বন্যার জল এখনও গ্রাস করেনি ব্যাঙ্কক শহরকে। তবু ব্যাঙ্কক শহরে হুহু করে বাড়ছে ডলারের দাম। আর দোকানপাট আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে ব্যাঙ্কক যাত্রা বাতিল করছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।
প্লাবনের আতঙ্কের মধ্যেই এখনও নিয়মিত বিমান ওঠানামা করছে ব্যাঙ্ককের স্বর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কক থেকে ফোনে জানালেন জেট বিমান সংস্থার ম্যানেজার অনিন্দ্যম চৌধুরী। তাঁর গলায় উদ্বেগ। বেসরকারি বিমান সংস্থার ওই কর্তা বলেন, “কোনও রকম আগাম নোটিস ছাড়াই বাঁধ থেকে যখন-তখন জল ছাড়া হচ্ছে। কখন যে কী ঘটবে, কেউ বলতে পারছেন না। অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সবাই।”
শহর থেকে একটু দূরে ডন মুং বিমানবন্দর কার্যত বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেই বিমানবন্দরের রানওয়ের ৯০ শতাংশ জলের তলায়। তাইল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে উড়ান চলাচল করে ডন মুং থেকে। ডন মুং-এর বাতিল হওয়া উড়ান এখন আরও দূরে উথাপাও বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করছে বলে জানিয়েছেন অনিন্দ্যমবাবুই। তবে ভারত এবং অন্যান্য দেশের বিভিন্ন শহর থেকে যে-সব উড়ান ব্যাঙ্ককে যাতায়াত করে, সেগুলি স্বর্ণভূমি থেকে এখনও নিয়মিত ওঠানামা করছে। সেটাই তাইল্যান্ডের প্রধান বিমানবন্দর। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেখান থেকে কলকাতা ও ব্যাঙ্ককের মধ্যে চারটি উড়ান ওঠানামা করেছে। তবে এক ঝটকায় অনেকটাই কমে গিয়েছে যাত্রী-সংখ্যা। |
এসওটিসি ভ্রমণ সংস্থার প্রতিনিধি রাধিকা গাট্টানির কথায়, “পুজোর পরে বেড়াতে যাওয়ার হিড়িক এখন কম। তবু যে-দু’চার জন আসছেন, তাঁরা ব্যাঙ্ককের কথা জিজ্ঞাসা করলে আমরা উৎসাহ দেখাচ্ছি না।” সিটা ট্রাভেলসের প্রতিনিধি উষা লাকড়া অবশ্য বলেন, “আমাদের তরফে ব্যাঙ্ককের যা বুকিং ছিল, তার মধ্যে এখনও কোনওটাই বাতিল হয়নি।”
ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবির কথায়, “বেড়াতে যাওয়া তো আছেই। কিন্তু ব্যাঙ্ককে তো প্রধানত ছোট ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। তাঁদের জন্যই সারা বছর ধরে বিমান ভর্তি থাকে। এখন পরিস্থিতি দেখে তাঁরাই টিকিট বাতিল করতে শুরু করেছেন।” কলকাতা থেকে দিল্লি-মুম্বইয়ের জন্য যত না বিমানের টিকিট বিক্রি হয়, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ব্যাঙ্ককের টিকিট। সেই কারণে এজেন্টদের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনিল।
ব্যাঙ্কক থেকে নিয়মিতই জামাকাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে এসে কলকাতায় ব্যবসা করেন অনেকে। যেমন রাজেশ গিদোয়ানি। জামাকাপড় আমদানির ওই ব্যবসায়ীর ২৩ অক্টোবর ব্যাঙ্কক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যাত্রা বাতিল করেছেন। রাজেশের কথায়, “জল ধীরে ধীরে শহর ব্যাঙ্ককের চার দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। দোকানপাটও বন্ধ। এর মধ্যে গিয়ে কী করব?” বন্যার বিপদের উপরে ডলারের দাম নাকি বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রমাদ গুনছেন রাজেশের মতো ব্যবসায়ীরা। রাজেশ বললেন, “যাই তো মুনাফা করার জন্যই। ডলার কিনতেই যদি সব খরচ হয়ে যায়, তা হলে আর কী লাভ?”
শহরে বন্যার আতঙ্ক কতটা?
স্বর্ণভূমি বিমানবন্দরের এক অফিসার এ দিন ফোনে বলেন, “আমরা, যারা শহরে থাকি, তারা মেট্রোয় যাতায়াত করছি। পুলিশ অনেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির জন্য সরকার এ দিন ছুটিও ঘোষণা করেছিল।” তবে সে-সব উপেক্ষা করে যাঁরা পেরেছেন, তাঁরা অফিসে হাজির হয়েছেন। স্বর্ণভূমি বিমানবন্দরে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই বলেও জানান সেই অফিসার। সেই সঙ্গেই তিনি জানান, সাবধানের মার নেই। তাই স্বর্ণভূমি বিমানবন্দরের চার দিকের পাঁচিলের উচ্চতা বাড়ানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ, শুক্রবার থেকেই শহরে জল ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে বিমানবন্দরেও। |