|
|
|
|
‘রাজ্যের তথ্য বিভ্রান্তকর’ |
অর্থমন্ত্রীদের কমিটিতে আমন্ত্রিত ‘উপদেষ্টা’ অসীম, ‘অনুমতি’ দলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিতে উপদেষ্টার ভূমিকায় আমন্ত্রিত হয়েছেন অসীম দাশগুপ্ত। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অসীমবাবুকে ওই ভূমিকা পালনে ‘অনুমতি’ দিয়েছে সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন অসীমবাবু ওই ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন পরপর পাঁচ বার। অর্থমন্ত্রী না-থাকা সত্ত্বেও কমিটির উপদেষ্টা ভূমিকায় তাঁকে আমন্ত্রণের ঘটনা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের কমিটি কাজ করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কংগ্রেসের প্রণব মুখোপাধ্যায়, যাঁর দল দিল্লি এবং কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট-সরকার চালাচ্ছে। ওই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির চেয়ারম্যান বর্তমানে বিহারের অর্থমন্ত্রী, বিজেপি-র সুশীল মোদী। তিনিই অসীমবাবুকে অনুরোধ করেন, তাঁর অভিজ্ঞতার নিরিখে উপদেষ্টার ভূমিকায় কমিটিকে পরামর্শ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কংগ্রেসের, তাঁদের জোট রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে, কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি-র এই সমীকরণের প্রেক্ষিতেই সিপিএমের অসীমবাবুকে পরামর্শদাতা হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা। কমিটি সূত্রে অবশ্য বরাবরই বলা হয়েছে, তাদের কাজের সঙ্গে সরাসরি ‘রাজনীতি’র সম্পর্ক নেই।
দলের ‘অনুমতি’ পাওয়ার পরে আগামী নভেম্বরে কমিটির একটি বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কথা অসীমবাবুর। তাঁর কথায়, “আমি ওঁদের বলেছি, আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও বৈঠকে আমাকে না-ডাকাই ভাল। আর এই কাজের জন্য আমি কোনও ভাতা বা অন্য কোনও সুযোগ-সুবিধা নিতে চাই না।” পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবির প্রেক্ষিতে অন্য রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছে, সেই ব্যাপারে ওই কমিটির কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়ার আগে মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলে অসীমবাবু জানিয়েছেন।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের অর্থনীতির হাল সম্পর্কে যে সব তথ্য দিচ্ছে, তার বেশ কিছু অংশ ‘বিভ্রান্তিকর ও অসম্পূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মমতার সরকারের বক্তব্য খণ্ডন করার জন্য মমতার আমলেই বিধানসভার বাজেট পুস্তিকায় রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করেছেন অসীমবাবু। আলিমুদ্দিনে সোমবার তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছে। পাওয়া গেলে ভাল। সাহায্য দেওয়া সম্ভব কি না, কেন্দ্রই ঠিক করবে। তবে বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের জন্য এমন সাহায্য কখনও কেন্দ্রের কাছ থেকে পায়নি। তা ছাড়া, একটি রাজ্যকে বিশেষ সাহায্য দিলে অন্য রাজ্যও দাবি করতে পারে বলা হচ্ছে। এই রাজ্য যদি তাদের প্রাপ্য কয়লার রয়্যালটি বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা চাইত, তা হলে অন্য রাজ্যের এই দাবির কথাই উঠত না। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতার যুক্তি, রাজ্য সরকারের এখন ১ টাকা আয় হলে তার মধ্যে ৯৪ পয়সাই (অর্থাৎ ৯৪%) বেতন, অবসরকালীন ভাতা এবং ঋণের সুদ মেটানোর কাজে খরচ হয়ে যায়। এই তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে দেখাতে চেয়ে অসীমবাবু এ দিন বলেছেন, “বর্তমান রাজ্য সরকার বিধানসভায় বাজেটের যে বই দিয়েছে, তার ৯ নম্বর পুুস্তিকায় বলা হয়েছে, এই বছরে রাজ্যের মোট নিজস্ব আয়ের ৬৩% খরচ হবে বেতন, অবসরকালীন ভাতা এবং সুদের জন্য। তার মানে ৩৭% অর্থ রাজ্যের হাতে থাকবে পরিকল্পনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করার জন্য।” একই ভাবে মমতা যে বলছেন, তাঁর সরকারের ঘাড়ে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা চেপেছে ক্ষমতায় আসার সময়েই, সেই তথ্যও ‘অসম্পূর্ণ’ বলে বোঝাতে চেয়েছেন অসীমবাবু। তাঁর বক্তব্য, “স্বল্প সঞ্চয় খাতেই ঋণ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণটি কিন্তু রাজ্যের ঘাড়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে! অথচ দায়ী হতে হয়েছে রাজ্যকে।” অসীমবাবু আরও জানান, রাজ্য কোষাগারের ভার লাঘব করতে সরকারি কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে সম্পর্কিত মহার্ঘ ভাতার বকেয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকার তিনটি কিস্তির ব্যবস্থা করে। দু’টি কিস্তি তারাই দিয়ে গিয়েছে। বাকি কিস্তি কবে দেওয়া যাবে, রাজ্য সরকারই ঠিক করবে।
এরই পাশাপাশি অসীমবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের বৃদ্ধির হারের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা বর্তমান রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। অর্থাৎ আয় বাড়ানোর পথ খুঁজতে হবে। এ বার রাজ্য সরকার বিধানসভায় ব্যয়বরাদ্দ পেশের সময় বলেছিল, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির হার ৩০% করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এখনও পর্যন্ত তা ১৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বামফ্রন্ট আমলে গত বছর এই সময় পর্যন্ত ওই হার ২৯% বৃদ্ধি পেয়েছিল। |
|
|
 |
|
|