সম্পাদকীয় ১...
পুণ্যের মাসুল
বিরোধী নেত্রী হিসাবে তিনি বামফ্রন্ট সরকারের নিকট যে দাবি করিতেন, মুখ্যমন্ত্রী হইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সিদ্ধান্তটি করিলেন। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলাশাসককে জানাইয়া দিয়াছেন, অতঃপর গঙ্গাসাগরে আর তীর্থকর আদায় করা হইবে না। বিরোধী নেত্রী হিসাবে তাঁহার দাবিটি ভ্রান্ত ছিল। শাসক হিসাবে তাঁহার সিদ্ধান্তটি ভুল। কেন তিনি তীর্থকর মকুব করার পক্ষপাতী, তাহা অনুমান কঠিন নহে। তিনি সাধারণ মানুষের ঘাড়ে আর্থিক বোঝা চাপাইবার বিরোধী। কিন্তু, গঙ্গাসাগরকে তীর্থযাত্রার উপযুক্ত রাখিতে টাকার প্রয়োজন। উপযুক্ত রাস্তা চাই, পানীয় জলের ব্যবস্থা চাই, নিকাশি ব্যবস্থা চাই, যথেষ্ট আলো চাই। তীর্থযাত্রীদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত রাখিতে হইবে। এবং, মেলা চলাকালীন যে বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল জমা হয়, তাহা সাফ করিতে হইবে। এই খরচ কে জোগাইবে? মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটি মানিলে এই প্রশ্নের একটিই উত্তর হয় এই টাকা রাজ্যের রাজকোষ হইতে আসিবে। স্মরণে রাখা ভাল, রাজকোষের টাকা জনগণের সম্পত্তি, সরকার তাহার অছিমাত্র। কাজেই, সেই টাকা যেমন ইচ্ছা খরচ করিবার অধিকার সরকারের নাই। গঙ্গাসাগরের পরিকাঠামো বজায় রাখিবার জন্য, পরিষেবার ব্যবস্থা করিবার জন্য যে টাকা দরকার, তাহা গঙ্গাসাগরযাত্রীদেরই দিতে হইবে। সেই টাকাই তীর্থকর। কেহ বলিতে পারেন, এমন অনেক মানুষ গঙ্গাসাগরে যান, যাঁহাদের এই কর দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নাই। মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁহাদের কথা ভাবিতে চাহেন, কোনও বাধা নাই। যাঁহারা প্রকৃতই দরিদ্র, তাঁহাদের কর ছাড় দেওয়া যাইতেই পারে। কিন্তু, তাহার জন্য তীর্থকর উঠাইয়া দেওয়ার প্রয়োজন নাই। দারিদ্রের প্রমাণ দিলে কর দিতে হইবে না, এই ব্যবস্থা করা কঠিন নহে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক জানাইয়াছেন, প্রতি বৎসর তীর্থকর বাবদ রাজকোষে ১২ লক্ষ টাকা জমা পড়ে। সামান্য টাকা। এই টাকায় গঙ্গাসাগরের পরিকাঠামো রক্ষা বা পরিষেবা দেওয়া, কোনওটিই সম্ভব নহে। এই রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করাই বিধেয়। তাহার জন্য তীর্থকরের পরিমাণ কিছু বাড়ানো যাইতে পারে। কিন্তু, রাজস্বের প্রধান সম্ভাব্য উৎসটি ভিন্ন। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য হয়। সরকার সেই বাণিজ্যের পরিমাণের উপর কর আরোপ করিতে পারে। তাহা অযৌক্তিক নহে। কারণ, এই করের টাকায় গঙ্গাসাগর অঞ্চলেরই উন্নয়ন হইবে। আর, তাহাতে স্থানীয় বাণিজ্যের লাভ। এই কর আদায়ের পরেও গঙ্গাসাগরের পরিকাঠামো রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টাকার সম্পূর্ণ সংস্থান হইবে না। বাকি টাকা আপাতত রাজকোষ হইতেই আসিবে। কিন্তু তাহা সাময়িক ব্যবস্থা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিতেই এই কথাটি এখন স্বীকৃত যে কোনও পরিষেবার সুবিধা যাঁহারা ভোগ করিবেন, তাহার মূল্যও তাঁহাদেরই দিতে হইবে। পশ্চিমবঙ্গে তাহার ব্যতিক্রম হইবার কোনও কারণ নাই। অর্থনীতির যুক্তির সহিত জনমোহনের যুদ্ধে প্রথমপক্ষকে সমর্থন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা প্রয়োজন, মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি জানাইয়াছেন, তিনি কর বসানোর বিরোধী। তাঁহার সদিচ্ছা লইয়া প্রশ্ন না তুলিয়াও বলা প্রয়োজন, কর আদায় করার উদ্দেশ্য মানুষকে সমস্যায় ফেলা নহে, মানুষের স্বার্থেই উন্নততর পরিষেবার ব্যবস্থা করা, ভবিষ্যতের কথা ভাবা। কাজেই, কর প্রসঙ্গে নূতন করিয়া ভাবা প্রয়োজন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.