|
|
|
|
প্রবন্ধ ১... |
মাওবাদ: রাজনৈতিক সংগ্রামই একমাত্র উত্তর |
সেই সংগ্রাম পরিচালনার সক্ষমতা তৃণমূল কংগ্রেসের নেই,
রেজিমেন্টেড দলগুলিরও নেই। অন্য দিকে, গণতন্ত্রকে দলিত করে
জল্লাদবৃত্তি চালালে মাওবাদীরাও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। অসীম চট্টোপাধ্যায় |
জনজীবনের জটিল সমস্যাগুলির তাৎক্ষণিক, আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় ‘ফটাফট’ সমাধান যে আসলে সমস্যাকে আরও জটিল করে কার্যক্ষেত্রে বিপরীত ফলদায়ী হয়, জঙ্গলমহল তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সিঙ্গুরের জমি, পাহাড়-তরাই, বন্দিমুক্তির সমস্যার সঙ্গে জঙ্গলমহলে মাওবাদী সংকটের সমাধান ক্ষমতাসীন হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে করে দেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, অন্য সমস্যাগুলির মতোই, জঙ্গলমহলের সমস্যা জটিলতর হয়েছে।
জঙ্গলমহল সুনির্দিষ্ট ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে, সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব নেতা-নেত্রীদের তথা রাজনৈতিক দলগুলিকে কী বিপাকে ফেলে দেয়। স্মরণ করা যেতে পারে, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ঘোষণা করেছিলেন যে ‘মাও-ফাও’ বলে কিছু নেই, মাওবাদীরা আসলে সি পি আই এম মুদ্রারই অপর পিঠ। আমরা অনেকেই এ কথা মেনে নিতে না পারায় তিনি রুষ্ট ছিলেন। আবার, নির্বাচনের প্রাক্কালে লালগড়ের জনসভায় তিনি মাওবাদীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েই যৌথবাহিনী প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি ও ‘কমরেড আজাদের হত্যা’র তদন্ত দাবি করেছিলেন। অথচ, ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি মাওবাদীদের বাদ দিয়ে জঙ্গলমহলের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেন, যেটা মাওবাদীরা তাঁদের বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস হিসাবেই গণ্য করেছিলেন। আর এখন, প্রকাশ্য জনসভায় মাওবাদীদের ‘সুপারি কিলার’, ‘খুনে’, ‘ডাকাত’ ইত্যাদি তকমা দিয়ে উন্মুক্ত মঞ্চে পায়চারি করতে করতে মুখোমুখি সংঘর্ষের চ্যালেঞ্জ রাখছেন। এ জিনিস মুখ্যমন্ত্রীকে মানায় না। সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হল, মমতাদেবীর গলায় এখন বুদ্ধদেবের কণ্ঠস্বর। দেখেশুনে মনে হচ্ছে যে, মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েই সামরিক সমাধানের পথে হাঁটার কথা ভাবছেন। এই সিদ্ধান্ত ফলদায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই ছত্তীসগঢ়ের তিন-চতুর্থাংশ এবং ঝাড়খণ্ডের অর্ধেক মাওবাদীরা দখল করতে পেরেছেন। মাঝ থেকে এই পর্যায়ে যৌথবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাওবাদীরা ঘর গুছিয়ে নিতে পেরেছেন,
যার ফলে এখন জঙ্গলমহল আরও বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন। |
|
গণতন্ত্র। জঙ্গলমহলে ভোট। মে, ২০১১। ছবি: দেবাশিস রায় |
অনেকেই ভাবেন যে, যৌথবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরবে। কিন্তু, ব্যাপারটা এত সরল নয়। আমি নিজে জনসাধারণকে যৌথ বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় রাখার পক্ষে নই। কারণ, ওই বন্দুকের শাসনে মানুষজন অশেষ লাঞ্ছনার শিকার হন। কিন্তু, যৌথবাহিনী প্রত্যাহারের অর্থ গণতন্ত্র নয়, কারণ সে ক্ষেত্রে মাওবাদীদের বন্দুকের শাসন অনিবার্য হয়ে পড়বে, ফলে জনতার দুর্গতিও অব্যাহত থাকবে।
এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী জনাকয়েক ‘মধ্যস্থতাকারী’র সাহায্যে সমঝোতার মাধ্যমে শান্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই উদ্যোগ ফলদায়ী হয়নি, হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না। প্রথমত, এ সব ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজন যাঁদের উপর মাওবাদীদের এবং মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা রয়েছে। এই মধ্যস্থতাকারীদের উপর কোনও পক্ষেরই সেই আস্থা নেই। মাওবাদী বা মুখ্যমন্ত্রীর উপর প্রভাব রাখার মতো ব্যক্তিত্ব বা কর্তৃত্ব এঁদের নেই। কিন্তু, তার থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হল এই সমঝোতা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন। এটা কোনও ট্রাপিজের খেলা নয়, উভয় পক্ষের ভারসাম্য রাখার প্রক্রিয়াও নয়। বরং, তা পক্ষনিরপেক্ষে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রশ্ন। আর, মাওবাদীদের কর্মকাণ্ড যে হেতু এখন ন’টি রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত, তাই শান্তি উদ্যোগ সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণীয়। একটি মাত্র রাজ্যে শান্তি উদ্যোগ সফল হওয়ার নয়; বস্তুত, সফল হলেও সেই রাজ্যকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল করে বাকি রাজ্যগুলিতে দৌরাত্ম্য বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
|
সন্ধি অসম্ভব |
আসলে, বোঝার কথা এটাই যে, মাওবাদীদের দাবি সমঝোতাযোগ্য নয়, সন্ধি প্রস্তাব এখানে অর্থহীন। যে কোনও রাজনৈতিক দলের কাছেই রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্ন কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। ক্ষমতা অর্জনের দু’টি পথ রয়েছে। এক, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। দুই, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। আমি মনে করি, সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল যতটা নৈতিক, হাতিয়ার ধরে ক্ষমতা দখল ততটাই নৈতিক। কিন্তু, এই দুইয়ের মাঝে সন্ধি প্রস্তাবের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি অর্জনের প্রয়াস অর্থহীন। আমাদের মধ্যস্থতাকারীরা এই সহজ সরল সত্যটি ভুলে বসে আছেন। সাময়িক শান্তি অর্জনে মুখ্যমন্ত্রীর ন্যূনতম সদিচ্ছা প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও তাঁরা তুলতে পারেননি।
আসলে মুখ্যমন্ত্রী এখন বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। বাঘের পিঠে সওয়ারিদের হয় বাঘকে মেরে ফেলতে হয়, অথবা বাঘের পেটে যেতে হয়। এখানে নিখাদ সামরিক অভিযান ফলদায়ী হবে না। আবার অন্য দিকে, মাওবাদীদের ‘প্যাকেজ’ দিয়ে তুষ্ট করা যাবে না, তাঁরা যা চাইছেন তা মোটেও ‘নেগোশিয়েবল’ নয়। সমস্যা এখানেই। আসলে লড়াইয়ের অন্তর্বস্তু হল, মাওবাদীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে জনবিচ্ছিন্ন করবে, না কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মাওবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন করবে। সে জন্যই এখানে যৌথ বাহিনীর ভূমিকা সীমিত।
তাই, জঙ্গলমহলের সমাধান হল:
এক, উন্নয়নের জন্য জনসাধারণের স্বয়ংশাসিত সংস্থাগুলির আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন, যা না হলে যতই বরাদ্দ বৃদ্ধি হোক, বর্ধিত বরাদ্দের গুড় পিঁপড়ে অর্থাৎ ফড়েরা খেয়ে যাবে।
দুই, উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও আইনের শাসন রক্ষার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ জারি থাকবে।
তিন, শান্তি প্রক্রিয়াও থাকবে।
কিন্তু, চার, সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে রাজনৈতিক সংগ্রামে। রাজনৈতিক সংগ্রামের অর্থ মাওবাদীদের গালাগাল দেওয়া নয়। মাওবাদীরা যত অপকর্মই করে থাকুন, তাঁদের একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শ ও রাজনীতি আছে। এই মতাদর্শ ও রাজনীতিক যথার্থতা দিয়েই তাঁদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তাই প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক প্রশ্নগুলি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই এই রাজনৈতিক সংগ্রামের অন্তর্বস্তু।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপরে মাইন হামলার জবাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে জোর দিলে কর্মিবাহিনীর প্রচারের মাধ্যমে এই অপকর্মের স্বরূপ উদঘাটন করে জনগণের মধ্যে মেরুকরণ ঘটানো উচিত ছিল। কিন্তু, প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার ফল হল এটাই যে, দলমতনির্বিশেষে জনসাধারণ পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে জনসাধারণের কমিটি গঠন করত বাধ্য হলেন। ফলে, বিস্ফোরণের অপকর্ম থেকে নজর সরে গিয়ে পুলিশি সন্ত্রাসই আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠল। পরে মাওবাদী বন্দুকবাজদের দলীয় আধিপত্য কায়েমের ফলে বহুত্ববাদী এই জনগণের কমিটি তার বহুত্ববাদী চরিত্রটি হারায়। কিন্তু সে তো পরের কথা। অস্বীকার করা যাবে না এই সত্য যে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিলে পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনগণের কমিটির জায়গায়
বরং বিস্ফোরণ-বিরোধী কমিটি গড়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল।
|
গণতন্ত্রের কী হবে? |
রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রশ্নে উচিত ছিল জনসাধারণের সামনে এবং মাওবাবীদর সামনে এই সত্য তুলে ধরা যে, বলশেভিক বা চিনা কমিউনিস্টদের হাতে রাইফেল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চিনে ক্ষমতা দখল করলেও আজকের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর এক সত্য সংখ্যাধিক মানুষের সমর্থন ছাড়া বন্দুকের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না। আপাদমস্তক অস্ত্রসজ্জিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে তা পারেনি। চূড়ান্ত ক্ষমতা নিয়েও সোভিয়েত ইউনিয়নে রেজিমেন্টেড দল তা পারেনি। ক্ষমতা দখলই কমিউনিস্টদের প্রকৃত লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হল সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা। মাও বলেছিলেন, ক্ষমতা দখল দশ হাজার লি দীর্ঘ পদযাত্রার প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। (‘লি’ হল দূরত্ব মাপার জন্য ব্যবহৃত চিনের পুরনো একক দুই লি’তে এক কিলোমিটার।) সংখ্যাধিক্য মানুষের সমর্থন ছাড়া সমাজতন্ত্র গঠন করা যায় না। গণতন্ত্র ছাড়া সমাজতন্ত্র হয় না। তাই, গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল আত্মঘাতী হতে বাধ্য।
রাজনৈতিক সংগ্রামের অপর বিষয় হল, ভারতেও লাল রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বিচার। ‘চিনে কি লাল ক্ষমতা টিকে থাকতে পারে’ শীর্ষক রচনায় মাও জে দং স্থানীয় অর্থনীতি, এলাকায় স্থানীয় আন্দোলনের ঐতিহ্য-সহ কয়েকটি শর্তের কথা বলেন। কিন্তু, রচনার সূচনাতেই চিনে শাসকদের মধ্যে যুদ্ধ থাকার বাস্তবটিকে চিনে লাল ক্ষমতা থাকার ঐতিহাসিক পরিস্থিতি হিসাবে চিহ্নিত করেন। ‘যুদ্ধ ও রণনীতি’ রচনায় মাও আরও বলেন যে, শাসকদের মধ্যে যুদ্ধ বেড়ে গেলে লাল ঘাঁটি এলাকা প্রসারিত হয় আর যুদ্ধ কমে গেলে ঘাঁটি এলাকা সংকুচিত হয়। ভারতের পরিস্থিতি হল, এখানে শাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, ভাঙন আছে, কিন্তু যুদ্ধ নেই। তাই ভারতে লাল ঘাঁটি এলাকা গঠনের পরিস্থিতি নেই। এই সত্যের মুখোমুখি জনসাধারণ ও মাওবাদীদের দাঁড়াতেই হবে। এই রাজনৈতিক সংগ্রামই মাওবাদীদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য করবে, অন্যথায় জনবিচ্ছিন্ন করবে। নির্মম সত্য হল, এই রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনার সক্ষমতা মমতাদেবী ও তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসের নেই, রেজিমেন্টেড দলগুলিরও নেই। গণতান্ত্রিক বামপন্থীদেরই এই দায়িত্ব নিতে হবে।
আর এই সব প্রশ্নে গুরুত্ব না দিয়ে মাওবাদীরা তাদের জল্লাদবৃত্তি অব্যাহত রাখলে সন্ত্রাস সৃষ্টি হবে ঠিকই, কিন্তু তা ধোপে টিকবে না। অনিবার্য ভাবে মানুষের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই সেই অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মাওবাদীদের হাতে নিহত মানুষ রাস্তায় কয়েক দিন পড়ে থাকলেও কেউ কাছে ঘেঁষত না। অথচ, লালমোহন টুডু বা বাবু বোসদের মতো মানুষদের হত্যায় সন্ত্রাস দিয়ে মানুষের মিছিলকে আটকানো যায়নি কয়েক হাজার মানুষ ভয়কে জয় করে মিছিলে শামিল ছিলেন। হত্যার যুক্তি হল, তাঁরা সন্ত্রাসের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এখানে যাঁরা অভিযোগকারী, তাঁরাই বিচারক, তাঁরাই ঘাতক। গণতন্ত্র এই জল্লাদবৃত্তিকে অনুমোদন করে না। মাওয়ের চিন্তাধারাও বৈরমূলক ও অবৈরমূলক দ্বন্দ্বের পার্থক্য করে এবং হত্যাকে দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ বলে গণ্য করে না।
আমার অভিজ্ঞতাও অভিন্ন। সি পি আই এম এল দলের বাংলা-বিহার-ওড়িশা সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক হিসাবে এই জঙ্গলমহলেই কুড়ি হাজার কৃষক নিয়ে আমরা ‘শ্রেণিশত্রু’ খতম অভিযান শুরু করি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এই কর্মসূচিতে ব্যাপক কৃষকের উদ্যোগ উন্মোচিত হবে এবং আমাদের বিশ হাজারি বাহিনী অবশ্যই বিশ লাখি বাহিনী হবে। দেড় বছর এই কর্মসূচি পালন করার ফলে আমাদের বাহিনী ২০০ জনের একটি ছোট দলে পরিণত হয়। অথচ, এই দেড় বছরে স্কোয়াডের হাতে নিহত হন ১২০ জন। গণতন্ত্র এই কর্মসূচি অনুমোদন না করার ফলে আমরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দল অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।
এখন মাওবাদীরা জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে, আধুনিক অস্ত্র আমদানি করে হয়তো আরও কিছু দিন টিকে থাকতে পারেন, কিন্তু শেষ বিচারে তাঁদেরও আমাদের দশাই হবে। ঘটনা হল, মাওবাদীদের লড়াই এক দিকে যেমন নকশাল আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, তেমনই ওই আন্দোলনের অপবিকৃতিও বটে। সেই সত্য জঙ্গলমহলে সাম্প্রতিক খুনখারাপিগুলি নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত করেছে। |
|
|
|
|
|