রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
দেবিকা রায়, সুদীপ বসু, সুমিত ঘোষ...। নামগুলো যদি পরপর বলা হয়, কেউ চিনবে না। চেনার কথাও নয়।
কিন্তু যদি বলা হয়, এঁদের কেউ শিবদাস ভাদুড়ির মেয়ে, হাবুল সরকারের নাতি, কিংবা অভিলাষ ঘোষের ছেলে, তা হলে ‘টাইম মেশিনে’ একশো বছর পিছিয়ে যাওয়া যায় স্বচ্ছন্দে। ব্রিটিশ দলকে হারিয়ে ১৯১১-র শিল্ড জয়ী মোহনবাগান টিমকে তো আজও ভোলেনি বাঙালি!
মঙ্গলবার ইডেনের ভারত-ইংল্যান্ড ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে এমনিতে এঁদের কারও সম্পর্ক থাকার কথা নয়। মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের শতবর্ষে না হয় শিবদাস-বিজয়দাসদের পরিবারের সদস্যরা থাকতে পারেন, কিন্তু ক্রিকেট মাঠে কেন? কিন্তু আশ্চর্যের হলেও সম্পর্ক থাকছে। আজ ক্লাবহাউসের কোথাও যদি বসে থাকেন অভিলাষ ঘোষের ছেলে সুমিত, কিংবা শিবদাস ভাদুড়ির মেয়ে দেবিকা, তা হলে অবাক হওয়ার নেই। সিএবি নিজ উদ্যোগে এঁদের আনছে। কারণ? আর কী, সেই বিপক্ষে ব্রিটিশ বাহিনী আর তাদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার স্বপ্ন। একশো বছর আগে যাঁরা গোরাদের হারিয়ে শিল্ড দিয়েছিলেন মোহনবাগানকে, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা রইলেন ধোনিদের ইংল্যান্ড সফরের অভিশাপ কাটার দিনে। সিএবি-র যুগ্ম সচিব বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “মোহনবাগানের সেই ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ী ফুটবলারদের পরিবারের সদস্যদের আমরা ইডেনে নিয়ে আসছি ওয়ান ডে ম্যাচ দেখাতে।” |
কী করা যাবে, শহরের মন টানতে এর চেয়ে ভাল ‘ক্যাচলাইন’ তো আর পাচ্ছে না ইডেন!
সিএবি কর্তাদের হাতে গোছা গোছা টিকিট পড়ে। কিছু টিকিটপ্রত্যাশী আছে, কিন্তু সবই ‘কমপ্লিমেন্টারি’-র। ভাবখানা এমন, গাঁটের কড়ি খরচ করে ধোনির এই টিম ইন্ডিয়া-র আতসবাজি দেখার মানে নেই, বরং তা দিয়ে দীপাবলির রাতে নিজেরা আতসবাজি ফাটানো ভাল! ‘দাদা, একটা টিকিট হবে’ মার্কা চাহিদা ইডেনের চৌহদ্দি ঘুরে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ম্যাচের আগের সন্ধেতেও। অথচ কোনটা হল না চার দিকে? প্রচণ্ড নিরাপত্তার মধ্যে ধোনির টিম দুপুর-দুপুর শহরে ঢুকে পড়ল। রায়না-মনোজ তিওয়ারি যথারীতি কম্যান্ডো বেষ্টিত হয়ে বিকেল নাগাদ বেরিয়ে পড়লেন কালীঘাট মন্দিরের দিকে। গৌতম গম্ভীর হোটেলে ঢোকার আগেই খোঁজ নিয়েছেন, ইডেনের পিচ এ বার কেমন দাঁড়িয়েছে? আইপিএলের মতো ভোগাবে না তো? ইংল্যান্ড কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর বোলিং কোচ মুস্তাক আহমেদ পিচ দেখেও গেলেন। ইডেনের বাইরে তখন ক’জনের হাতে মোবাইল ক্যামেরা? মেরেকেটে দশ! সব দেখেশুনে সাংবাদিককুলও কেমন ঝিমিয়ে পড়েছে। স্টেডিয়ামের সামনে ওবি ভ্যান নেই। টিম হোটেলের বাইরে ভোঁ-ভা।
সিএবিও তো দুঃখের শিশিরবিন্দুতে ছয়লাপ। কর্তাদের কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন ২৭ ফেব্রুয়ারির দিনে। প্রশ্ন তুলছেন, কী হতে পারত, আর কী হচ্ছে। সেই ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ। বিশ্বকাপের বদলে এ বার ‘হোয়াইটওয়াশে’র সম্ভাব্য ঠিকানা। কিন্তু আবহে আসমান-জমিন ফারাক। এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলছিলেন, “আফসোসটাই শুধু করতে পারি। সে দিনের ইডেনের সঙ্গে আজকের ইডেনে কোথায় তফাত? জঞ্জাল সাফ ছাড়া নতুন কোন কাজটা হয়েছে? কোথায় বিশ্বকাপের ভারত-ইংল্যান্ড, আর কোথায় এখনকার ভারত-ইংল্যান্ড!”
একটুও ভুল নেই। বাইশ গজে ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ততা আছে। রাতের আলোয় মায়াবী ইডেন আছে। দীপাবলির আগে ‘হোয়াইটওয়াশে’র মঞ্চ আছে। আছেন ধোনি, আছেন কুক। কাঠামো প্রস্তুত।
শুধু হৃদয়টাই নেই! |