সব্জির নাগাল পেতে ফড়ে দমন চান মন্ত্রী’ (৫-১০) শীর্ষক সংবাদের ও ‘সহজ সমাধান’ সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের (৬-১০) প্রেক্ষিতে এই প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিবেদনে একাধারে যেমন একটু আশ্বাস জেগেছে, অন্য দিকে বিস্মিতও হয়েছি। আশ্বাসের কারণ, রাজ্যের কৃষি ও কৃষি বিপণন মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, যে সব ‘ফড়েদের জন্য শাকসব্জির দাম বাড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে’। এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ এই নতুন সরকারের কাছে গভীর প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে কালোবাজারি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তার দিকে। মনে রাখা দরকার, স্বাধীনতার পর কেন্দ্রের বা রাজ্যের কোনও সরকার কালোবাজারিদের কেশাগ্রও স্পর্শ করেনি। হাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের মতো আইন থাকা সত্ত্বেও। যাই হোক, এ দিকে মন্ত্রিমহাশয়ের কিন্তু চেষ্টার কোনও খামতি নেই। কিছু দিন আগেই তিনি ব্যবসায়ীদের একটু কম লাভ করার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এ তো সুন্দরবনের নরখাদককে নিরামিষাশী হওয়ার জন্য অনুরোধের শামিল। এর ফল যা হওয়ার হয়েছে। আমরা সবাই তা জানি। দ্বিতীয়ত বিস্ময়ের কারণ, মন্ত্রিমহাশয় এত দিন পরে জানলেন, তাও কয়েকটা বাজার ঘোরার পর যে, যা স্বাধীনতার পর থেকে সবাই জানে। ফড়েদের জন্যই শাকসব্জির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ কিছু দিন আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে শাকসব্জির মূল্য বৃদ্ধির জন্য কেবল বন্যাকেই দায়ী করা হচ্ছিল। আবার বন্যা যে একেবারে দায়ী নয়, তা ঠিক নয়। বন্যার জন্য কিছু সব্জির খেত নষ্ট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি তো বন্যার আগে থেকেই হচ্ছিল। বন্যার জন্য যদি শাকসব্জির আকাল হয়ে থাকে তা হলে বেশি দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে কী করে? ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে এ বছর ভারতের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ২৩.৫ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে, যা স্বাধীনতার পর রেকর্ড। তা হলে এই আকাল কেন? আসলে মজুতদারিই যে এর জন্য মূলত দায়ী, তা বোঝার ইচ্ছা থাকলেই বোঝা যায়। আর এর পিছনে আছে ফড়ে, মুনাফাখোর ও কালোবাজারিরা।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এখন বাজারে বাজারে ঘুরছেন। হয়তো কোনও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম। তাঁর উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েই এই প্রতিবেদক বিধানসভার ‘জিরো আওয়ারে’ বলেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সদিচ্ছা থাকলেও রাজ্যের সমস্ত বাজারে ঘোরা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ফড়ে বা মিডলম্যানদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা। আর তার জন্য প্রয়োজন, চাষিদের কাছ থেকে সরকার নিজে জিনিস কিনবে এবং তা ন্যায্য মূল্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি করবে। এতে লাভ দু’দিকেই। প্রথমত, চাষি কিছু দাম অন্তত পাবে, যা সাধারণত পায় না। এবং ফসল তোলার পরেই জলের দামে অভাবে পড়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয় ওই ফড়েদের মাধ্যমেই। আর তার ঋ
ণের দায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষও ফড়েমুক্ত বাজার থেকে ন্যায্য মূল্যে জিনিস কিনতে পারবে যদি সরকার হয় বিক্রেতা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও উদ্যোগ দেখা গেছে কি? এটা যদি না-হয়, তা হলে হাজার বাজারে বাজারে ঘুরলেও জিনিসপত্রের দাম কমানো যাবে না। তাতে হয়তো সংবাদমাধ্যমে খবর হবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে না। এর সঙ্গে প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের প্রয়োগ। অবশ্য যদি কেন্দ্র বা কোনও রাজ্য সরকারের কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের নিয়ন্ত্রণ করার সদিচ্ছা থাকে। যদিও সম্পাদকীয়টিতে এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিপণনের আয়োজনের সুপারিশ করে বলা হয়েছে। তার মধ্য দিয়েই একমাত্র কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। আসলে এর ফলে গোটা খুচরো ব্যবসাটি বিদেশি কর্পোরেটদের করতলগত হবে। কৃষকরা বাজারে এসে তাদের ফসল বিক্রির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবে। এর মধ্য দিয়ে কেমন করে কৃষকদের লাভ হবে তা বোধগম্য নয়।
তরুণকান্তি নস্কর। বিধায়ক, পশ্চিমবঙ্গ
|
এ দেশে কি যোগ্য শিক্ষক নেই |
আনন্দবাজার পত্রিকায় (৯-১০) প্রকাশিত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োগ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সূত্রে কিছু কথা মনে হল। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি থেকে প্রেসিডেন্সিতে পড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। মেন্টর গ্রুপ অত্যধিক উৎসাহের সঙ্গে তা বিজ্ঞাপিতও করে চলেছেন। দেখেশুনে মনে হতে বাধ্য, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়াশোনা বা গবেষণা করছেন, তাঁরাই একমাত্র কৃতী। তাঁরাই একমাত্র প্রেসিডেন্সিতে পড়ানোর যোগ্য। ভারতে এমন কোনও ছাত্রছাত্রী-গবেষক নেই যাঁরা পড়াতে পারেন। কেননা, ভারতীয় ডিগ্রিধারী কৃতীদের নিয়ে উচ্ছ্বাস তো দূরে থাক, তাঁদের সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র উল্লেখও চোখে পড়ছে না কোথাও। অথচ এটা ধরে নেওয়া নিশ্চয়ই ভুল হবে না যে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদে এমন অনেক ছাত্রছাত্রী আছেন, যাঁরা কোনও অংশে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের থেকে কম নন।
শাশ্বতী দেব। কলকাতা-৯১
|