কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গ্রামের প্রবীণেরাও কেউ জানেন না। তবে লোকমুখে পুজোর বয়স কয়েকশো বছরের প্রাচীন। আর পাণ্ডুয়া গঞ্জের অদূরে মণ্ডলাই গ্রামের এই প্রাচীন ‘পথের মা’ কে নিয়েই কালীপুজোয় মেতে ওঠে গ্রামের মানুষ। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষও ভিড় করেন পুজোয়। প্রাচীন মন্দিরের এই পুজোকে স্থানীয় মানুষ ‘পথের মা’ বা ‘পথের কালী’ বলতেই অভ্যস্ত।
কালীপুজোকে কেন্দ্র করে হুগলির যে কয়েকটি জনপদ রীতিমত মেতে ওঠে পাণ্ডুয়া তার মধ্যে অন্যতম। এক রাতের পুজো হলেও আদতে মেলা, মণ্ডপে মণ্ডপে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভাইফোঁটা পর্যন্ত জমজমাট থাকে গোটা পাণ্ডুয়া। তবে এখন আগের চেয়ে পাণ্ডুয়ায় সর্বজনীন পুজোর সংখ্যা বাড়ায় চন্দননগরের আদলে কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের আওতায় রয়েছে মোট ৪০টি পুজো কমিটি। অধিকাংশ পুজোই জিটি রোডের দু’ধার ঘেঁসে। |
স্টেশন লাগোয়া কালীমাতা ব্যবসায়ী সমিতির পুজো এবার ৫০ বছরে পা দিয়েছে। প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার চোখধাঁধানো মণ্ডপ। তার সঙ্গে আলোর রোশনাই। উৎসবের সবটুকু রঙ আর আলো যেন শুষে নিয়েছে এই পুজো কমিটি। দক্ষিণপাড়া ব্যবসায়ী সমিতির পুজো এবার পা দিয়েছে ৫৩ বছরে। কাল্পনিক মন্দির তৈরি করা হয়েছে খেজুর গাছের ছাল দিয়ে। প্রতিমার উচ্চতা চোখে পড়ার মত। জঙ্গলমহল নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম এখন। সেই আবহকে অনুষঙ্গ করে জঙ্গলমহল এবার কালীপুজোর বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে পাণ্ডুয়ায়। জঙ্গলমহলের আদিবাসী রাজবাড়ির আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। কৃষ্ণনগরের প্রতিমাতেও যেন আদিবাসী আদল মিলেমিশে একাকার। কালনা রোড বাবসায়ী সমিতি ও বেলেপাড়া যুব সম্প্রদায়ের এই পুজো ঘিরে উৎসাহ এবার চোখে পড়ার মত।
ওড়িশার ধবলগিরির আদলে ৩৭ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি করেছেন এ বার মধ্যমপাড়া ব্যবসায়ী তরুণ সঙ্ঘ। পাহাড়ের গুহার মধ্যে প্রতিমা। সঙ্গে চন্দননগরের আলো এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করেছে মণ্ডপ জুড়ে। জিটি রোডের উপর প্রগতি সঙ্ঘের পুজোর থিম জমিদার বাড়ি। নদিয়ার চাকদার শিল্পী তৈরি করেছেন প্রতিমা। কালীতলা ব্যবসায়ী সমিতির পুজোয় আলোয় থাকছে সদ্য ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা।
মেদিনীপুরের কঙ্কাল কান্ডের সঙ্গেই রয়েছে বিশালাকায় চোখে পড়ার মত ময়াল সাপ। পশ্চিমপাড়া ব্যবসায়ী সমিতির পুজোর আকর্ষণ চন্দননগরের আলো। ঠাকুর দেখতে বের হয়ে হয়ে বন্যার কবলে পড়া বোধহয় এড়ানো যাবে না এ বার পাণ্ডুয়ায়। বন্যার আবহে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তির আশায় মানুষ দেবীর আরাধোনা করছেন এখানে। পোড়ো মন্দিরের আবহে পুকুরে হাঁস চরছে, জলে সাপ। নীরদগড়ের সবুজ সংঘের পুজোয় এ বার একেবারে গ্রামের আবহ।
থিম, প্রাচীনত্ব, রকমারি আলোর খেলা নিয়ে পাণ্ডুয়ার কালীপুজোর মেজাজ এ বার বেশ চড়া। |