প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ‘দেবদূতের শহর’ ব্যাঙ্কক! এতটাই যে অধিবাসীদের শহরের কয়েকটি অঞ্চল ছেড়ে যেতে বলেছেন খোদ ব্যাঙ্ককের গভর্নর। আর তার জেরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে আরম্ভ করেছেন বাসিন্দারা।
জুলাই মাস থেকেই সারা দেশ জুড়ে চলছে নাগাড়ে বৃষ্টি। বন্যায় এর মধ্যেই মারা গিয়েছেন অন্তত ৩৭৩ জন। প্লাবিত উত্তর ব্যাঙ্ককের প্রায় নব্বই শতাংশ অঞ্চল। বন্যার কবলে শহরের মধ্যভাগও। সেই সঙ্গে এ সপ্তাহের শেষ দিকে জোয়ারের জন্য জল বাড়বে চাও ফ্রায়া নদীতে।
বন্যার জল এবং জোয়ারের জল মিলে উত্তরে এবং মধ্য ভাগে আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বন্যা পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী ইংলুক শিনাবাত্রা এক বিবৃতিতে বলেন, “বৃষ্টির জলের চাপে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ জল আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বাঁধ ভেঙে গেলে সবাই ভুগবে। তাই জল ছাড়তেই হবে।” এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই উত্তরের জেলাগুলি খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত কালই ডন মুং এবং বাং ফ্লাড জেলাগুলি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আজ সাই মাই জেলাতেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়।
গভর্নরের ঘোষণার পরই দলে দলে উত্তর ব্যাঙ্কক ছাড়তে শুরু করেন অধিবাসীরা। গন্তব্য মূলত দক্ষিণ ব্যাঙ্ককের বিভিন্ন জায়গা। যা এখনও পর্যন্ত সুরক্ষিত রয়েছে বন্যার গ্রাস থেকে। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার হিড়িকে বিশৃঙ্খলার ছবি সর্বত্রই। খাবার এবং পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই। তিল ধারণের জায়গা নেই শহরের বাসস্ট্যান্ড এবং স্টেশনে। পরিবার নিয়ে বাসের আশায় ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। একই ছবি মধ্য ব্যাঙ্ককেও। এখান থেকে দক্ষিণ ব্যাঙ্কক যাওয়ার প্রধান রাস্তায় দেখা গিয়েছে দীর্ঘ গাড়ির সারি। বিশৃঙ্খলার অন্য চিত্র তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ব্যাঙ্ককেও। শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে অধিবাসীরা এখানে এসে ভিড় জমানোয় ঘর মিলছে না হোটেলগুলিতেও। এরই মধ্যে আবার ছড়িয়েছে কুমিরের আতঙ্কও। জানা গিয়েছে ব্যাঙ্ককের কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে বন্যার জলের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু কুমির।
বন্যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন ব্যবসা। ব্রিটেন এবং চিন ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিকদের ব্যাঙ্কক না যাওয়ার আর্জি জানিয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কিছু অঞ্চল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার সেনা। |