দক্ষিণ দলের শাসনে থাকা এক মাত্র রাজ্য কর্নাটকে ‘দুর্নীতি-বিরোধী’ রথ নিয়ে আগামি রবিবার ঢুকছেন বটে লালকৃষ্ণ আডবাণী, কিন্তু সেখানে তাঁর অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপি নেতৃত্ব।
সেই সংশয় আজ আরও বাড়িয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার জামিন না পাওয়া। এমনিতেই জমি কেলেঙ্কারিতে ইয়েদুরাপ্পার গ্রেফতারি নিয়ে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো নতুন করে যোগ হয়েছে রাজ্য বিজেপি বনাম সঙ্ঘ নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই অবস্থায় রবিবার বেঙ্গালুরুতে আডবাণী কী বলবেন, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে দলের মধ্যেই।
দুর্নীতির অভিযোগে ইয়েদুরাপ্পা জেলে যাওয়ার পরেই দলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী চাইছিল, আডবাণীর বেঙ্গালুরু সফর রদ করতে। আডবাণীর রথের ‘সারথি’ অনন্ত কুমারও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছিলেন। তার মধ্যেই কর্নাটকের আরএসএস নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবোলে প্রকাশ্যেই ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন। এই পরিস্থিতিতে আডবাণীর রথের বেঙ্গালুরু-যাত্রা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা অনুগামীরা দলকে জানান যে, আডবাণী বেঙ্গালুরু না গেলে এই বার্তাই যাবে যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে! বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা ভালই জানেন, শুধু রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশ নয়, সেখানে সঙ্ঘের বড় অংশই এখনও ইয়েদুরাপ্পার নিয়ন্ত্রণে। ফলে তাঁকে চটালে সমস্যা হবে। এর মধ্যেই নাগপুরে আডবাণীর গলায় সমালোচনার সুর শুনে ক্ষুব্ধ হন ইয়েদুরাপ্পা। আর তাকে কাজে লাগিয়ে আডবাণীর বেঙ্গালুরু সফর বাতিল করতে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে ইয়েদুরাপ্পা-বিরোধী গোষ্ঠী। |
পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে আরএসএস। সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, এমনিতেই কংগ্রেস কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে আডবাণীর রথযাত্রাকে কটাক্ষ করছে। দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা বলছেন, আডবাণীর রথ কর্নাটক থেকেই শুরু করা উচিত! আডবাণীও বিভিন্ন সভায় নিজের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। এই অবস্থায় আডবাণীর রথ বেঙ্গালুরু না গেলে জাতীয় স্তরে এই বার্তা যাবে যে, অস্বস্তি এড়াতেই বেঙ্গালুরু গেলেন না আডবাণী। তাই স্থির হয়, পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই আডবাণীর রথ যাবে বেঙ্গালুরু। ইয়েদুরাপ্পাকেও বোঝানো হয়, যে হেতু এই রথ জাতীয় স্তরে মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তাই রাজ্য রাজনীতিকে এর মধ্যে সামিল করা অর্থহীন। তার পরেই গত কাল রায়পুরে আডবাণী বলেন, “আমি কর্নাটক যাব। বেঙ্গালুরুও যাব।”
কিন্তু বিজেপি তথা আডবাণীর কাছে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, বেঙ্গালুরুতে গিয়ে কী অবস্থান নেওয়া হবে। ইয়েদুরাপ্পা-বিরোধীরা চান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করে দুর্নীতি-বিরোধী বার্তা দিন আডবাণী। কিন্তু আডবাণী বিলক্ষণ জানেন, তিনি তা করলে ফের চটবেন এখনও ‘ক্ষমতাধর’ ইয়েদুরাপ্পা। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছাড়লেও এখনও দলে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ইয়েদুরাপ্পার। তিনি ক্ষুব্ধ হলে, অনুগামীদের সমর্থন নিয়ে সরকার ফেলেও দিতে পারেন। দক্ষিণে দখল করা
প্রথম রাজ্যের শাসনভার এ ভাবে হাতছাড়া করতে
নারাজ বিজেপি। দলের নেতারা তাই আডবাণীকে পরামর্শ দিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বললেও ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে বেশি মন্তব্য করার দরকার নেই। দু’দিক সামলে মানে মানে সফর উতরে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আডবাণী কি এই নির্দেশ পুরোপুরি মানবেন? এখন সংশয় তা নিয়েও!
|
জামিন পেলেন না ইয়েদুরাপ্পা
সংবাদসংস্থা • বেঙ্গালুরু |
কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে এ বছরের দীপাবলি জেলেই কাটাতে হচ্ছে। কর্নাটক হাইকোর্ট আজ ইয়েদুরাপ্পার জামিনের আবেদনের শুনানি ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতুবি করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ৫টি দুর্নীতি মামলার ২টির জন্য আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। সেই আবেদন আজ খারিজ করে দেন বিচারপতি। শুক্রবার ফের মামলার শুনানি হবে। |