|
|
|
|
রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানোই লক্ষ্য |
‘জৈব গ্রাম’ গড়ার উদ্যোগ পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি দফতর। এ জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে ‘জৈব গ্রাম’। আপাতত, পরীক্ষামূলক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের ছ’টি এলাকায় বিস্তীর্ণ জমিতে জৈব সারে চাষের কাজ শুরু হয়েছে। আরও বেশ কিছু এলাকায় জৈব সারে চাষের কাজ শুরু করার কথা ভেবেছে কৃষি দফতর। রাজ্য সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তপন ভুঁইয়া বলেন, “চাষের খরচ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই জৈব সারে চাষের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” তবে এ ক্ষেত্রে চাষিদের অনীহা রয়েছে মেনেই কৃষি দফতর জানাচ্ছে, অনীহা কাটাতে আলোচনাসভা হচ্ছে। সেখানে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়ে অনেকেই জৈব সারে চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
মাটিতে জৈব বস্তু ছাড়া জীবাণু বাঁচে না, জীবাণু না থাকলে জৈব বস্তুর পচন হয় না। জীবাণুর অনুপস্থিতিতে আবার রাসায়নিক সারের কার্যকারিতাও পাওয়া যায় না। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বেশি ফলন পাওয়ার আশায় বেহিসেবি রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে এক দিকে যেমন মাটির ক্ষতি হচ্ছে, তেমন উপকারী জীবাণুগুলিও নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে মাটির অম্লতা বেড়ে যাচ্ছে। জৈব সারে চাষ হলে এই পরিস্থিতি দেখা দেবে না, বরং মাটি আরও সজীব থাকবে। ইতিমধ্যেই জেলার ছ’টি এলাকায় জৈব সারে চাষের কাজ শুরু হয়েছে। ঘাটালের জলসরা, দাসপুরের বেলিয়াঘাটা, ডেবরার গোবিন্দপুর ও গোপালপাঁজা, নারায়ণগড়ের আসন্দা, কেশপুরের মন্টাগোনিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ চলছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রাষ্ট্রীয় কৃষিবিকাশ যোজনা ও রাজ্য পরিকল্পনার আওতায় জেলার আরও ৩৯টি এলাকায় রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সারে চাষের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে আগেই এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (শস্যসুরক্ষা) তপন ভাণ্ডারির কথায়, “রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে এখন কীটশত্রু যত না মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে অন্য উপকারী পোকা। শস্যসুরক্ষায় তো উপকারী জীবাণুর প্রভাব থাকেই।” জমিতে ফসল থাকলে তার রোগ-পোকাও থাকবে। জৈব পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে সুস্থ রাখার পদ্ধতি আজকের নয়, আগে থেকেই চলে আসছে। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, জৈব পদার্থ-সমৃদ্ধ আদর্শ মাটির প্রতি গ্রামে ১ কোটি ব্যাকটেরিয়া, ১০ লক্ষ ছত্রাক, ১ লক্ষ অ্যাকটিনোমাইসিটিস থাকতে পারে। আবার, ১ একর জমির ১৫-২০ সেমি গভীর মাটিতে ১৮০-১৮০০ কোটি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। অনিয়ন্ত্রিত ও বেহিসেবি রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে কৃষি-ব্যবস্থাই সঙ্কটের মুখে পড়েছে। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “গত কয়েক বছরে এমন বহু কীটপতঙ্গ ফসলের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, যারা ফসলের শত্রুই নয়। বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলেই এই অবস্থা। পরিস্থিতি দেখেই জৈব সারে চাষের কাজ শুরুর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায়, রোগ-কীটশত্রু-আগাছা নিয়ন্ত্রণে, এমনকী রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও জৈব সারের বিকল্প নেই।” |
|
|
|
|
|