ইংরেজদের চুনকাম করার স্বপ্ন আজ ইডেনে
উত্তেজনা নেই, সামনে আছে ইতিহাসের ডাক
-০ হয়ে গেলে ইডেনে ভিকট্রি ল্যাপ দেবেন?
বিশ্বকাপ জয়ের ওয়াংখেড়েতে এইমাত্র ইংল্যান্ডকে হারিয়ে উঠলেন। বাকি রইল মঙ্গলবারের ইডেন। সেখানে জেতা মানে ৫-০ হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যপূরণ।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ইতস্তত করতে শুরু করলেন। ভাবখানা এমন যে, এই তো ইংল্যান্ড টিম! আড়াইশোও তুলতে পারে না। তাদের হারিয়ে আবার কী ভিকট্রি ল্যাপ দেব? কিছুটা নারাজ ভঙ্গিতেই তিনি প্রথমে আনন্দবাজারকে বললেন, “ভিকট্রি ল্যাপ...হুঁ...ঠিক বুঝতে পারছি না। এটা তো কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতলাম এমনও নয়। শুধুই সিরিজ জয়।” ওয়াংখেড়ের এ পার থেকে ও পারে ড্রেসিংরুমে ফেরত যেতে যেতে তবু যে ভারত অধিনায়ক ভাবনাটা মাথার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন, তার কারণ ইডেনের ‘বঞ্চিত’ দর্শক।
বিশ্বকাপের একটা ম্যাচেও তাঁর টিমকে দেখার সুযোগ হয়নি কলকাতার। ধোনি যা নিয়ে বেশ আক্ষেপই করেছিলেন। আর তিনি নিজেও খেয়াল করেননি যে, ইডেন এত ঐতিহাসিক মাঠ আখ্যা পেলেও ভারতীয় ওয়ান ডে দলের শ্যাম্পেনের ফোয়ারা খুব বেশি ছোটেনি এখানে।
ম্যাচের আগের দিন ড্রেসিংরুমে ধোনিদের পা না পড়লেও পৌঁছল তাঁদের কিট। ছবি: উৎপল সরকার।
পরিসংখ্যান বলছে, ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৩ হিরো কাপ ফাইনাল বাদ দিলে ভারতীয় এক দিনের দলের দারুণ সেলিব্রেশনের ছবি ইডেনে নেই। বিরল টেস্ট জয়ের নজির গত দু’দশকে অনেক রয়েছে। সৌরভের টিম ইন্ডিয়ার হাতে স্টিভের অস্ট্রেলিয়া-বধ। ধোনির ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো। আরও পিছনে হাঁটলে ১৯৭৪-৭৫ সিরিজে দর্শক ব্যারাকিং অগ্রাহ্য করে চন্দ্রশেখরকে দিয়ে পটৌডির বল করিয়ে যাওয়া এবং লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিধন। কিন্তু সেগুলোও প্রথম টেস্ট বা মাঝখানে। সিরিজ জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ নয়।
সাতাশির রিলায়্যান্স বিশ্বকাপে এখানে ফাইনাল খেলেছে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। দু’বছর পরের এমআরএফ কাপের ফাইনাল খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান। ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সেই মহাবিতর্কিত সেমিফাইনালে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হার। সাতানব্বইয়ের ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনাল। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের নাম পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা। সৌরভ-সচিনদের আমলে টিম ইন্ডিয়ার অমন রমরমার যুগে ২০০৩-এর নভেম্বরে টিভিএস কাপ ফাইনাল। সৌরভ চোটের জন্য না খেলতে পারায় টিমকে নেতৃত্ব দেন রাহুল দ্রাবিড়। অস্ট্রেলিয়া ২৭ রানে জিতে কাপ নিয়ে যায়। ইডেনে আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় দল কাপ ফাইনাল জিতেছে তিনটে। তার একটা আবার ১৯৯৮-এ কেনিয়াকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। কী ভিকট্রি ল্যাপ হবে? আর একটা দু’দশক আগে এশিয়া কাপ। শ্রীলঙ্কাকে সাত উইকেটে হারিয়ে কাপ জেতে ভারত।
নিছকই ওয়ান ডে ক্রিকেটের প্রিজমে দেখতে গেলে, ইতিহাসের ইডেন নয়। বরং ইতিহাস আটকে থাকা ইডেন। সেখানেই আর কয়েক ঘণ্টা বাদে প্রতিবেশী রাঁচির রাজপুত এমন একটা মহাসন্ধিক্ষণ নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন যে, হালফিলে এ রকম রামধনুর রং আর উদয় হয়নি কলকাতা এবং ইডেনের জন্য। না হোক কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল। কিন্তু দু’টো নদীর জল মিশে প্রয়াগের দর্শনস্থলের মতোই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এক) আজ পর্যন্ত ৫-০ হোয়াইটওয়াশের আবহে আর কোনও ভারতীয় দল কখনও খেলতে নামেনি। মঙ্গলবার অন্তিম লড়াই বলে একটা ফাইনাল-ফাইনাল ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে। দুই) ধোনিরা মোহালিতে সিরিজ জিতে গেলেও ট্রফিটা হাতে পাবেন আজ ইডেনে। হাতে পাওয়া সেই ট্রফিটা নিয়ে ইডেনে বিজয় দৌড় তো শুরু হতেই পারে, তাই না? ধোনি এ বার ঘাড় নাড়লেন, “হুঁ, তা তো হতেই পারে। দেখি করা যায় কি না।”
কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে রায়না। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মুম্বই থেকে ফিরে সোমবার আর প্র্যাক্টিসে আসেনি কোনও দলই। সরাসরি মঙ্গলবার ম্যাচ খেলতে ঢুকবে। মনে হয় না ভারত অধিনায়ককে পিচের ঘাস ছাঁটা নিয়ে কোনও বাড়তি এনার্জি ক্ষয় করতে হবে বলে। যেমন আগে অনেক বার অনেক অধিনায়ককে করতে হয়েছে। গরিষ্ঠ অংশের বক্তব্য ইংল্যান্ড ঠিক যেটা চায় না, সেটাই হয়েছে। স্লো টার্নার। রাতারাতি এই ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটীয় যোগ্যতায় অভিনব উন্নতি ঘটে ৫-০ আটকে যাবে এমনও কেউ আশা করছে না। বরং ইডেনে প্রায় দু’দশক ধরে না হওয়া ভিকট্রি ল্যাপের দুঃখ ঘোচানোর মাঝে রয়েছে শুধু একটাই বাধা। দর্শক উপস্থিতির সম্ভাব্য দুর্বল সংখ্যা। সিএবি থেকে এ দিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ যে হিসেব দেওয়া হল তা হচ্ছে, এখনকার মোট দর্শকাসন কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার। টিকিট বণ্টনের যা হার তাতে ২৫ হাজার মতো দর্শক আশা করা যায়।
অনেকের মনে হচ্ছে, টিকিটের যা দাম, মন্দার বাজারে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কিনে ফেলা যায়। ৫০০, ১০০০ এবং ১৫০০ টাকার। সিএবি-র অভ্যন্তরেই কারও কারও মনে হচ্ছে, টিকিটের দামটা আরও কম রাখা উচিত ছিল। টিকিট কেনার সঙ্গে আকর্ষণীয় লটারি জেতার মতো অভিনবত্বও নেই যে, অমুক লাকি উইনার পাবেন হিরো হন্ডা মোটরবাইক। বা এলসিডি টিভি। গ্যালারি ফাঁকা পড়ে থাকলে ৫-০ জিতলেও কি ভিকট্রি ল্যাপের উৎসাহ আর থাকবে ধোনি ব্রিগেডের?
স্থানীয় তারকা-টারকা থাকলে আগ্রহের বহরটা বাড়ে। এখানে সেটা নিয়েও নিশ্চয়তা নেই। মনোজ তিওয়ারি বাংলা থেকে একমাত্র ক্রিকেটার কিন্তু প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছেন না। ঘরের মাঠে পাবেনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। টিম ম্যানেজমেন্টের যা হাবভাব, ৫-০ করার খুনে বাসনায় উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখা হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, পার্থিব পটেলকে বসিয়ে মনোজকে খেলানো উচিত। পার্থিব চারটে ম্যাচে করেছেন ৬৭। গড় ১৬.৭৫। সর্বোচ্চ ৩৮। মনোজকে খেলানো হলে রাহানের সঙ্গে ওপেন করবেন গম্ভীর। কেকেআরের সৌজন্যে কলকাতা এখন যাঁর ‘সেকেন্ড হোম’। নতুন কাউকে চেষ্টা করবেন কি না জানতে চাইলে ধোনি আবার বললেন, “আমি তো সিরিজের শুরু থেকে নতুনদেরই ট্রাই করে যাচ্ছি।” একেবারে অনভিজ্ঞ, তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কী ভাবে বদলার সিরিজ খেলে চলেছেন, মনে হল সে দিকেই ইঙ্গিত করতে চাইছেন।
কলকাতায় ম্যাচ। ইংরেজদের ৫-০ দুরমুশের সম্ভাবনা। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কি মাঠে আসছেন? আর আপনিও কি স্ট্রেট কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শ্বশুরবাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি থেকে সোজা ম্যাচ খেলতে ইডেনে? ধোনি হাসলেন, “না, না। কেউ নেই তো ওখানে। সবাই রাঁচি। আমি এই ম্যাচটা খেলে বাড়ি ফিরব। তার পর আবার এসে টি-টোয়েন্টিটা খেলব। চার মাস পর বাড়ি যাচ্ছি!”
দিল্লি যাচ্ছেন না? “এফ ওয়ান দেখতে কে না যাবে?” বলেই ধোনি দ্রুত যোগ করলেন, “সে দিন দেখবেন সারা দেশের সব সেলিব্রিটি ওখানেই রয়েছে।” টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে উঠে পরের সকালেই উড়ে যাচ্ছেন রাজধানী। গাড়ির ঝড় দেখতে যাওয়ার আগে শুধু ইডেনে তাঁর তরুণ ব্রিগেডের গাড়ির তলায় ইংল্যান্ডকে পিষে দিয়ে যেতে চান।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.