সম্পাদকীয় ২...
মৃত্যুর দায়
দার্জিলিং জেলার বিজনবাড়িতে ছোটা রঙ্গিত নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু হইতে পড়িয়া যাঁহারা হতাহত হইয়াছেন, তাঁহাদের আত্মীয়-বন্ধুরা সম্ভবত সকলেই এই অপঘাতের জন্য ভাগ্য বা নিয়তিকে দোষ দিতেছেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আনন্দোৎসব উপভোগ করিতে গিয়া হতাহত ওই মানুষগুলির দুরবস্থার জন্য দায়ী মূলত প্রশাসন ও তাহার দায়সারা মনোভাব। বিপর্যয় ঘটিবার পর সরকার ও প্রশাসন তাহার মোকাবিলায় দৃষ্টান্তমূলক তৎপরতা দেখাইতেছেন সত্য। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং আহতদের দেখিতে দার্জিলিঙ ছুটিয়া গিয়াছেন, যাহা রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার একটি বিরল নজির। হতাহতদের জন্য পত্রপাঠ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঘোষিত হইয়াছে এবং তাহা দ্রুত প্রাপকদের হাতে পৌঁছাইবার ব্যবস্থাও হইতেছে। সরকারি ব্যয়ে আহতদের সুচিকিৎসার দায়ও রাজ্য গ্রহণ করিয়াছে। কিন্তু বিপর্যয় মোকাবিলার চেয়েও বিপর্যয় রোধ করার আগাম তৎপরতা অধিকতর প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে সেটিই অবহেলিত।
যে-ঝুলন্ত সেতুটি ছিঁড়িয়া দুর্ঘটনা, সেটি নির্মিত হইয়াছিল ১৯৪২ সালে, অর্থাৎ ৬৯ বছর আগে। দড়ি ও কাঠের তৈরি সেতু এমনিতেই ঘন-ঘন মেরামত ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দাবি করে। তাহা যে হয় নাই, তাহার মূল্যই আজ চুকাইতে হইতেছে। ১৯৮৮ সালে নাকি সেতুটির শেষ বার ‘সংস্কার’ করা হইয়াছিল, তাহার পরও তো ২৩ বছর কাটিয়া গিয়াছে। এ দিন জেলা প্রশাসন কি ঘুমাইতেছিল? অবশ্য ঘুমানোই প্রায়শ এ রাজ্যের প্রশাসকদের বৈশিষ্ট্য। তাই রাজ্য জুড়িয়াই এমন মেরামতিহীন সেতু ছড়াইয়া আছে, জীবনের ঝুঁকি লইয়া জনসাধারণ যাহা নিত্য পারাপার করেন। পূর্ত দফতর তাকাইয়াও দেখে না। কাজ হইতেছে না কেন, জানিতে চাহিলে তহবিলের সমূহ অভাবের কৈফিয়ত দেয়। এ ভাবেই প্রশাসন চলিতে অভ্যস্ত। তাই ঘটা করিয়া মন্ত্রী ও জননেতাদের দিয়া সেতুর উদ্বোধন হইলেও সেগুলির নির্মাণ কদাচিৎ সমাপ্ত হয়, পুরানো সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের তো প্রশ্নই ওঠে না। বিজনবাড়ির ছোটা রঙ্গিত নদীর উপর সেতুটি এত দিনে ছিঁড়িয়া পড়িল কেমন করিয়া, প্রশ্ন তাহা নয়। প্রশ্ন হইল, এত কাল সেতুটি ছেঁড়ে নাই কোন জাদুবলে? আরও প্রশ্ন, এমন জরাজীর্ণ একটি সেতু দিয়া এত লোকের অবাধ চলাচলের প্রশ্রয় মিলিল কেমন করিয়া? কেন সেতুর উপর অবস্থিতিকারী জনতার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় নাই? ঘটনাস্থলে তো প্রচুর পুলিশ ছিল, তাহারা তবে কী করিতেছিল?
এখন শুনা যাইতেছে, সেতুটি একসঙ্গে জনা কুড়ি লোকের ভারবহন ও চলাচলের উপযুক্ত। জেলা-সমাহর্তাই সে কথা জানাইতেছেন। তাঁহারা যখন ইহা জানিতেন, তখন কঠোর ভাবে সেতুর উপর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করিলেন না কেন? কেন দুর্ঘটনার সময় দেড়শতাধিক মানুষ গাদাগাদি করিয়া সেতুর উপর চলিতেছিল? সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মেলা একসঙ্গে হওয়ায় জনসমাগম যে প্রচুর হইবে, জেলাশাসকের তাহা অজানা থাকার কথা নয়। এই অতিরিক্ত ভিড়ের চাপ যে একটি দুর্বল, প্রাচীন, জীর্ণ সেতুকে সহ্য করিতে হইবে, তাহাও কল্পনা করা উচিত ছিল। যদি প্রশাসন মনে করিত জনসাধারণ নিয়ন্ত্রণ মানিবে না, তবে এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়াও উচিত হয় নাই। কেননা জনতার নিরাপত্তার দায়ও তো শেষ বিচারে প্রশাসনেরই। প্রসঙ্গত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা লইয়াও প্রশ্ন ওঠা উচিত। তাঁহাদের আহ্বানেই হাজার-হাজার মানুষ মেলা ও অনুষ্ঠান দেখিতে সেতু পার হন। দলের স্বেচ্ছাসেবকদের কি উচিত ছিল না, সেতুর উপর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার যথাযথ বন্দোবস্ত করা? সেতুতে নাকি এমনকী মোটরবাইকও চালানো হইয়াছে। সংগঠকরা কী করিতেছিলেন? এতগুলি নিরীহ মানুষের মৃত্যুর দায় তাই উদাসীন প্রশাসনের মতোই অপরিণামদর্শী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বের উপরেও বর্তাইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.