|
|
|
|
জেলেই দীপাবলি কাটবে কানিমোঝির |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আলোর উৎসব দীপাবলি জেলের অন্ধকারেই কাটবে করুণানিধির কন্যা কানিমোঝির।
শনিবার দিল্লিতে এসে সস্ত্রীক করুণানিধি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ তুলেছিল, আসলে কন্যার জামিনের জন্য দরবার করতে এসেছেন ডিএমকে-সুপ্রিমো। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জ গঠন হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে জামিনের আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিলেন কানিমোঝি। এই নিয়ে তৃতীয় বার। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, এবার
আর সিবিআই সেই আবেদনের বিরোধিতা করেনি। কিন্তু বিধি বাম। আদালত জানিয়েছে, আগামী ৩ নভেম্বর রায় ঘোষণা হবে। তত দিন পর্যন্ত তাই তিহাড় জেলেই কাটাতে হবে ডিএমকে-সাংসদ কানিমোঝিকে।
দু’দিন আগে টু-জি মামলায় কানিমোঝি সহ ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। তার পরে অভিযুক্তরা জামিনের নতুন আবেদন করার সুযোগ পান। আজ সিবিআইয়ের কৌঁসুলি জানিয়েছেন, কানিমোঝিকে জামিন দেওয়া হলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কারণ তাঁকে জেরা করার কাজ শেষ কলাইনার টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শরদ কুমার, কর্পোরেট কর্তা আসিফ বালওয়া, রাজীব অগ্রবাল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক করিম মোরানির জামিন নিয়েও আপত্তি জানায়নি সিবিআই। কিন্তু, সোয়ান টেলিকমের প্রোমোটার শাহিদ বালওয়া এবং আর কে চান্দোলিয়ার জামিন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সিবিআই।
কানিমোঝির জামিনে সিবিআইয়ের আপত্তি না জানানোর পিছনে মনমোহন-সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে বলেই মনে করছে বিরোধী দলগুলি। কারণ তেলেঙ্গানা থেকে শুরু করে মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ে কংগ্রেস যে ভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে, তাতে এখন শরিকদের প্রয়োজন। এক দিকে তিস্তা চুক্তি থেকে শুরু করে রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্য নিয়ে তৃণমূল-নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক এখনও অম্লমধুর। আরেক শরিক এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ার প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন। আবার কানিমোঝি গত মে মাস থেকে জেলবন্দি হয়ে থাকায় ডিএমকে-নেতৃত্বও চটে রয়েছেন। সম্পর্ক এতটাই খারাপ যে সম্প্রতি তামিলনাড়ুর পুর-নির্বাচনে ডিএমকে ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট তৈরিই সম্ভব হয়নি। আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। একগুচ্ছ স্পর্শকাতর বিল পাশ করাতে হবে করাতে হবে সরকারকে। তাই সব শরিককেই হাতে রাখতে চাইছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাই ডিএমকে-ও চাপ বাড়াতে চাইছে। ৮৭ বছরের করুণানিধি ও তাঁর স্ত্রী রজোতি আম্মাল শনিবার থেকেই দিল্লিতে রয়েছেন। আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তাঁরা। কানিমোঝির স্বামী জি অরবিন্দন, পুত্র আদিত্যও দিল্লিতে। আজ আদালতে কানিমোঝির আইনজীবী যুক্তি দেন, চার্জ গঠনের পরে কানিমোঝি ও শরদ কুমার জামিনের আবেদন করতে পারবেন বলে জুন মাসে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁকে এখন জামিনে মুক্তি দেওয়া উচিত। কানিমোঝি যাতে বিচার এড়িয়ে পালিয়ে না যান সে জন্য আদালত শর্ত আরোপ করতে পারে। কানিমোঝি-সহ চার অভিযুক্তের জামিন নিয়ে ৩ নভেম্বর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষ সিবিআই বিচারক ও পি সাইনি। যদিও মনে করা হচ্ছে, কানিমোঝির জামিনে মুক্তি এখন সময়ের অপেক্ষা। প্রধানমন্ত্রী-সনিয়ার কাছে করুণানিধির দরবারের পরেই রাজনৈতিক চাপে কানিমোঝিকে মুক্তি দেওয়া হল, সাধারণ মানুষের কাছে এমন বার্তা যাতে না যায়, তার জন্যই আজ জামিন নিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। কংগ্রেস অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, সনিয়ার সঙ্গে করুণানিধির বৈঠকের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। টু-জি মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে অভিযুক্ত হিসেবে গণ্য করার আবেদন জানিয়েছিলেন জনতা পার্টির নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। স্বামীর দাবি, টু-জি স্পেকট্রামের দাম স্থির করার প্রক্রিয়ায় প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমও যুক্ত। স্বামীর আবেদন নিয়ে শুনানি ৮ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে সিবিআই আদালত। টু-জি মামলায় রিলায়্যান্স টেলিকমের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও জালিয়াতির চার্জ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে সংস্থা। রিলায়্যান্স টেলিকমের বক্তব্য, এই অভিযোগগুলির সপক্ষে কোনও প্রমাণ সরকার পক্ষের হাতে নেই। |
|
|
|
|
|