বলি বন্ধ হল বেলডাঙার কালীপুজোয়
ন্ধ্যার মুখ। গঙ্গার উপরে নৌকায় যাত্রী বেশি নেই। তারই মধ্যে এক সদ্য কিশোরী লাল ডুরে শাড়ি পরে সঙ্গী হলেন ত্রৈলোক্যনাথ পালের। সেই কন্যার নাকি আর কেউ নেই। তাঁর সঙ্গেই সে যেতে চায়। কিন্তু সে কালে সে বড় সহজ কথা নয়। ত্রৈলোক্যনাথ একটু অবাকও হয়ে গিয়েছিলেন। ফেরিওয়ালার কাজ। গঙ্গা পেরিয়ে তৎকালীন রাঢ় অঞ্চলে যেতে হত ত্রৈলোক্যনাথকে। এ বার সে রকমই গঙ্গা পেরিয়ে ফিরছেন বেলডাঙার বেনেপাড়ায় নিজের বাড়ি। তার মধ্যে এ কী কাণ্ড। বিব্রত ত্রৈলোক্যনাথ সেই কিশোরীকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তাকে ভুলতেও পারেননি। এই এলাকায় প্রচলিত জনশ্রুতি হল, সেই রাতেই ত্রৈলোক্যনাথ স্বপ্ন দেখেন সেই কিশোরীকে। সে ত্রৈলোক্যনাথকে বলে, তাঁর বাড়ির পাশেই অশত্থ গাছের নীচে প্রতিষ্ঠা করতে হবে কালীমূর্তি। তারপর থেকে এলাকার বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, কালীই সেই দিন কিশোরীর বেশে দেখা দিয়েছিলেন ত্রৈলোক্যনাথকে। সমাজতত্ত্ববিদেরা বলেন, নানা উৎসব ও পুণ্যচর্চার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমনই নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনও পুজোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা উৎসবকে দীর্ঘদিন ধরে রাখে। ওই কাহিনিই তখন ওই উৎসবের প্রধান শিকড় হয়ে ওঠে। সেই শিকড় একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে নানা ডালপালা মেলে বিস্তৃত জনপদের মধ্যে। কেউ ভয় পেয়ে, কেউ ভক্তিকে কেউ বা ঐতিহ্যের কথা ভেবে তখন সেই পুজোকে টেনে নিয়ে যান। ওই কাহিনির জন্যই সেই পুজো এবং উৎসব প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। অবিশ্বাস্য এই সব কাহিনির মোড়কেই থেকে যায় সুপ্রাচীন উৎসবের মেরুদণ্ডও। এই সব উৎসব কখনও কখনও কোনও কোনও জনপদের পরিচয়ও হয়ে ওঠে। বেলডাঙায়ও প্রায় দু’শো বছরের পুরনো ওই বুড়ি মা কালীপুজো ঘিরে এলাকার মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই। এখন সেখানে বড় মন্দির তৈরি হয়েছে। সারা বছর সব অমাবস্যাতেই সমারোহ করে পুজো হয়। তবে কালীপুজোর রাতে তা স্বাভাবিক কারণেই সব থেকে বেশি প্রাণ পায়। মন্দিরের মাথাটি কিন্তু খোলা। ছাদ নেই। তবে প্রাচীন সেই অশত্থ গাছ কয়েক বছর আগে ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। অতীতে এই পুজোতে ছাগ বলি দেওয়া হত। এ বার সেই বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সেই ২০০৮ সাল থেকে তাঁরা বলি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু এত পুরনো পুজোর নিয়মে পরিবর্তন ঝট করে আনা যায় না। তাই ওই সিদ্ধান্ত কাজে পরিণত করতে করতে ২০১১ লেগে গেল। মন্দির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কালী পুজোর রাতের পুজো সর্ব সাধারণের হওয়ায় প্রথার পরিবর্তন করা শক্ত ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বলি বন্ধ করা গিয়েছে। আমরা তা মাইকে করে ঘোষণাও করে দিয়েছি।” পুজোর পুরোহিত লক্ষ্মীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই পুজোর মাহাত্ম্য এতটাই ব্যাপক যে সারা রাজ্য এমনকী পাশের অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও মানুষ সারা বছর পুজো দিতে এই মন্দিরে আসেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.