কাত করবেন না ভাই, রস গড়িয়ে পড়বে!
এই চালু রসিকতার দিন বোধহয় ফুরিয়ে এল দুর্গাপুরে। ভাইফোঁটার বাজারে শুধু যে ঢুকে পড়েছে তা-ই নয়, অনেকটাই দখল নিয়ে ফেলেছে শুকনো মিষ্টি। তা-ও আবার বাইরে থেকে এসে। যদিও দোকানদারেরা মিষ্টির এই ‘বহিরাগত’ পরিচয় কবুল করতে রাজি নন। কিন্তু ব্যাপারটা যে অনেকটা ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ গোছেরই হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।
বৃহস্পতিবার, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আগের দিন দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতির বিভিন্ন দোকানে খদ্দেরদের চোখ টেনেছে সুদৃশ্য, অবিকল একই মাপের থরে থরে শুকনো মিষ্টি। এত নিখুঁত দেখতে, তারিফ করা ছাড়া গতি নেই। সন্দেশই অন্তত দশ রকমের। কোনওটায় কাজু, কোনওটায় গাজর, কোনওটায় নারকেল, কোনওটায় কিসমিস। আর একটু ঠাহর করলেই পরিষ্কার, এ সব ঠিক হাতে গড়া নয়! সব মিষ্টি এত নিখুঁত গড়তে খোদ বিশ্বকর্মাও পারবেন না। পিছনে যন্ত্রের হাত নেই তো?
হেঁশেলে একটু উঁকিঝুঁকি দিতেই সব পরিষ্কার। দোকানে শুধু তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা, চমচম, কালাকাঁদ জাতীয় খুব চেনা রসালো মিষ্টি। শুকনো মিষ্টি তৈরির কোনও ব্যাপারই নেই। দোকানিরা অবশ্য আমদানির কথা মানতে নারাজ। |
কথা উঠতেই দুর্গাপুর বাজারের এক দোকান মালিক সদানন্দ নাগ যেমন রুখে ওঠেন, “না না, আমরা সব মিষ্টি দোকানেই তৈরি করি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ক্রেতার সন্তুষ্টি।” আড়ালে তাঁর দোকানের কারিগরই অবশ্য মুচকি হেসে জানিয়ে দেন, তাঁরা মূলত রসগোল্লা, চমচম ইত্যাদি বানান। শুকনো মিষ্টি আসে বাইরে থেকে। সিটি সেন্টারের এক দোকানের মালিকও আমদানির কথা মানতে চাননি। কিন্তু তাঁর কারিগরও একই কথা জানিয়েছেন।
দোকানগুলির অন্দরমহল থেকেই জানা যায়, এই সব শুকনো মিষ্টি আসছে রানিগঞ্জ আর বর্ধমান থেকে। রানিগঞ্জে যারা মিষ্টি বানাচ্ছে, তাদের তো নিজেদের দোকানই নেই। শুকনো মিষ্টি তৈরি করে দোকানে দোকানে পাঠানোই তাদের ব্যবসা। কিন্তু সে কথা দোকানগুলি লুকাচ্ছে কেন?
গাঁধী মোড় ময়দান লাগোয়া এক মিষ্টি দোকানের মালিক জীবন সেনের মতে, বাইরে থেকে আসা মিষ্টি মানেই কিছুটা পুরনো। তাতে শরীর খারাপ হকে পারে বলে অনেক খদ্দেরেরই আশঙ্কা থাকে। আর, সে কারণেই বিক্রি বাঁচাতে এত লুকোছাপা। সে ক্ষেত্রে আপনিই বা কবুল করছেন কেন? সঙ্গে সঙ্গে জীবনবাবুর সটান জবাব, “আমার দোকানে সব মিষ্টিই কারিগরেরা বানায়।”
তবে দোকান মালিকদের এত আশঙ্কারও বোধ হয় কারণ নেই। কারণ, ‘বহিরাগত’ এই সব মিষ্টি ইতিমধ্যেই রূপে-গুণে বহু ক্রেতার মন জয় করে ফেলেছে। বেনাচিতির এক দোকানের ক্রেতা সন্দীপ্তা দত্ত যেমন বলেন, “পুজোর থেকেই দেখছি, মিষ্টিগুলো খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে।” সিটি সেন্টারের একটি পুরনো মিষ্টির দোকানে সস্ত্রীক এসে প্রবীণ দিবাকর মুখোপাধ্যায় যেমন বলেন, “হঠাৎ দেখছি, মিষ্টির স্বাদ বেশি ভাল হয়ে গিয়েছে। দেখতেও নিখুঁত।”
হোক না বাইরে থেকে আসা, মোদ্দা কথা তো অন্য। মিষ্টিরসিক ভাইয়েরা আজ শুকনো মিষ্টিতে ‘রস’ পান কি না, তা জানবেন বোনেরাই। |