উলুবেড়িয়া পুরসভার কাছ থেকে বকেয়া ১ কোটি ৫৯ কোটি টাকা।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাছে বকেয়া ৩৩ লক্ষ টাকা।
পুলিশের কাছ থেকে বিদ্যুতের বিল বাবদ বকেয়া ১৯ লক্ষ টাকা।
এক দিকে যখন টাকার অভাবে কয়লার দাম মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকে, তখন বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছ থেকেই তাদের এমন বিপুল অঙ্কের টাকা পাওনা। এই পরিস্থিতি হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এক পদস্থ আধিকারিকের দাবি, বকেয়া টাকা আদায় করতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে বার বার তাগাদা দেওয়া হয়। কেটে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। কিন্তু হাল ফেরে না তারপরেও।
হাওড়া জেলায় বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির তিনটি ডিভিশন। এগুলি হল ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং উলুবেড়িয়া। তিনটি ডিভিশনই তাদের অধীনে থাকা বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছে বিদ্যুতের বিল বাবদ প্রচুর টাকা পাবে। সংস্থার রাজ্য দফতর সূত্রের খবর, শুধুমাত্র ডিভিশন ২-এর অধীনেই পুলিশের কাছ থেকে বিদ্যুতের বিল বাবদ বকেয়া রয়েছে ১৯ লক্ষ টাকা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাছে বকেয়া রয়েছে ৩৩ লক্ষ টাকা। স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে তারা পাবে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। পরিস্থিতি এমননই যে এই ডিভিশনের পদস্থ কর্তাদের প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন সরকারি দফতরে নিয়মিত ধর্না দিতে হচ্ছে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য। কয়েকটি দফতর থেকে বলা হচ্ছে, নিয়মিত বিল পাচ্ছে না। বণ্টন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের নকল বিল দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও বকেয়া মেটানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
একই অবস্থা বণ্টন কোম্পানির ডিভিশন-১ এবং উলুবেড়িয়া ডিভিশনে। বহু টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে এই দু’টি ডিভিশনের অধীন বিভিন্ন সরকারি দফতরে। বণ্টন কোম্পানির রাজ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় তিনটি ডিভিশন মিলিয়ে সরকারি দফতরগুলির কাছে বিদ্যুতের বিল বাবদ মোট বকেয়া পড়ে রয়েছে ৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র উলুবেড়িয়া পুরসভার কাছেই বণ্টন কোম্পানি পাবে ১ কোটি ৫৯ কোটি টাকা!
গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পাম্প চালানোর জন্য যে বিদ্যুৎ লাগে তার বিল বকেয়া পড়ে থাকে বছরের পর বছর ধরে। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতিই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হয়ে বিদ্যুতের বিল মেটায়। কিন্তু তা নিয়মিত মেটানো হয় না বলে অভিযোগ। যেমন আমতা ১ ব্লকে এ বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ বলেন, “সরকারি বরাদ্দ যখন যেমন আসে তেমন বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়।” শুধু তাই নয়, নদী থেকে জল তুলে পাম্পের সাহায্যে জমিতে দেওয়ার জন্যও প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। কিন্তু এ বাবদও বহু টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েতগুলির কাছে। তাদেরও বক্তব্য, ক্ষুদ্র সেচ দফতর থেকে বরাদ্দ নিয়মিত না-আসায় টাকা মেটাতে সমস্যা হয়। উলুবেড়িয়া পুরসভা রাস্তায় আলো দেয়। পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করে। এ বাবদ বহু টাকার বিদ্যুতের বিল বাকি রেখেছে তারা।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মূলত পুলিশ আবাসনে যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে, তা বাবদ বকেয়া আছে। তবে তবে, এ ব্যাপারে জেলার কিছু করার নেই। রাজ্যস্তর থেকে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অন্য দিকে, উলুবেড়িয়া পুরসভার দেবদাস ঘোষ বলেন, “কেএমডিএ একটি জলপ্রকল্প করেছে। তার পাম্প চালাতে গিয়ে এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎতের বিল আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। কেএমডিএ এখনও সরকারি ভাবে প্রকল্পটি পুরসভাকে হস্তান্তর করেনি। সরকারি ভাবে প্রকল্পটি হাতে এলে পুরসভার তরফে বকেয়া মেটানোর কথা ভাবা হবে।”
সরকারি দফতরগুলি বহু টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখায় যে সমস্যা হচ্ছে সে কথা স্বীকার করে বণ্টন কোম্পানির অধিকর্তা (আরঅ্যান্ডটি) অনির্বাণ গুহ বলেন, “বকেয়া টাকা আদায় করার জন্য আমরা নিয়মিত তাগাদা দিই। প্রয়োজন হলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। এ ভাবেই বকেয়া আদায়ের চেষ্টা চলে।’’ তবে বণ্টন সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, সরকারি দফতরগুলির কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁরা খুব কঠোর হতে পারেন না। কারণ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিলে সাধারণ মানুষই ভুগবেন। পুলিশের কাছ থেকেও বকেয়া আদায় করতে গিয়ে খুব বেশি কঠোর হওয়া যায় না। কারণ, কোনও বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে গেলে বণ্টন কোম্পানির কর্মীদেরই পুলিশের সহায়তা নিতে হয়। ফলে তাঁদের হাত-পা বাঁধা। ওই আধিকারিকের মতে, সরকারি দফতরগুলি যাতে বিদ্যুতের বিল বাকি না-রাখে সে জন্য রাজ্য পর্যায়ে বসে সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করা উচিত। |