উপাচার্যদের চিঠি উচ্চশিক্ষা সচিবের
পরীক্ষার দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তি হবে শিক্ষকদের
রীক্ষার দায়িত্বে গাফিলতি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিল উচ্চশিক্ষা দফতর। যে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে দফতর। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব সতীশ তিওয়ারি।
এ বছর ২ অগস্ট সংস্কৃত কলেজে পার্ট ওয়ানের ইলেকটিভ বাংলা জেনারেল পত্রের পরীক্ষায় প্রথমার্ধে বিলি করে দেওয়া হয় দ্বিতীয়ার্ধের প্রশ্ন। এর জেরে দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই দফতরের চিঠি বলে জানিয়েছেন সচিব।
শুধু এই ঘটনাই নয়। পরীক্ষার দায়িত্ব পালন ও খাতা দেখার ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের ‘অনীহা’র কথা অজানা নয়। বছর কয়েক আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় খাতা দেখার জন্য পরীক্ষকদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, আগে অনার্সের ১০০ নম্বরের একটি পত্রের মূল্যায়নের জন্য ৪ টাকা দেওয়া হত, এখন তা বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে। জেনারেলে তা ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, যে পত্রের খাতা দেখতে দেওয়া হচ্ছে, সেই বিষয়টি তিনি পড়ান না, কখনও তাঁর বা নিকটাত্মীয়ের স্বাস্থ্যজনিত কারণ, কখনও ছেলেমেয়ের পরীক্ষা ইত্যাদি কারণে তাঁরা খাতা দেখতে চান না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। এর ফলে কিছু শিক্ষকের ঘাড়ে অনেক খাতার চাপ পড়ে। ফলে এই শিক্ষকদেরও নতুন করে খাতা দেখার দায়িত্ব দেওয়া যায় না।
এখানেই শেষ নয়। যাঁরা খাতা দেখতে রাজি হন, তাঁদের অনেকে আবার সময়মতো পরীক্ষার্থীদের নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে উঁচু পদের কর্তাদের অনুরোধেও কাজ হয় না। এর জেরে ফল প্রকাশে দেরি হয়। যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হন ছাত্রছাত্রীরাই। উচ্চশিক্ষা দফতরের আশা, উপাচার্যদের চিঠি পাঠানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নড়েচড়ে বসবে এবং এই প্রবণতা কমবে।
উপাচার্যদের পাঠানো চিঠিতে কী জানিয়েছেন সচিব? সেখানে লেখা হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজে পরীক্ষা, খাতা দেখা ইত্যাদি ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে উচ্চশিক্ষা দফতর। কোন ধরনের আচরণকে পরীক্ষার কাজে গাফিলতি হিসেবে ধরা হবে তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। সেগুলি হল:
• নিয়ম না মেনে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা ইত্যাদি।
• পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ করতে অস্বীকার করা।
• সময় মতো খাতা না দেখা।
• গাফিলতির কারণে উত্তরপত্র হারানো।
• ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করা।
• পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অবহেলা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করার কথা লেখা থাকলেও তাতে যে কাজের কাজ হচ্ছে না, সে কথা মানছেন কর্তৃপক্ষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট অনুযায়ী, পরীক্ষার দায়িত্ব পালন শিক্ষকদের ‘অবশ্যকর্তব্য’। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “সেই দায়িত্ব পালন না করলে কোনও শাস্তি দেওয়ার বন্দোবস্ত নেই। বড় জোর জরিমানা করা হতে পারে বা কলেজের পরিচালন সমিতিকে জানানো হতে পারে।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “সবাই যে ইচ্ছা করে খাতা দেখতে দেরি করেন বা দায়িত্ব নিতে চান না, এমন নয়। কার সত্যিই সমস্যা রয়েছে, সেটা বোঝা দরকার।” বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিকদের অনেকেও এ ব্যাপারে একমত। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করে পরিচালন সমিতি। তা হলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কী করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে? সচিবের চিঠিতে লেখা হয়েছে, অধীনস্থ কলেজের অধ্যক্ষদের এই নিয়ম সম্বন্ধে জানাতে হবে। অধ্যক্ষেরাই বৈঠক ডেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এ ব্যাপারে অবহিত করবেন। দফতরের এক কর্তা বলেন, “অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কলেজের পরিচালন সমিতিই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে তেমন একটা সংস্থান রাখতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.