প্রবন্ধ ২...
কয়লা আর বেশি দিন নয়
ভবিষ্যতে সৌরশক্তিই ভরসা
দীপাবলিতে দেশে আলো জ্বলবে বলে ভরসা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। কিন্তু কয়লার ওপরেই ভরসা রাখলে যে বেশি দিন আলো জ্বলবে না, এটা মেনে নেওয়া ভাল। কেননা, মাটির নীচে যত কয়লা আছে, তা চাইলেই তোলা যাবে না। যে কয়লা অনেক নীচে, তা তুলে আনার প্রযুক্তিগত সমস্যা যেমন রয়েছে, যে কয়লা রয়েছে অরণ্য বা জনপদের নিচে, তা কেমন করে তোলা হবে, প্রশ্ন সেটাও। বিদেশি কয়লা বা জলবিদ্যুৎ-পরমাণু বিদ্যুৎ, কোনওটাই সমাধান নয়।
এ সব কথা মনে রেখেই সৌর বিদ্যুতের ওপর জোর দিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য হল, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে অন্তত ২০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে উঠুক।
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন নিয়ম করেছিল, রাজ্যের চার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি, দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল), দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি এবং সিইএসসি তাদের মোট বিদ্যুৎ বিক্রির মধ্যে একটা নির্দিষ্ট অংশ বিদ্যুৎ কিনবে বিকল্প বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে। ২০১০-১১ সালে তা ছিল ২%, ২০১১-১২ সালে ৩% ও ২০১২-১৩ সালে ৪% হারে। বাস্তবে, বণ্টন কোম্পানি সামান্য কিছু ‘বায়ো মাস’ (জৈব ভার) বিদ্যুৎ কেনে বাঁকুড়ার একটি প্রকল্প থেকে আর সামান্য বায়ু বিদ্যুৎ কেনে ফ্রেজারগঞ্জের প্রকল্প থেকে। অন্যান্য সংস্থা কিছুই কেনে না। তাদের অজুহাত, রাজ্যে কেনবার মতো বিকল্প বিদ্যুৎ কোথায়? অথচ, অন্তত ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগীরা এ রাজ্যেই জমি পর্যন্ত কিনে বসে রয়েছে।
এ রাজ্য পিছিয়ে থাকলেও তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য রাজ্য। গুজরাতে নির্মাণের কাজ চলছে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের, কর্নাটকে ৩০০ মেগাওয়াট, রাজস্থানে ২৮০ মেগাওয়াট, মহারাষ্ট্রে ২০০ মেগাওয়াট আর অন্ধ্রপ্রদেশে ১৫০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের। মোট ১১৩০ মেগাওয়াট। এ রাজ্যে শূন্য। অথচ, কয়েক বছর আগে এ রাজ্যেই দেশের প্রথম গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। আসানসোলের দিশেরগড়ে সেই দু’ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দিব্যি চলছে।
ভবিষ্যৎ! সৌরশক্তি-চালিত রিকশা ‘সোলেকশ’-র উদ্বোধন করছেন কেন্দ্রে
যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের প্রতিমন্ত্রী সচিন পাইলট । নয়াদিল্লি, জুলাই, ২০১০
পুরুলিয়ায় ৫০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য ১৫০ একর জমি কিনে রেখেছে ভাস্কর সোলার সংস্থা। পুরুলিয়াতেই ৬০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক নির্মাণ করতে চায় আরেকটি সংস্থা। একটি জার্মান সংস্থা বাঁকুড়ায় ১০ মেগাওয়াটের প্রকল্পের জন্য ৪০ একর জমি কিনে ফেলেছে। পুরুলিয়ায় আরেকটি ২৫ মেগাওয়াটের প্রকল্পের জন্য ১০০ একর জমি কিনেছে রিলায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং। ভিডিওকন পুরুলিয়ায় ৩০ একর জমি কিনেছে ১০ মেগাওয়াটের প্রকল্পের জন্য। বাঁকুড়ায় আট মেগাওয়াটের প্রকল্পের জন্য ২৫ একর জমি কিনেছে অমৃত বায়ো এনার্জি। মোট ১৬৩ মেগাওয়াট। প্রকল্পগুলি গড়ে উঠলে রাজ্যে লগ্নি হবে ১৬০০ কোটি টাকা।
তা সত্ত্বেও বিকল্প বিদ্যুৎ কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না বণ্টন সংস্থারা। তারা আগ্রহী নয় বলেই জমি কেনার পরও নির্মাণ শুরু হচ্ছে না এই প্রকল্পগুলির। কমিশনের নির্দেশ পালন না করলে কোনও শাস্তিরও ব্যবস্থা নেই।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থারা কেন কিনতে চায় না বিকল্প বিদ্যুৎ? তারা বলছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ইত্যাদি রাজ্যে বিকল্প বিদ্যুতের জন্য যতটা ব্যয় হয়, তা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হয় মাসুলের উপর সারচার্জ বসিয়ে। এখানে ওই ব্যয় বিদ্যুৎ মাসুলের অঙ্গ। তাদের মতে, বিকল্প বিদ্যুৎ বাবদ যতটা মাসুল, তা সামগ্রিক মাসুলের মধ্যে ঢুকে থাকলে গ্রাহকেরা সেটা বুঝতে পারেন না। এতে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয় বলে বিদ্যুৎ সংস্থাদের দাবি। অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও বিকল্প বিদ্যুৎ বাবদ ব্যয় সারচার্জ হিসাবে দেখালে তারা ওই বিদ্যুৎ কিনতে রাজি আছে। কেউ কেউ বলছেন, সৌর বিদ্যুৎ আরও সস্তা হলে তখন কেনা যাবে। তার আগে গ্রাহকদের উপর বোঝা চাপিয়ে কী লাভ? অথচ, এই তথাকথিত বোঝা ইউনিট-প্রতি নেহাতই দু’চার পয়সা। আর, বিকল্প বিদ্যুতের প্রসার শুরু হতে দেরি হলে তা সস্তা হয়ে উঠতেও দেরি হবে।
কিন্তু এটা একটা সাময়িক সমস্যার ব্যাপার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে সৌর বিদ্যুতের দাম পড়ছে আর যে হারে বাড়ছে তাপবিদ্যুতের দাম, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই দু’ রকম বিদ্যুতের দাম এক হয়ে যাবে। তার পর সৌর বিদ্যুৎ তাপবিদ্যুতের চেয়ে কম দামে বিক্রি হবে।
গড় হিসাবে বছরের ২৪০ দিন পাওয়া যায় সৌর বিদ্যুৎ। গড়ে দিনের আট ঘণ্টা ধরে উৎপন্ন হয় সৌর বিদ্যুৎ। এই আট ঘণ্টা কয়লার বিদ্যুতের বদলে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে প্রতি দিন বাঁচবে সাত হাজার টন বা ২৪ লক্ষ টাকার কয়লা। বছরের ২৮০ দিনে ২০ লক্ষ টন কয়লা বা ৬৫ কোটি টাকা। এখন কয়লার জোগানের যা হাল, তাতে এ ভাবে কয়লা বাঁচিয়ে চললে নিজেদেরই সুবিধে।
সৌর বিদ্যুৎ তো আর ব্যবহার করলে কয়লার মত ফুরিয়ে যায় না। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, ২০৫০ সালে হয়তো তাপবিদ্যুৎ কেনবার জন্যই বণ্টন সংস্থারা দাবি করবে মাসুলে আলাদা সারচার্জ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.