ে আমাদের পুজোর খোঁজখবর নিয়েছেন।” পুজোর প্রতি এলাকার মহিলাদের টান কতটা, তা বোধহয় এই ছোট্ট উদাহরণেই স্পষ্ট।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আলোশ্রী ভট্টাচার্যের কথায়, “মা কালী নারীশক্তিরই একটি বিশেষ রূপ। আমরা তাই তাঁর আরাধনা নিজেদের উদ্যোগে করে আসছি।” পাড়ার বধূ পূর্ণিমা দত্ত, নমিতা সরকাররা বললেন, “পুজোর জন্য প্রতিমা তৈরির জন্য কুমোরপাড়ায় গিয়ে আগাম বায়না করা, মণ্ডপ তৈরির জন্য কারিগরদের সঙ্গে কথা বলা, পাড়ার পাশাপাশি শহরের অন্যত্রও চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে পুজোর জন্য পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড় বা বাজনদার ঠিক করাসব কাজই পাড়ার মহিলারা করে আসছেন।” পুজোয় সামিল বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরাও। তাঁদের অন্যতম, নলহাটি হিরালাল ভকত কলেজ ও সফিয়া গার্লস কলেজের ছাত্রী অনুপমা সরকার, সুমনা চৌধুরী, নয়না দাসরা বলছেন, “আগে মায়েদের সঙ্গে পিছন পিছন ঘুরে পুজোয় মেতে থাকতাম। এখন মণ্ডপে আলপনা দেওয়া, পুজো শেষে প্রসাদ বিতরণের মতো কাজগুলো আমরাই করি। ভাবতে ভাল লাগে যে, অন্তত নিজেদের উদ্যোগে একটা পুজো করা যাচ্ছে।”
এই পাড়ারই মেয়ে দীপশিখা সেনের সদ্য বিয়ে হয়েছে মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপিতে। এত দিন কালীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত ছিলেন। এ বারও পাড়ার পুজো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেননি। কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়েছেন তিনিও।
এক বছরে মোট যে চাঁদা ওঠে, তার কিছুটা অংশ তাঁরা বাঁচিয়ে রাখেন পরের বারের জন্য। কিন্তু শুধুই কি পুজো? সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে কালীপুজোর ঘটভরা বা বিসর্জন পর্বসবই মহিলা পরিচালিত। পাড়ার পুরুষেরা মহিলাদের এই উদ্যোগে এতটুকুও ক্ষুন্ন নন। বরং রত্নাকর দত্ত, নির্মল দত্তরা বললেন, “বাড়ি মেয়েরাও পুজো করতে পারায় আমরা খুশি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.