বছরের গোড়ায় গত বিশ্বকাপের সময়ই আমার শহরের একটা ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ দেখার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে ম্যাচ অন্যত্র চলে গিয়েছিল। সেই সময় কার দোষে ম্যাচ হারাতে হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। বরং মঙ্গলবার ইডেনে চমৎকার এক ক্রিকেটীয় আবহের অপেক্ষায় আছি। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ভারত এখনই ৪-০ এগিয়ে এবং কোনও সন্দেহ নেই, ধোনি ও তার তারুণ্যে ভরা টিম নবনির্মিত ইডেনে ‘ব্রাউনওয়াশ’-টা সেরে ফেলতে চাইবে।
ক্রিকেটে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী চলে না, কিন্তু এখন পর্যন্ত সিরিজে দুটো টিম যা ক্রিকেট খেলেছে, তাতে ইংল্যান্ডের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো শক্ত। না স্পিনার, না সিমার ওদের ব্যাটিং কোনও ভারতীয় বোলিংই খেলতে পারেনি। এমনকী রান স্কোরিংয়ের ধরনটাও সামলাতে পারেনি কুক অ্যান্ড কোম্পানি। একটা ওয়ান ডে ম্যাচে স্রেফ বাউন্ডারি মেরে রান করা যায় না। একজন ব্যাটসম্যানকে ইনিংসটাকে গুছোতে হয়। কখনও সেটা বাউন্ডারি মেরে, আবার কখনও এক বা দুই নিয়ে স্কোরবোর্ডকে সচল রেখে। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এত বেশি ডট বল খেলেছে যে, নিজেদের উপর চাপটা বেড়েছে। তার ফলে ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে হয়েছে এবং ফল হিসেবে পরপর উইকেট খোয়ানো। আমি আরও অবাক হয়েছি এখন পর্যন্ত একটাও ম্যাচে ইয়ান বেল-কে খেলতে না দেখে। একজন ইংরেজ ব্যাটসম্যানকেও ক্রিজে জমাট মনে হয়নি। অথচ প্রথম এগারোয় কি না বেল-এর নাম নেই! আশা করা যাক ইংরেজ ড্রেসিংরুমের সামান্য বুদ্ধি হবে এবং আমরা ইডেনে বেল-কে দেখব। মুম্বইয়ে ইংল্যান্ড যে পেস বোলিং কম্বিনেশন খেলিয়েছিল সেটা আমার ভাল লেগেছে। বিশেষ করে মিকার-কে দেখে খুব প্রতিশ্রুতিবান মনে হয়েছে। পেস আছে, বল মুভ করাতে পারে। ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ হতে পারে।
ভারতের হয়ে বরুণ অ্যারন-কে বল করতে দেখা খুব তৃপ্তিদায়ক। এই তরুণ ফাস্ট বোলারকে ভবিষ্যতের জন্য খুব সাবধানে ব্যবহার করা দরকার। ওর পেস আছে, পরিণত হলে বিদেশের পরিবেশেও একজন ম্যাচউইনার হতে পারে। বরুণ অ্যারন বা উমেশ যাদবের মতো তরুণদের উঠে আসা খুব ইতিবাচক একটা ব্যাপার। আবার বলছি, জাহির খানের ছায়া থেকে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টকে বেরোতে হলে ওদের খুব সাবধানে ব্যবহার করা দরকার।
তারুণ্যে ভরা ভারতীয় ব্যাটিংকে ওয়ান ডে-তে বেশ জমাট দেখাচ্ছে। সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, ম্যাচের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কখনওই এই ভারতকে দেখে চাপে আছে বলে মনে হচ্ছে না। আর রায়না, কোহলি বা রাহানেরা ইচ্ছে মতো ইংল্যান্ডের বোলিংকে ব্যবহার করে এক-দুই নিয়েছে, যেটা ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা পাল্টা পারেনি। কাজেই আস্কিং রেট কখনও ভারতের হাতের বাইরে যায়নি। এই সিরিজে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি কাউকে বাছতে হয়, নিঃসন্দেহে সে হবে বিরাট কোহলি। ও প্রতিদিনই উন্নতি করছে আর ভাঁড়ারে প্রচুর শট আছে। আমার মনে হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্টে ওকে সুযোগ দেওয়ার এটাই সেরা সময়। তা হলে গুরুত্বপূর্ণ অস্ট্রেলিয়া সফরে ও মহাতারকাদের ব্যাক-আপ হিসেবে তৈরি থাকবে। আশা করব, ধোনিরা ঘরের মাঠে মনোজ তিওয়ারিকে খেলার একটা সুযোগ দেবে। ও যথেষ্ট প্রতিভাবান, দুর্দান্ত ফিল্ডার এবং উপযুক্ত সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটের কাজে লাগবে।
কলকাতায় গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। কাজেই উইকেটে তাজা ভাব শুরুর দিকটায় থাকবে। এটা মরসুমের শুরু। কাজেই ইডেনের উইকেটে টিপিক্যাল লো-স্লো ট্র্যাক হতে যাচ্ছে। যেখানে ম্যাচ যত এগোবে, স্লো বোলাররা সাহায্য পাবে। শিশিরও বছরের এই সময়টায় ফ্যাক্টর হতে পারে। অ্যালিস্টার কুক সব ক’টা টস জিতেও কিছুই করতে পারেনি। কাজেই মাঠের অবস্থা যাই হোক, ইংল্যান্ডের জঘন্য পারফরম্যান্সের জন্য সেটা অবান্তর। |