আপনি ভাগ্যবান। ‘লাকি ড্র’-এ কয়েক লক্ষ টাকা জিতেছেন! টাকা কোথায় পৌঁছে দিতে হবে?
বড় অফিসার ফোনে আছেন। চৌকির হাল-চাল কী? তুরন্ত জবাব চাই।
এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে গূঢ় ফৌজি-তথ্য। সেনা-সূত্রের খবর, আপাত-নিরামিষ এমন নানা ফোনেই তামাম সেনা-ইউনিটের ঠিকুজি-কুষ্ঠি বার করে নিচ্ছে বিদেশি গুপ্তচরেরা! ভারতীয় সেনার গতিবিধির উপরে গোয়েন্দাগিরির এ হেন নয়া ছকে কর্তারা তটস্থ।
অতএব, ‘অচেনা ফোন হইতে সাবধান!’ |
দেশের স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকায় কতর্ব্যরত জওয়ান বা আধিকারিকদের আপাতত এই আপ্তবাক্যটি বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, বিভিন্ন ফৌজি-ব্যারাকের দেওয়ালে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি সেঁটে অজানা ‘ফোন-শত্রু’ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করা হচ্ছে সেনা-জওয়ানদের। সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, কর্মী-অফিসারদের ব্যক্তিগত মোবাইল কিংবা সেনা-ব্যারাকের ল্যান্ডলাইনে অজানা নম্বর থেকে আসা কলগুলোই সবচেয়ে বিপজ্জনক। কখনও পদস্থ অফিসারের ভেক ধরে জওয়ানদের এটা-সেটা প্রশ্ন করা হচ্ছে। কখনও মোবাইলে লাকি ড্র জেতার টোপ দিয়ে জওয়ানদের মুখ থেকে সুকৌশলে জেনে নেওয়া হচ্ছে পুরো ইউনিটের হাল-হকিকত। ‘পুরস্কার’ পৌঁছানোর জন্য তাঁরা হয়তো শিবিরের ঠিকানাই জানিয়ে দিচ্ছেন!
এবং সেনা-সূত্রের খবর: মূলত জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বা গুজরাতের কচ্ছে পাক সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলেই ফোন-ফাঁদ পাতছে বিদেশিরা। জম্মুতে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফি সপ্তাহে এমন প্রায় দশ-বারোটা সন্দেহজনক ফোন আসছে। যেগুলোর উৎস পাকিস্তান, সৌদি আরব, বাংলাদেশ বা নেপাল। তাঁর কথায়, “জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার লাগোয়া কিছু জায়গায় কখনও কখনও ভারতীয় মোবাইল পরিষেবা সংস্থার বদলে পাকিস্তানের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। ওখানে তো মোবাইল অন রাখাও বিপদ! কেননা প্রযুক্তির সাহায্যে মোবাইলে সেভ থাকা নম্বর, তথ্য ইত্যাদি কপি করে নিতে পারে বিদেশি চরেরা। এমনকী, সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচারিত গোপন ‘টেক্সট মেসেজ’ও!”
সুতরাং ওই সব তল্লাটে অফিসার- জওয়ানদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেই বারণ করা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে সেনার নিজস্ব স্যাটেলাইট ফোন বা অন্যান্য যোগাযোগ-ব্যবস্থায়। তা ছাড়া সেনাছাউনির বোর্ডে লাগানো সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিতে বিপদ এড়ানোর কৌশলও বাতলানো হচ্ছে।
কী সেই কৌশল? জওয়ানদের বলা হচ্ছে, ‘শত্রু এজেন্টরা নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি থেকে ফোন করতে পারে। কথা বলার আগে মোবাইলের পর্দায় ইনকামিং কলের নম্বর দেখে নেওয়া উচিত। পড়শি দেশের অচেনা নম্বর থেকে উটকো কল এলে কথা না-বলাই ভাল।’ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও নেপালের আইএসডি কোড উল্লেখ করে জওয়ানদের বলা হচ্ছে, ভিনদেশ থেকে অচেনা নম্বরের ফোন এলেই ইউনিটের কম্যান্ডিং অফিসারদের জানাতে। মোবাইল বা সিমকার্ড হারালে পুলিশে এফআইআর করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।এই সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবেই নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া রজৌরি-আখনুর-পুঞ্চে ভারতীয় সেনা-শিবিরের অধিকাংশ ল্যান্ডলাইন সেটে বসেছে সিএলআই। রিসিভার তুললে এখন ডায়াল-টোনের বদলে শোনা যাচ্ছে মহিলা-কণ্ঠে সাবধানবাণীও ‘আপনার কাছে শত্রুদেশের এজেন্টের ফোন আসতে পারে। তেমন হলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত খবর দিন।’ |