দশমী থেকেই মূর্তি গড়া শুরু লোবা-কালীর
দুবরাজপুর ব্লকের লোবা পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ তো বটেই, গোটা ব্লকে এমন লোকের সংখ্যা হাতেগোনা, যিনি লোবা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন কালীপুজোর কথা জানেন না। লোবা-কালী বলে খ্যাত এই পুজো দেখতে লোবা গ্রাম বা স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লকের বাসিন্দারাই নন, আসেন প্রচুর বাইরের মানুষও। বাইরের বলতে বীরভূম জেলা ও জেলার বাইরের মানুষ।
লোবা গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষ তাঁদের গ্রামের কালীপুজো দেখতে ভিড় করেন। লোবা পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সফিকের কথায়, “লোবা গ্রামের কালী প্রতিমা ও পুজোকে ঘিরে মেলা দেখতে শুধু হিন্দুদের বাড়িতেই আত্মীয়স্বজনেরা আসেন এমনটা নয়। এই দু’দিন চুটিয়ে আনন্দ করতে মুসলিম পরিবারেও পরিজনেরা আসেন এবং এসেছেন। আমরা এই উৎসবকে কোনও রকম জাত-ধর্মে বাঁধতে রাজি নই।”
ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
এলাকাবাসী যে একটুও বাড়িয়ে বলছেন না, তা বৃহস্পতিবার দুপুরে লোবা গ্রামে ঢুকেই টের পাওয়া গেল। তখন কালীমন্দির চত্বরে থিকথিক করছে ভিড়। পাশাপাশি চলছে বিসর্জনের প্রস্তুতিও। বিসর্জনের মাঠেই বসেছে বড় মেলা। গ্রামে ঢোকার বিভিন্ন রাস্তা ধরে হেঁটে, সাইকেলে বা মোটরবাইকে, (গাড়িও আছে) কাতারে কাতারে লোক চলেছেন মন্দিরের দিকে। তাঁদেরই অন্যতম বরাকরের রাষ্ট্রায়ত্ত ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের (বিসিসিএল) কর্মী বুলু রায় বা কলকাতা থেকে স্রেফ এই কালীপুজো দেখতে লোবায় আসা সঙ্কলিতা সরকাররা বললেন, “কালীপুজোয় আর কোথাও মন টেকে না। বিয়ের পরেও সেই টান এতটুকুও কমেনি। তাই এই সময় বাপের বাড়িতে চলে আসি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দুর্গাপুজোর মতো এই গ্রামের কালীপুজোও আসলে একটা মিলন উৎসব।” অন্ডাল থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন আশা ধীবর। তাঁর কথায়, “এখানে আমার মামা বাড়ি। আমি নিজে ছোটবেলায় বহুবার এসেছি। ছেলেকেও এই গ্রামের কালীপুজো আর মেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি।”
বছর কয়েক পরে ঠিক ওই জায়গায় কালী মন্দিরটা হয়তো থাকবে না। কারণ, বেসরকারি উদ্যোগে এই অঞ্চলে খোলামুখ কয়লাখনির কাজ প্রায় শেষের মুখে। কিন্তু তখন কী হবে, তা ভেবে এখনের কালীপুজোর আনন্দ মাটি করতে চান না গ্রামবাসীরা। কালীপুজোর রাত থেকে পরের দি বিসর্জনের সময় পর্যন্ত লোবা গ্রামে বসে মেলা। হয় যাত্রাপালা। রাতভর হাজার হাজার মানুষ কালীপুজোর সাক্ষী থাকেন। এই পুজোটি মূলত গ্রামের ঘোষ পরিবারের। কিন্তু দীর্ঘদিন আগেই তা সর্বজনীনের চেহারা পেয়েছে। গ্রামের সকলে এই পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন। কালীমূর্তির চক্ষুদান হয় বেদিতে বসানোর ঠিক আগে। এ বছর হয়েছে বুধবার রাত ১০টায়।
ঘোষ পরিবারের দুই সদস্য কাঞ্চন ঘোষ, উজ্জ্বল ঘোষ জানালেন, অন্তত ৫০০ বছর আগে এই কালীপুজোর প্রচলন। এলাকার প্রাচীনতম পুজোও বটে। দুর্গাপুজোর দশমীর দিন থেকে কালী মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। একাদশীতে মায়ের মুখ তৈরি করতেই হবে। এটাই রীতি। কাঞ্চনবাবুরা বললেন, “মূর্তিতে যে রং দেওয়া হয়, তা সবই আণাদের পরিবারের সদস্যেরাই প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করে থাকেন। মূর্তির কাঠামো বাঁধতে যে পরিমাণ বাবুই দড়ি লাগে, তা কেনে স্থানীয় ৩০-৪০টি পরিবার মিলে। পুজো হয় গভীর রাতে। চলে সকাল অবধি। সেই পুজো দেখতে রাত জাগেন এলাকার মানুষ। বিসর্জনের সময়েও হাজার হাজার মানুষে ভিড় থাকে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.